‘হাকিমকে গ্রেফতার করা হবে’, এ কথা কেন বললেন সুকান্ত? কেন আশঙ্কা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী?

‘হাকিমকে গ্রেফতার করা হবে’, এ কথা কেন বললেন সুকান্ত? কেন আশঙ্কা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী?

নিজস্ব প্রতিনিধি:  রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের একটি মন্তব্যে রাজ্য রাজনীতিতে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে। সুকান্ত বলেছেন এবার নাকি ফিরহাদ হাকিমকে গ্রেফতার করা হবে।  স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা কাকে গ্রেফতার করবে তা নিয়ে আগাম ভবিষ্যৎবাণী কেন করলেন সুকান্ত? তবে শুধু সুকান্ত নন, কিছুদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমনই আশঙ্কার কথা শুনিয়েছিলেন।

 

এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এর আগে নারদা মামলায় সিবিআই গ্রেফতার করে ফিরহাদকে। বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্ত আছেন। তবে কিসের ভিত্তিতে তাঁকে ফের গ্রেফতার করা হতে পারে, তা নিয়ে যথারীতি চর্চা শুরু হয়েছে। বিজেপি বিরোধীদের অভিযোগ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা নামেই স্বয়ংশাসিত, আসলে তারা বিজেপির কথাতেই ওঠে বসে। সেই সঙ্গে বিরোধীদের দাবি, বিজেপির কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তাঁকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গ্রেফতার করা তো দূরের কথা, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেও পাঠানো হয় না। তাই বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ তথা দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার যে দাবি করেছেন, তা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন, কোন মামলার ভিত্তিতে ফিরহাদকে গ্রেফতার করতে পারে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা? যথারীতি বিষয়টি নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। আর গোটা বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার মুখ খুলেছেন ফিরহাদ।

 

তিনি বলেন, ”রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে যদি সুকান্তবাবুদের আমার উপর ব্যক্তিগত আক্রোশ থাকে, তবে আমাকে ধরা হোক, জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হোক। আমি জীবনে এমন কোনও অন্যায় করিনি যার জন্য আমার সম্মানহানি করতে হবে। তৃণমূল কংগ্রেস বা অ-বিজেপি দল করি বলে আমাকে সেন্ট্রাল এজেন্সি দিয়ে ধরা হবে, সম্মানহানি করা হবে? অথচ বিজেপিতে কেউ অন্যায় করলে তাঁর সাত খুন মাফ করে দেওয়া হবে, তাঁর কোনও মিডিয়া ট্রায়াল হবে না, বা সেন্ট্রাল এজেন্সি ধরবে না, এটা চলতে পারে না। দেশের সংবিধান আছে, আইন আছে, বিচার ব্যবস্থা আছে, আমি তার উপর আস্থাশীল। আমি এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আইনি এবং রাজনৈতিক লড়াই করব। কিন্তু দয়া করে আমার সম্মানহানি করার চেষ্টা করবেন না। কারণ আমিও কারও ছেলে, কারও স্বামী, কোনও সন্তানের বাবা। ব্যক্তিগত সম্মান নিয়ে টানাটানি করবেন না। কেন তল্লাশি শুধু অ-বিজেপি নেতাদের জন্য? বিজেপিতে কোনও অসাধু মানুষ নেই? তাঁর বাড়িতে রেইড হবে না কেন? তাঁর  মিডিয়া ট্রায়াল হবে না কেন?”

কিন্তু রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, ফিরহাদকে এভাবে সাংবাদিক সম্মেলন কেন করতে হল? এর আগে বহুবার দেখা গিয়েছে বিজেপি নেতারা তৃণমূল নেতাদের আক্রমণ করলে সেগুলিকে এতটা সিরিয়াসলি নেয়নি জোড়াফুল শিবির। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন দুর্নীতি কাণ্ডের তদন্তে নেমে ইডি এবং সিবিআইয়ের ‘দাপাদাপি’ যেভাবে বেড়েছে, তাতে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল। তবে কি সেই কারণেই এভাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে জবাব দিতে হচ্ছে তৃণমূলকে? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে। এর পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে ওয়াকিবহাল মহলের পর্যবেক্ষণ, ফিরহাদ বলছেন তিনি এমন কোনও অন্যায় করেননি যাতে তাঁকে গ্রেফতার করা হতে পারে। আর সেটা সত্যি হলে সুকান্ত মজুমদারের মন্তব্যকে রীতিমতো তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার কথা ছিল ববি হাকিমের। সেই জায়গায় কেন তাঁকে এভাবে সাংবাদিক সম্মেলন করতে হল সেই প্রশ্ন উঠছে। এই পরিস্থিতিতে ইডি-সিবিআইয়ের তদন্ত আগামী দিনে নতুন কোনও বাঁক নেয় কিনা সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *