পরিবার ফেলে গিয়েছে, হাসপাতালই বাড়ি ‘ভারতে’র! দুর্গন্ধে টেকা দায় রোগীদের

পরিবার ফেলে গিয়েছে, হাসপাতালই বাড়ি ‘ভারতে’র! দুর্গন্ধে টেকা দায় রোগীদের

 

বাঁকুড়া: সালটা ২০১৭ সালের ২৫ আগষ্ট৷ পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম এক বৃদ্ধকে বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের মেল সার্জিকেল ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেও চলা ফেলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। আর তাঁকে ফেলে যায় বাড়ির লোকজন। আর তখন থেকেই তাঁর ঠিকানা হয় হাসপাতালের ৩৪৫ নম্বর বেড। হাসপাতাল  কর্তৃপক্ষের তরফে বিভিন্নভাবে ওই বৃদ্ধের পরিবার পরিজনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁদের খোঁজ মেলেনি বলে জানা গেছে।

অগত্যা,  গত পাঁচ বছর ধরে তাঁর পরিচয় বেড নাম্বার ৩৪৫। বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ভর্তি থাকা ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ এই রোগীর এখন এটাই পরিচয়। হাসপাতালের কর্মীরা হাজার চেষ্টা করেও তাঁর পরিচয় জানার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। সব প্রশ্নের উত্তরে শুধু তিনি একটি কথাই বলেন ‘ভারত’। কিন্তু কে এই ভারত, কোথায় তাঁর বাড়ি, আত্মীয় পরিজন আছেন কিনা এর সদুত্তর মেলেনি গত পাঁচ বছরেও।

বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চতুর্থ তলায় মেল সার্জিকেল ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেল, একমুখ খোঁচা খোঁচা দাড়ি নিয়ে অন্যান্য রোগীদের সঙ্গে এক ঘরে ৩৪৫ নম্বর বেডে বসে আছেন বৃদ্ধ। ডান পা সম্পূর্ণ বেঁকে গেছে। খাবার খেলেও শৌচকর্মে যাওয়ার ক্ষমতা তাঁর নেই। ফলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে ওয়ার্ড জুড়ে।  হাসপাতালের কর্মী ছোটু মাদ্রাজি বলেন, পাঁচ বছর আগে তিন চার জন মিলে ওঁকে হাসপাতালে এনে ভর্তি করে। বিছানা থেকে উঠতে পারে না। ওখানেই শৌচকর্ম সারে। বাড়ির লোক খোঁজ খবর নেয় না। এই অবস্থায় হাসপাতালের কর্মীরাই যাবতীয় সেবা শুশ্রুষা করেন।

হাসপাতালে ভর্তি থাকা এক রোগীর পরিবারের লোক সঞ্জয় নাগ, মনিজা বিবিরা বলেন, ওই বেডে বসেই উনি শৌচকর্ম সারেন। ফলে দুর্গন্ধে টেকা যায়না। অন্যান্য রোগীদের খুব সমস্যা হচ্ছে।  বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সুপার মহেন্দ্র নাথ মাণ্ডি এবিষয়ে বলেন, বাড়ির লোকের খোঁজ মেলেনি। হাসপাতালের তরফেই ওনার চিকিৎসা ও খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। উনি এখন সূস্থ, তবে বাড়ির লোকের সন্ধান না মেলায় হাসপাতালেই রাখা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 − two =