বড়ঞা কাণ্ডে আদালতের নির্দেশে মুখ পুড়ল প্রশাসনের! আপসহীন লড়াই চালাচ্ছেন প্রদেশ সভাপতি

বড়ঞা কাণ্ডে আদালতের নির্দেশে মুখ পুড়ল প্রশাসনের! আপসহীন লড়াই চালাচ্ছেন প্রদেশ সভাপতি

নিজস্ব প্রতিনিধি:  সিপিএম জমানা থেকে বর্তমান তৃণমূল সরকারের আমল, শাসকের বিরুদ্ধে অধীর চৌধুরীর লড়াই বারবার খবরের শিরোনামে এসেছে। পুলিশি ঝামেলায় আত্মগোপন করে থাকা অবস্থাতেই ১৯৯৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম কেন্দ্র থেকে বিপুল ব্যবধানে জয় পেয়েছিলেন অধীর। এরপর ১৯৯৯ থেকে  বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে পরপর পাঁচবার জিতে এসেছেন তিনি। চব্বিশের নির্বাচনে জিতলে ডবল হ্যাটট্রিক হবে তাঁর। বহরমপুরের ‘রবিনহুড’কে এবার নতুন ভূমিকায় দেখা গেল। রীতিমতো গান্ধীগিরি করে আদালতের রায়ের ভিত্তিতে জয় পেলেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তায় কংগ্রেস প্রার্থীদের ‘বি’ ফর্ম জমা নিতে হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে।

 

বুধবার এমনই নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা। এরপরই চব্বিশ ঘণ্টা ধরে যে ধর্নায় বসেছিলেন অধীর তা তুলে নেন তিনি। মুর্শিদাবাদের বড়ঞায় কংগ্রেসের প্রায় দুশো প্রার্থীর প্রতীক চিহ্নের ‘বি’ ফর্ম তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা পুলিশের সামনেই বিডিও অফিসের সামনে থেকে ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ করেন অধীর চৌধুরী। সেই সঙ্গে ফর্ম বিলির দায়িত্বে থাকা প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ককে তৃণমূল কর্মীরা মারধর করে বলেও অভিযোগ ওঠে। মঙ্গলবার এই খবর পেয়েই সঙ্গে সঙ্গে বড়ঞা বিডিও অফিসে ছুটে যান প্রদেশ সভাপতি। প্রশাসনের কাছে আবেদন করেন যাতে তাঁদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া ফর্মগুলি ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু তাতে প্রশাসনের সাড়া মেলেনি। এরপরই অধীর ঘোষণা করেন প্রতীক বিলির ফর্ম জমা নেওয়া না হলে তিনি বিডিও অফিসের  সামনে ধর্নায় বসে থাকবেন। এরপরই শুরু হয় ধর্না। সেখানে যোগ দেন কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা।

 

অধীরের অভিযোগ প্রবল গরমের মধ্যেও সেখানে জেনারেটর দিয়ে পাখা চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়নি। সেই গরমের মধ্যেই টানা ধর্না চালাতে থাকেন তিনি। সেই সঙ্গে কংগ্রেসের তরফে কলকাতা হাইকোর্টে বিষয়টি নিয়ে মামলা দায়ের করা হয়। আর সেই মামলার শুনানিতেই বিচারপতি অমৃতা সিনহার স্পষ্ট নির্দেশ, কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারিতে ‘বি’ ফর্ম জমা নিতে হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। স্বাভাবিকভাবেই হাইকোর্টের এই নির্দেশে ব্যাপক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন অধীর। ধর্না তুলে নিয়ে বড়ঞায় দলের কর্মীদের নিয়ে মিছিল করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। মিছিল করতে পুলিশ বাধা দিলে কিছুটা উত্তেজনা তৈরি হয় সেখানে। প্রথম থেকেই অধীর নিজের দাবিতে অনড় ছিলেন। ‘হাত’ প্রতীক ফেরানো না হলে ধর্না চলবে বলে হুঁশিয়ারি দেন অধীর। তাঁর অভিযোগ, বড়ঞার বিডিও তাঁদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করেছেন। গোটা বিষয়টি তিনি লোকসভার স্পিকারকে চিঠি দিয়ে জানান। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, যেহেতু অধীর লোকসভার সাংসদ, তাই বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে লোকসভার স্বাধিকার রক্ষা কমিটি প্রয়োজনে ওই বিডিওকে তলব করে জবাবদিহি চাইতে পারে।

 

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বিভিন্ন ইস্যুতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সেটা হচ্ছে গত দু’ বছর ধরে। অন্যদিকে তিন দশকের বেশি সময় ধরে অধীর যে চড়া মেজাজে, আগ্রাসী ভূমিকায় আন্দোলন চালিয়ে আসছেন শাসক দলের বিরুদ্ধে, রাজ্য রাজনীতিতে এই উদাহরণ বর্তমানে আর একটিও নেই। বিহারের পাটনায় বিরোধী জোটের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের পাশাপাশি বিভিন্ন অ-বিজেপি দলের নেতারা যোগ দেবেন। যে বৈঠকের আয়োজক বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার। কিন্তু তার আগেও তৃণমূল বিরোধিতায় এক চুল সরতে রাজি নন প্রদেশ সভাপতি। উল্টে আরও আগ্রাসী ভূমিকায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন তিনি। কিছুদিন আগে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে অধীর এটাও বলেছেন,  প্রয়োজনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বিরুদ্ধে লোকসভা নির্বাচনে বহরমপুরে  এসে দাঁড়ালেও জিততে পারবেন না। এই কনফিডেন্স নিয়ে কোনও বিরোধী নেতাকে সাম্প্রতিককালে রাজনীতির ময়দানে সাফল্যের সঙ্গে থাকতে দেখা যায়নি। সবমিলিয়ে অধীর বিরোধী রাজনীতির ক্ষেত্রে নিজের একটা ‘ব্র্যান্ড ইমেজ’ তৈরি করে ফেলেছেন। যে ‘ফায়ার ব্র্যান্ড’কে ভয় পাচ্ছে তৃণমূল। এটাই তাঁর সাফল্য। আর শুধু অধীর ফ্যাক্টরের জন্যই রাজ্যে কংগ্রেস এখনও প্রাসঙ্গিক হয়ে রয়েছে। যার পুরো কৃতিত্বটাই প্রদেশ সভাপতির। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের ফলের দিকে রাজনীতি সচেতন মানুষের যে বাড়তি নজর থাকবে তা স্পষ্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − 1 =