ঐশ্বর্যে মোড়া মেয়ের জীবন, মা থাকেন জরাজীর্ণ বাড়িতে, অর্পিতার কথা শুনেই বললেন ‘দু-দণ্ড শান্তি চাই’

ঐশ্বর্যে মোড়া মেয়ের জীবন, মা থাকেন জরাজীর্ণ বাড়িতে, অর্পিতার কথা শুনেই বললেন ‘দু-দণ্ড শান্তি চাই’

কলকাতা:  প্রভূত টাকা, দামি গাড়ি, প্রচুর গহনা আর অভিজাত আবাসনে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট৷ এক কথায় ঐশ্বর্যে মোড়া রাজকীয় জীবন! বৈভবের শিখড় ছুঁয়েছিলেন তিনি। তাঁর সম্পত্তির হিসেব মেলাতে গিয়ে মাথা ঘুরে গিয়েছে দুঁদে গোয়েন্দাদেরও। তাঁর জীবনের প্রতি পাতা যেন রহস্যে মোড়া৷ পরতে পরতে চাঞ্চল্য৷ কী ভাবে সাধারণ মডেল থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হলেন অর্পিত মুখোপাধ্যায়? তাঁর সম্পত্তির খতিয়ান দেখে হতবাক রাজ্যবাসী। 

আরও পড়ুন- রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাতে বিমান, পার্থকাণ্ডের আবহে জল্পনা

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত ‘পার্থ ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা যখন ঝা চকচকে বিলাসবহুল জীবন কাটাতে ব্যস্ত, তখন তাঁর মা’য়ের দিন কাটছিল শহরতলির এক জরাজীর্ণ বাড়িতে৷ মেয়ে অগাধ সম্পত্তির মালিক৷ মা আজও সেই সাদামাটা৷ এমনকী মেয়ের এই সকল কীর্তির কথা ঘুণাক্ষরেও আঁচ করতে পারেননি মিনতি মুখোপাধ্যায়। অর্পিতার বাবা ছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী৷ মোটামুটি সচ্ছ্বল পরিবার৷ মা মিনতিদেবী গৃহবধূ। অর্পিতারা দুই বোন। দিদি বিবাহিত৷ কলকাতাতেই পড়াশোনা অর্পিতার। কলেজে পড়াকালীন শুরু করেন মডেলিং।  তার অভিনয় জগত ঘুরে কখন যেন তিনি হয়ে ওঠে ‘পার্থ ঘনিষ্ঠ’৷

টালিগঞ্জের অভিজাত আবাসন ডায়মন্ড সিটিতে প্রায় আড়াই হাজার স্কোয়্যার ফিটের তিন কামরার সুবিশাল ফ্ল্যাট। একটা নয়, দু’দুটি ফ্ল্যাট। বর্তমান বাজার দরে যার আনুমানিক মূল্য ২ কোটির বেশি৷ এই বিলাস বহুল ফ্ল্যটের পাশাপাশি শহরতলীতেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে তাঁর সম্পত্তি। শুধুমাত্র বেলঘরিয়াতেই রয়েছে দুটি ফ্ল্যাট। অথচ কী ভাবে দিন কাটে অর্পিতার মায়ের, সেটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না৷ 

বেলঘড়িয়ায় অর্পিতার পৈত্রিক বাড়ির প্রতিটি কোণায় দারিদ্রের ছাপ। শ্যাওলা ধরা উঠান। দোতলার ঘরে উঠে গিয়েছে লোহার সিঁড়ি। একটি তক্তাপোশের উপর জড়ো করে রাখা আনাজপত্র। নিতান্তই মধ্যবিত্ত জীবন৷ স্বামীর পেনশনের টাকাতেই সংসাদ চালান মিনতি দেবী। অর্পিতার প্রসঙ্গ উঠে তিনি বলেন, ‘‘আমি আমার স্বামীর পৈত্রিক ভিটেয় থাকি। মাঝে মধ্যে বাপের বাড়ি বা ভাই-বোনের বাড়ি ঘুরতে যাই। মাঝেসাজে মেয়ে এখানে আসত বটে। তবে এই খবর শুনে আমি হতবাক। আমি একটা পুরনো বাড়িতে থাকি। কে বাইরে কী করছে না করছে আমি বলতে পারব না।’

অর্পিতার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে এই বাড়িতেই৷ এখানেই বাবা, মা আর দিদির সঙ্গে থাকতেন তিনি৷ কলেজে পড়তে পড়তেই মডেলিং শুরু৷ তার পর সিনেমায় সুযোগ৷ মিনতিদেবীর ধারণা, তাঁর মেয়ে কোনও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত৷ তবে কী ভাবে এই বিপুল সম্পত্তির মালিক হলেন অর্পিতা, তা তাঁর জানা নেই৷ মিনতীদেবীর কথায়, ‘মডেলিং করত, সিরিয়াল-সিনেমা, প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিল জানি। আর কী করে জানি না।’

গত শুক্রবার অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে হানা দিয়ে নগদ প্রায় ২২ কোটি টাকা উদ্ধার করে ইডি৷ সেই সঙ্গে  উদ্ধার হয় প্রচুর সোনা-দানা, বিদেশি মুদ্র ও ২০টি মোবাইল ফোন৷ অথচ মাকে কোনও দিন একটা টাকাও দেননি অর্পিতা৷ মেয়ের জন্য কী প্রাণ কাঁদছে না তাঁর? মিনতি দেবী স্পষ্ট বলেন, ‘‘ও অপরাধী হলে শাস্তি পাক’’৷ বারবার মেয়ের কথা শুনতে শুনতে তিনি ক্লান্ত৷ তাই হয়তো বলে উঠলেন, ‘‘দু’দন্ড শান্তি চাই৷’’