কলকাতা: কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন পরিচালকরা?পর পর দুই গিল্ডের পৃথক বৈঠকেও বেরোলো না রফাসূত্র,কাটল না জট।ডিরেক্টরস গিল্ড এর সঙ্গে ফেডারেশনের দ্বন্দ্ব লেগেই রইল সোমেও।কবে চালু হবে শ্যুটিং?সিরিয়াল পুনঃপ্রচারের আশঙ্কা বাড়ছে।
শেষে কিনা সংঘাতের জায়গা স্টুডিওপাড়া? সিনেমা, সিরিয়াল, ওটিটির শুটিং অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। কিন্তু কেন এই অচলাবস্থা? রাহুল মুখোপাধ্যায় কে ডিরেক্টর হিসেবে আদৌ কি মানবে ফেডারেশন? নবীন পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায় কে নিয়ে সমস্যার শুরু, সেখান থেকে পরিচালক বনাম টেকনিশিয়ানের দ্বন্দ্বে পরিণত হলো পুরোটা। শনিবার সেটে রাহুল মুখোপাধ্যায়কে দেখে টেকনিশিয়ানরা কাজ বন্ধ করে দেওয়ার জেরে অবস্থা এখন এমন জায়গায় যে কবে থেকে টলিপাড়ায় কাজ শুরু হবে তা বোঝা যাচ্ছে না।
অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে এদিন পরিচালকদের নিয়ে মিটিং বসে। একসঙ্গে বসে সমাধান সূত্র খোজার পরামর্শ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের। মিটিং শেষে অভিনেতা বলেন, আমরা একটি পরিবারের মতো। আমরা সারা জীবন টেকনিশিয়ানদের জন্য লড়াই করেছি। এটা মান-সম্মানের লড়াই। একটা পরিবারে অভাব-অভিযোগ থাকবে। তাই বলে পরিবার ভেঙে যায় না। আমরা চাই কাজটা চলুক। অভিনেতা দেব আসতে না পারলেও পুরোটা সময় ভিডিও কলে ছিলেন মিটিং এ। তিনিও বলেছেন আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব। পরিচালক গৌতম ঘোষ থেকে শিবপ্রসাদ রাজ চক্রবর্তী সকলেই চাইছেন সমস্যার সমাধান হোক। কাজ শুরু হোক আগের মতো। কিন্তু ফেডারেশন কি চাইছে? সেটা বড় প্রশ্ন।
এদিনই বিকেল চারটে ফেডারেশন এর বৈঠক। সেখানে উপস্থিত ছিলেন টেকনিশিয়ানরা। বৈঠক শেষে ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস বলেন তাঁরা তাঁদের সিদ্ধান্তে অনড়। অর্থাৎ এসভিএফ প্রযোজিত পুজোর ছবিতে রাহুল মুখোপাধ্যায়কে সরাতে হবে পরিচালকের আসন থেকে আর সৌমিক হালদারকে পরিচালক করতে হবে। আর এই নিয়ে এখনও পর্যন্ত ফেডারেশনের সঙ্গে কোনও আলোচনাই হয়নি। স্বরূপ বিশ্বাস টলিপাড়ার অচলাবস্থা প্রসঙ্গে এও বলেন যে এটা পূর্ণ ষড়যন্ত্র। ফেডারেশনের সভাপতি এও জানান যে যাঁরা এই অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছেন তাঁদের সঙ্গে সরাসরি ফেডারেশন আলোচনায় বসতে চায়। ফেডারেশনও চায় এই অচলাবস্থা কেটে যাক। তাই পরিচালকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান তাঁরা। একইসঙ্গে পরিচালক প্রযোজকদের একাংশকে দুষলেন ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস।
অতএব একটা জিনিস পরিষ্কার, দফায় দফায় মিটিং, বৈঠক হচ্ছে। দুপক্ষই চাইছে সমস্যার সমাধান হোক। কিন্তু তারপরেও কাটছে না জট।
এদিকে, ধারাবাহিকের শুটিং বন্ধ থাকার অর্থ নতুন এপিসোড কমে আসার সম্ভাবনা।অভিনেতা-অভিনেত্রীদেরকে ভাবাচ্ছে পুনঃপ্রচারের দুশ্চিন্তা। শিল্পীরা ছাড়াও প্রযোজকদের বিনিয়োগও আটকে রয়েছে। ফলে বেশি দিন শুটিং বন্ধ থাকলে চ্যানেলের তরফেও চাপ আসবে। সুতরাং ঘুরেফিরে সেই একটাই জায়গাতে আসছে পুরোটা। সবটাই নির্ভর করছে পরিচালকদের সিদ্ধান্ত এবং ফেডারেশনের উপর। কিন্তু কোথা থেকে সমস্যার সূত্রপাত?
জানা যায় বাংলাদেশের OTT মাধ্যম চরকির জন্য লহু নামক সিরিজে পরিচালনার কথা ছিল রাহুল মুখোপাধ্যায়ের। কলকাতায় শ্যুটিং হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু চরকির সমস্যা ছিল এখানকার শর্ত মেনে কাজ করায়। তাই তাঁরা গিয়ে বাংলাদেশে শ্যুটিং করে। আর রাহুল এই সিরিজের পরিচালনা করেন বাংলদেশে গিয়ে কিন্তু ফেডারেশনকে কিছু না জানিয়ে। তাই তাঁকে শাস্তি দেওয়া হয়। নিয়মভঙ্গের অভিযোগে পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়কে তিন মাসের কর্ম বিরতি নেওয়ার আদেশ দেয় ফেডারেশন। কিন্তু বিষয়টা জটিল হয়ে যায় তখন, যখন পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ডিরেক্টরস গিল্ড। অথচ রাহুলকে ছাড়পত্র দেয় না ফেডারেশন। শনিবার থেকেই রাহুলের নতুন ছবির শ্যুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল। সেইমতো পরিচালক এবং অভিনেতারা সময়ে পৌঁছেও গিয়েছিলেন৷ কিন্তু টেকনিশিয়ানরা কেউ-ই ফ্লোরে আসেনননি। এরপরই
রাজ চক্রবর্তী জানান, দু’দিনের মধ্যে সমাধান না হলে সোমবার থেকে পরিচালকরাও ফ্লোরে আসবেন না। যেমন কথা তেমন কাজ তারপর থেকেই শ্যুটিং বন্ধ। বন্ধ ক্যামেরা, ফাঁকা স্টুডিওর শুটিং ফ্লোর।