সরকারে এসেও কথা রাখেনি তৃণমূল, আজও অনটনেই কাটে ‘শহিদ’ কর্মী পরিবারের দিন

সরকারে এসেও কথা রাখেনি তৃণমূল, আজও অনটনেই কাটে ‘শহিদ’ কর্মী পরিবারের দিন

বানারহাট:  ২১ জুলাইন দিনটা এলেই কেমন যেন অস্বস্তি হয় ওদের। ১৮ জুলাই শহিদ দিবস পালনে কলকাতা যাওয়ার জন্য বাড়ির লোকটা বেরিয়েছিল। কয়েক ঘণ্টা পরেই এসেছিল দুঃসংবাদ। কেউ কথা রাখেনি, কেউ কথা রাখে না… দীর্ঘ সময় বয়ে যাওয়ার মধ্যে এখন অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে এই কথা।

একটি মৃত্যুর পরে প্রতিশ্রুতি এসেছিল অনেক৷ কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতিও হারিয়ে যায় সময়ের সঙ্গে। পরিবার না পেয়েছে চাকরি, না পেয়েছে কথামতো সাহায্য। কাশেদ আলির পরিবার এখনও অপেক্ষা করে আছে। যদি প্রতিশ্রুতি বাস্তবতা পেয়ে কিছুটা আর্থিক দুরবস্থা ঘোচে। ১০ বছরের বেশি দীর্ঘ সময় ধরে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা মৃত কাশেদ আলির পরিবারের।

সালটা ২০০৯,১৮ জুলাই। কলকাতায় ২১ জুলাইয়ে শহিদ দিবসে যোগ দিতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল কাশেদ আলি। বানারহাট ব্লকের শালবাড়ি ১ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের দূরামারী এলাকায় তাদের বাড়ি। ট্রেনে কলকাতা যাওয়ার জন্য বীড়পাড়ার দলগাও রেলস্টেশন থেকে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস ধরার কথা ছিল তার। কিন্তু স্টেশন পৌঁছানোর আগেই পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় কাশেদ আলির। স্ত্রী গুলজান বেগম ছোট দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে সেই থেকেই লড়াই করছেন। তৃণমূল সরকারে এসেছে রাজ্যে। কিন্তু তাদের জীবনের তেমন কোনও উন্নতি হয়নি।

স্বামীর মৃত্যুর সময় বড় মেয়ে কুলসুম খাতুনের বয়স মাত্র ১৪। ছেলে রাশেদ আলির বয়স মাত্র ৮ বছর। দিন মজুরি, এখানে ওখানে কাজ করে সামান্য রোজগার শুরু করেন স্ত্রী গুলজান বিবি। আর্থিক অনটন তখন চারদিকে। সামান্য টাকার জন্য হাড়ভাঙা খাটুনিও করতে হয়েছে মৃতার স্ত্রীকে। কিন্তু তিনি কখনও ভেঙে পড়েননি। চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও আজও বাস্তবতা পাওয়া যায়নি।

পড়াশুনা করিয়ে মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন গুলজান বেগম।কিন্তু বার্ধক্যজনিত রোগে আর শরীর চলে না। বাবার মারা যাওয়ার পরে ২০ হাজার টাকা দিয়েছিল তৃণমূল থেকে। সেইসময় উত্তরবঙ্গের তৃণমূল নেতা গৌতম দেব মৃতের বাড়িতেও এসেছিলেন।

তৃণমূল তখন ছিল বিরোধী দল। এখন তৃণমূল রাজ্যে তৃতীয় বারের জন্য সরকারের ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু এই পরিবারকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কিছুই বাস্তবে হয়নি৷ এখনও এই পরিবারের উঠোনে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটের প্রচারের স্টিকার সাঁটানো আছে। আছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিও। কিন্তু তারপরেও সেই প্রশ্নই থাকবে? কেউ কি কথা রাখেনি?  কেউ কি কথা রাখে না?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − five =