করোনা কেড়েছে মা-বাবা-ভাইকে! কোভিড-মুক্ত হয়েও সর্বহারা তরুণী

করোনা কেড়েছে মা-বাবা-ভাইকে! কোভিড-মুক্ত হয়েও সর্বহারা তরুণী

বোলপুর: প্রথমে মা, তারপর বাবা এবং শেষে ভাই, তিনজনেরই প্রাণ গিয়েছে মহামারীতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লড়াই করে করোনাকে জয় করে বাড়ি ফিরে এলো মেয়ে। তবে সাতদিনের ব্যবধানে গোটা পরিবারকে হারিয়ে এখন সর্বহারা সিউড়ির বাসিন্দা ঈশানি সিংহ। এই মর্মান্তিক ঘটনার খবর পেয়ে কলকাতা থেকে সিউড়ি ছুটে গিয়েছেন ঈশানির মামা চন্দন ঘোষ। তিনিই এখন দেখভাল করছেন ঈশানির।

বীরভূমের সিউড়ি শহরের নতুন ডাঙ্গালপাড়ার বাসিন্দা ঈশানি সিংহ। সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের আংশিক সময়ের অধ্যাপিকা তিনি। গত ৪ মে করোনায় আক্রান্ত হন ঈশানির মা দিপ্তি সিংহ। তাকে প্রথমে ভর্তি করা হয় সিউড়ি সদর হাসপাতালে। পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে তাকে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু দিপ্তিদেবীর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়মিত যাতায়াত করেন পরিবারের বাকিরা। সেই থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন ঈশানির বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক কর্মচারী রামদাস সিনহা, ভাই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ পড়ুয়া রাজদীপ এবং ঈশানি নিজে। সকলেই ভর্তি হন হাসপাতালে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় প্রত্যেকেরই। প্রথমে গত ১৩ মে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান ঈশানির মা দিপ্তিদেবী। এরপর একে একে করোনা যুদ্ধে হার মানেন ঈশানির বাবা ও ভাই। ২০ মে রামদাসবাবু এবং ২১ মে ভোরবেলা মারা যান রাজদীপ। হাসপাতালে থাকতে থাকতেই বাবা-মায়ের মৃত্যুর খবর পৌঁছে দেওয়া ঈশানির কাছে। কিন্তু তখনও শেষ সম্বল ভাইয়ের অন্তিম পরিণতির কথা জানেন না।

২১ মে শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটলে করোনাকে হার মানিয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান ঈশানি‌। পরিবারের এই মর্মান্তিক বিপর্যয়ের খবর পেয়ে কলকাতার বিরাটির বাসিন্দা ঈশানির মামা চন্দন ঘোষ সিউড়ি ছুটে যান। তিনিই ঈশানিকে হাসপাতাল থেকে ছুটি করিয়ে রামপুরহাটের একটি হোটেলে রাখেন। সেখানেই ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পায় ঈশানি। সেখান থেকে ঈশানিকে নিয়ে চন্দনবাবু সিউড়িতে সিংহ বাড়িতে ফেরেন। রেড ভলিন্টিয়ার-এর তরফ থেকে ইতিমধ্যেই বাড়িটিকে স্যানিটাইজ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নতুনডাঙ্গার সিংহ বাড়িতে এখন হাহাকার। স্বজন হারানোর শোকে বিহ্বল পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য ঈশানি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 + 8 =