howrah rail division centenary
কলকাতা: কয়লার ইঞ্জিন থেকে বন্দে ভারত— সময় বদলেছে, বদলেছে ট্রেনের গতি, কিন্তু হাওড়া ডিভিশন রয়েছে আজও ঠিক আগের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। এই রেল ইউনিট এবার দিল একশোতে পা, আর সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তে সম্মান জানাতে বিশেষ উদ্যোগ নিল ভারতীয় ডাক বিভাগ।
আগামী ২৩ মে হাওড়ায় প্রকাশিত হতে চলেছে একটি স্মারক ডাকটিকিট ও খাম, যাতে ফুটে উঠবে এক শতাব্দীর রেলগাথা। গোলাকৃতি সেই ডাকটিকিটে থাকবে দুই যুগের রেল ইঞ্জিনের ছবি— একদিকে পুরোনো কয়লা ইঞ্জিন, অন্যদিকে অত্যাধুনিক বন্দে ভারত। সঙ্গে লেখা থাকবে, “গৌরবময় হাওড়া ডিভিশনের ১০০ বছর, ইস্টার্ন রেলওয়ে”।
এই স্মারক শুধু সৌন্দর্য নয়, সংখ্যাতেও সীমিত— মাত্র ১,০০০টি ছাপা হবে, যার জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৩.৪৩ লক্ষ টাকা। ডাকটিকিট এবং খাম প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেন কেন্দ্রীয় যোগাযোগ মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া অথবা রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৫ মে বিশেষ ডাকটিকিট এবং চিঠির খাম প্রকাশ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার জেরে তা পিছিয়ে যায়।
ইতিহাসের পাতায় হাওড়া ডিভিশন
রেলগাড়ি প্রথম যখন হাওড়া থেকে ছুটল, তখন দিনটা ছিল ১৮৫৪ সালের ১৫ আগস্ট। ৩৯ কিমি দূরের হুগলিই ছিল সেই ঐতিহাসিক গন্তব্য। কয়লাচালিত ইঞ্জিনের শব্দে ভেসে গিয়েছিল শহর। এটাই ছিল ভারতের পূর্বাঞ্চলে প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেনের যাত্রা— সেই যাত্রা, যা আজ ১৭১ বছর পরেও অনুপ্রেরণা জোগায়।
কিন্তু রেল-ইতিহাসে ‘হাওড়া ডিভিশন’-এর আত্মপ্রকাশ ঘটেছে পরে। ১৯২৫ সালের ১ জানুয়ারি, ব্রিটিশ সরকার পূর্ব ভারতের রেল পরিষেবা নিজ হাতে তুলে নেয় এবং গঠিত হয় ইস্টার্ন ইন্ডিয়া রেলওয়ে। ওই বছরের ৩০ জুন, সেই রেল সংস্থা অধিগ্রহণ করে গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুলা রেলওয়ে-কে, এবং এই সংগঠনমূলক পুনর্বিন্যাসের ফলেই তৈরি হয় হাওড়া রেল ডিভিশন।
এই সময়ের পর থেকেই হাওড়া হয়ে ওঠে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেল জংশন। শুধু কলকাতা নয়, গোটা পূর্ব ভারত— এমনকি উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারতেও যোগাযোগের প্রধান সেতুবন্ধন হয়ে দাঁড়ায় হাওড়া। দেশের বাণিজ্যিক রুট, যাত্রী পরিবহণ, পণ্য পরিবহণ— সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে এই ডিভিশন।
ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী howrah rail division centenary
হাওড়া ডিভিশন শুধু যোগাযোগের মাধ্যম ছিল না— এটা ছিল ঐতিহাসিক ঘটনার নীরব সাক্ষী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই স্টেশন থেকেই সেনাবাহিনী পরিবহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ভারতীয় রেল। রেল স্টেশনটি সেই সময় রূপ নেয় মিলিটারি ট্রান্সপোর্ট হাবে।
তাছাড়া, এক গভীর ঐতিহাসিক মুহূর্তও এই স্টেশনের সঙ্গে জড়িত— বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ রেলযাত্রা শুরু হয়েছিল এখান থেকেই। ১৯৪১ সালের ২৫ জুলাই, শান্তিনিকেতন থেকে হাওড়া হয়ে কলকাতা এসেছিলেন কবিগুরু, যা ইতিহাসে রয়ে গিয়েছে৷ এ এক আবেগঘন অধ্যায়৷
স্টেশনঘর থেকে স্থাপত্য
শুরুর দিকে হাওড়া স্টেশন ছিল কাঠের তৈরি সাধারণ এক ঘর। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার রূপান্তর ঘটে এক স্থাপত্যকীর্তিতে। ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার চার্লস স্টুয়ার্টের নকশায় তৈরি হয় লাল ইটের ভবন, যা আজ পরিচিত ‘লালবাড়ি’ নামে।হাওড়া স্টেশনকে আজ হেরিটেজ স্টেশন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ১৯০৫ সালে যার নির্মাণ শুরু, তা আজ রেল ইতিহাসের প্রতীক।
এমনকি ১৯২৪ সালে ব্রিটিশ সরকার রেল পরিষেবার জন্য স্বাধীন বাজেট বরাদ্দ করেছিল, যা পরে ভারতীয় রেল ব্যবস্থাকে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশাসনিক কাঠামো দেয়। এর ফলেই ১৯২৫ সালের হাওড়া ডিভিশন একটি নির্দিষ্ট রেল প্রশাসনিক ইউনিট হিসেবে গড়ে ওঠে।
আজকের হাওড়া ডিভিশন আর শুধু রেলের ডিপার্টমেন্ট নয়— এটা একটা অনুভব, একটা স্মৃতি, একটা গর্ব। স্মার্ট ডিসপ্লে থেকে ই-টিকিট, সোলার প্যানেল থেকে বায়ো-টয়লেট— রেল এখানে যেমন নস্ট্যালজিয়া, তেমনই প্রযুক্তি ও পরিবেশের ভবিষ্যৎ।
Bengal: Howrah Rail Division marks its 100th anniversary! Indian Postal Service to release a special commemorative stamp showcasing the evolution from coal engines to the modern Vande Bharat. Discover the legacy of this vital Kolkata railway hub.