কখনও ওদের মুখোমুখি হয়েছেন? যারা আজও ঘুরেবেড়ায় কলকাতার বুকে

কখনও ওদের মুখোমুখি হয়েছেন? যারা আজও ঘুরেবেড়ায় কলকাতার বুকে

5f4a109a1bdf0ec0c172d8537f948511

কলকাতা:  প্রতিটি শহরের ইতিহাসে লুকিয়ে রয়েছে কোনও না কোনও রহস্যময় অধ্যায়৷ সেই পাতা উল্টালে হাড় হিম হয়ে আসে৷ আর সেই শহর যদি কলকাতার মতো পুরনো এবং বৈচিত্রময় হয়, তাহলে গল্পগুলো হয়ে ওঠে আরও কৌতূহলপূর্ণ৷ ভুতুড়ে বাড়ির তালিকাও হয়ে ওঠে বেশ দীর্ঘ৷ যে বাড়ির গল্প শুনলে শিড়দাঁড়া দিয়ে বয়ে যায় এক শীতল স্রোত৷ এই সব ভূত বাড়ির কোনও বাসিন্দাদের সঙ্গে আপানার কখনও সাক্ষাৎ হয়েছে নাকি? 

টেডি ওয়েদারফোর্ড-

৪০-এর দশকের গোড়ার কথা৷ বিখ্যাত আফ্রিয়ান-আমেরিকান পিয়ানোবাদক টেডি ওয়েদারফোর্ড ওবেরয় গ্র্যান্ডের নাইটক্লাবে  অভিজাত ঔপনিবেশিকদের হয়ে পিয়ানো বাজাতেন। সেই সময় এটি ছিল “কলকাতার সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক নাইটক্লাব”৷ মনে করা হয় কলকাতার সঙ্গীত জগতের সঙ্গে জ্যাজ-এর পরিচয় ঘটিয়েছিলেন টেডি। দুর্ভাগ্যবশত, ১৯৪৫ সালে তাঁর মৃত্যু হয়৷ তখন তাঁর বয়স মাত্র ৪৩৷ পার্ক স্ট্রিটের কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়। এর পর থেকে ওই হোটলে আগত অতিথিরা মধ্যরাতে বহুবার ভুতুড়ে পিয়ানোর সুর শুনতে পেয়েছেন৷ পরবর্তীতে যাঁরা টেডির জায়গায় বসে পিয়ানো বাজিয়েছেন, তাঁরা সকলেই একটা অস্বস্তিকর শক্তি অনুভব করেছেন৷ এমনকি গ্র্যান্ডের বিশাল ব্যালকনিতে বাদামী পোশাকে টেডিকে দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখেছেন কেউ কেউ৷  

 

teddy

ওয়ারেন হেস্টিংস- 

আলিপুরের হেস্টিংস হাউসে আজও ঘুরে বেড়ায় অতৃপ্ত আত্মা৷ মনে করা হয়, এটি বাংলার প্রথম গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের ভূত৷ যিনি এই বাড়িতে থাকতেন। গল্পের সূচনা হয়েছিল ১৭৮৫ সালে, যখন বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন ওয়ারেন হেস্টিংস৷ তিনি বেশিরভাগ জিনিসপত্রই নিজের সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলে একটি “ব্ল্যাক বক্স” ছাড়া৷ মনে করা হয়, তাতে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিল যা তাঁকে নির্দোশ প্রমাণ করতে পারত৷ প্রসঙ্গত, গভর্নর হেস্টিংসকে ইমপিচড করেছিল ব্রিটিশ পার্লামেন্ট৷ কথিত আছে,  ওই উন্মত্ত ভাবে ওই ব্ল্যাক বক্সের খোঁজেই ফিরে আসে হেস্টিংসের আত্মা৷
 

হেস্টিংস

প্রাইড- একটি সাদা ঘোড়া- 
বহু বছর আগের কথা৷ কলকাতায় থাকতেন জর্জ উইলিয়াম নামে এক গোড়া সাহেব৷ যিনি ঘোড়দৌড়ের জন্য একপ্রাকার পাগল ছিলেন। তাঁর কাছে ছিল একটি সাদা ধবধবে ঘোড়া৷ যার নাম ছিল ‘প্রাইড’। জীবনের অন্তিম দিন অবধি প্রাইড-ই ছিল তাঁর একমাত্র ভরসা৷ কারণ প্রাইড ছিল চ্যাম্পিয়ন।
সময়ের সাথে সাথে  প্রাইডেরও বয়স বাড়ে৷ সেদিন ব়য়্যাল ক্যালকাটা টার্ফ ক্লাবে ডার্বিতে হেরে যায় সে৷ এর ঠিক পরের দিন ট্র্যাক থেকেই প্রাইডের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। মনে করা রাগের বশে উইলিয়ামই হত্যা করেছিলেন প্রাইডকে৷ রয়্যাল কলকাতা টার্ফ ক্লাবের পাশাপাশি রেস কোর্স নামেও পরিচিত এই মাঠে শনিবার রাতে চাঁদের আলোতে একটি সাদা ঘোড়া ছুটতে দেখেছেন অনেকেই। কথিত রয়েছে এটি‘উইলিসাম সাহেবের সাদা ঘোড়া’৷ মনে করা হয়, প্রভুর মন জয় করতেই সমাধি থেকে উঠে আসে একদা ‘কুইন অফ দা ট্র্যাক’৷ 

সাদা ঘোড়া

নিস্তার রাউত, মস্তকহীন এক নারী- 
নিস্তার রাউত, এক যৌন কর্মী গল্প৷ লোকে বলে, গল্প হলেও তা সত্যি৷ একদা নিস্তার শালিকরাম নামে এক ব্যবসায়ীর প্রেমে পড়েছিলেন৷ তাঁর হাত ধরে নতুন করে জীবন শুরু করার স্বপ্ন বুনতেও শুরু করে দিয়েছিলেন৷ যৌনকর্মীর কলঙ্ক সরাতে হাই কোর্টের দরজায় কড়া নেড়েছিলেন নিস্তার৷ যৌন কর্মীর রেজিস্টার থেকে তাঁর নাম সরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন৷ কিন্তু সেই আবেদন খারিজ করা হয়৷ 

এর দিন কয়েক বাদে নিস্তারের পচাগলা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ৷ যার শরীর থেকে মাথা ছিল বিচ্ছিন্ন৷ সারা শরীর নগ্ন৷ কেবল পায়ে পরা ছিল একটা পায়েল৷ শোনা যায়, আজও নাকি কলকাতা হাই কোর্টের করিডোরে তার পায়েলের শব্দ শোনা যায়৷ 

ভূত

হাওড়া ব্রিজের নীচে সাদা শাড়ি পরা এক অশরীরী-  সাদা শাড়ি গায়ে হেঁটে চলেছে এক অশরীরী আত্মা৷ এমনটা সিনেমার পর্দায় বহু বার দেখেছি৷ এমনটা বাস্তবেও আছে৷ হুগলি নদীর তীরে হাওড়া ব্রিজের নিচে সাদা শাড়ি পরে এক মহিলাকে হাঁটতে দেখা যায়৷ তাকে  কাঁদতে ও চোখের জল মুছতেও দেখা যায়। স্থানীয় কিছু মানুষ আবার তাকে কর্কশ কণ্ঠে ডাকতেও শুনেছে৷ শোনা যায়, যে তার ডাক শুনে, সে আর কখনই ফিরে আসে না।

ভূত