নিজস্ব প্রতিনিধি: হকার রাজ এবং কলকাতার ফুটপাত। হকারদের দৌড়াতে ফুটপাত দিয়ে মানুষের হাঁটাই দায়। সাধারণ মানুষ অসুবিধার কথা বলতে গেলে বহু সময় হকারদের কাছ থেকে ধমক খেতে হয় তাঁদের। ফুটপাত তুমি কার? এই প্রশ্ন বহুবার তুলেছে শহরবাসী। কারণ ফুটপাতের সিংহভাগ বহুদিন ধরেই দখল করে নিয়েছেন হকাররা। তাঁরা সেখানে চুটিয়ে ব্যবসা করছেন। তাই বহু জায়গায় ফুটপাত দিয়ে মানুষ হাঁটাচলা করতে পারেন না। বাধ্য হয়ে তাঁরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হন। এর ফলে রাস্তায় যানবাহনের গতি কমছে। সেই সঙ্গে ঘটছে দুর্ঘটনাও। বিভিন্ন সময় রাজ্য প্রশাসন উদ্যোগ নিলেও কলকাতা থেকে হকার-রাজ বন্ধ করা যায়নি। তবে কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম যেভাবে হকারদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে চলেছেন, তাকে সাধুবাদ জানাচ্ছে শহরবাসী। আর সেটা করতে গিয়ে কলকাতা পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধে কয়েক মাস আগে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছিলেন মেয়র। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন পুলিশের একাংশের মদতেই হকারদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। মেয়রের এই বক্তব্যে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ কলকাতা পুলিশ। যদিও এ বিষয়ে তারা নিশ্চুপ রয়েছে। কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছে তারা। পুরো বিষয়টি নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।
কলকাতা নাগরিকরা ভাল করেই জানেন যে শহরের ফুটপাতগুলির দখলদারি নিয়েছেন হকাররা। এর ফলে ফুটপাত দিয়ে হাঁটাচলাই দায় সাধারণ মানুষের। আবার হকার কবলিত এলাকার বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের অভিযোগ বাড়ি থেকে রাস্তায় বেরোনোর জায়গা পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। কালীঘাট, হাতিবাগান, রাসবিহারী, গড়িয়াহাট, বালিগঞ্জ, শ্যামবাজার, ধর্মতলা, খিদিরপুর, সব জায়গাতেই ছবিটা কম বেশি এক। এর নেপথ্যে কাজ করছে পুলিশ প্রশাসন। এমনটাই অভিযোগ মেয়রের। তাই তিনি সরাসরি পুলিশ প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলেছেন। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন, ‘এই বিষয়ে বিনীত গোয়েলকে চিঠি দিয়েছে। বলেছি ব্যবস্থা নিতে। আপনার পুলিশ ও হকার ইউনিয়নগুলি টাকা নিয়ে হকারদের বসাচ্ছে। অনিয়ন্ত্রিতভাবে রাস্তা দখল করে হকারা বসে যাচ্ছে। থানার মদতে যত্রতত্র হকাররা বসছে। পিচ রাস্তায় হকারদের বসা যাবে না। এভাবে প্লাস্টিক ব্যবহার করার জন্য একদিকে যেমন দূষণ হচ্ছে, তেমনই একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শীতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেশি ঘটে।’ এই অবস্থায় কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করার কথা বললেও বাস্তবে ছবিটা বদলায়নি বলেই অভিযোগ। ফুটপাতগুলির যে অবস্থা ছিল তার বড় কোনও পরিবর্তন হয়নি। ফিরহাদ যখন এই মন্তব্য করেছিলেন তারপর দেখা যায় হকাররা কিছুটা হলেও ফুটপাত ছেড়ে রাখছেন মানুষের চলাচলের জন্য। কিন্তু তার মাসখানেক পরেই অধিকাংশ ফুটপাথ আগের জায়গায় ফিরে গিয়েছে।
তবে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে মেয়র ফিরহাদ হাকিম রীতিমতো মৌচাকে ঢিল মেরেছেন। কারণ কলকাতা পুলিশের একাংশের মদতে শহরের ফুটপাত রাজনৈতিক নেতারা লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছে হকারদের কাছে। সেই জায়গায় ব্যবসা করে রাতারাতি ফুলেফেঁপে উঠছেন হকাররা। আর তার মাশুল দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বহুবার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও এর কোনও সমাধান হয়নি। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে সমস্যাটি নিয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন খোদ মেয়র। এমনকী কলকাতা পুলিশকেও নিশানা করতে ছাড়েননি তিনি। এরপর সবাই ভেবেছিলেন দ্রুত পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। কিন্তু বাস্তবে সেটা দেখা যাচ্ছে না। নতুন বছরে মেয়র বিষয়টি নিয়ে নতুন করে উদ্যোগ নেন কিনা এখন সেটাই দেখার।