কলকাতা: টলিপাড়ার অন্যতম নামী অভিনেত্রী পল্লবী দে’র রহস্য-মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বিনোদন জগতে। খুন, নাকি আত্মহত্যা, নাকি আত্মহত্যায় প্ররোচনা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে যথারীতি শুরু হয়েছে চর্চা। যদিও ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে আত্মহত্যার তত্ত্বই স্পষ্ট হয়েছে। তবে এটা নিয়ে শেষ কথা বলবেন তদন্তকারীরাই। কিন্তু পল্লবীর মৃত্যু বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে দিল। আজ থেকে দশ বছর আগেও কোনও যুগল লিভ টুগেদার করলে বেশিরভাগ মানুষ বাঁকা চোখে তাকাতেন। কিন্তু আজকের এই অত্যাধুনিক যুগে লিভ-ইন সম্পর্ক এখন বেশ স্বাভাবিক ঘটনা। চট করে সেটা দেখে কেউ অবাক হন না। কিন্তু ওয়াকিবহাল মহল মনে করে বিবাহিত জীবনের সমান হতে পারে না লিভ-ইন সম্পর্ক। সেখানে দায়িত্ববোধের সমস্যা একটা বড় আকার নেয়। আর তার থেকেই মাঝে মধ্যে ঘটে যায় এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা।
গত দু’বছর ধরে অভিনেত্রী পল্লবী লিভ-ইন সম্পর্কে ছিলেন সাগ্নিক চক্রবর্তীর সঙ্গে। তাঁরা দু’জনেই হাওড়ার বাসিন্দা। দুই পরিবারের সকলেই এই সম্পর্কের কথা জানেন। আর ঘটনার পর পল্লবীর বন্ধুবান্ধব ও তাঁর পরিবার সূত্রে দাবি, বেশ কিছুদিন ধরেই তাঁদের সম্পর্কের মধ্যে অসম্ভব টানাপড়েন চলছিল। মাঝেমধ্যেই ঘনিষ্ঠদের কাছে নিজের মানসিক সমস্যার কথা বলে ফেলতেন পল্লবী। শুধু তাই নয়, সাগ্নিক বিবাহিত এই দাবিও উঠছে। আর এই ঘটনায় ঐন্দ্রিলা নামে এক তরুণী জড়িত কিনা তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। এদিকে গ্ল্যামার দুনিয়ায় কাজ করার জন্য যে স্ট্যাটাস বজায় রাখতে হয় তা করতে গিয়ে টাকা-পয়সার সমস্যাতেও পল্লবী পড়েছিলেন বলে সাগ্নিক দাবি করছেন। আর ঘটনার দিন কিছু আগে সাগ্নিক-পল্লবী রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন। তার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এমন কী ঘটল যাতে ‘আত্মহত্যা’র কথা ভাববেন পল্লবী! তাই প্রশ্ন উঠছে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হল তাঁদের জীবনে যাই ঘটুক না কেন, মানসিক অশান্তি বা অর্থনৈতিক সমস্যা, সেটা তো তাঁদেরই কথা বলে মিটিয়ে নিতে হবে। প্রতিটি সংসারে এটাই ঘটতে দেখা যায়। স্বাভাবিকভাবেই এক্ষেত্রে উঠছে দায়িত্ববোধের বিষয়টি।
আর তাতেই প্রমাণিত সংসার জীবন আর লিভ-ইন সম্পর্ক কখনও এক হতে পারে না। কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনা বাদ দিলে এই ধরনের সম্পর্কে নানা জট-জটিলতা দেখা দেয়। সেখান থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হয়ে পড়ে। পল্লবীর ঘনিষ্ঠদের কথায় তিনিও অসম্ভব মানসিক টানাপড়েনের মধ্যে ছিলেন। প্রাণপণে চাইছিলেন সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে। কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছিল না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় লিভ-ইন সম্পর্কের ক্ষেত্রে মানসিক বন্ধনের থেকে বড় হয়ে দাঁড়ায় লেনদেনের সম্পর্ক। তাই হৃদয়ের টানে লিভ-ইন, নাকি প্রয়োজনের জন্য লিভ-ইন, এই প্রশ্ন বহু ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। তবে সাগ্নিক-পল্লবীর জীবনে ঠিক কী ঘটেছে সেটা সকলেরই অজানা। তাই জীবনের জন্য এই পথে হাঁটা, নাকি হৃদয় চাইছে বলেই এই ধরনের সম্পর্ক? এই প্রশ্নের মীমাংসা অধিকাংশ সময় হয় না। তাই পল্লবী-চ্যাপ্টার কতদিন চর্চার মধ্যে থাকে এখন সেটাই দেখার।