যে ভোট লুট রুখতে ছিল মমতার মহাকরণ অভিযান, সেই অভিযোগ আজও প্রাসঙ্গিক

যে ভোট লুট রুখতে ছিল মমতার মহাকরণ অভিযান, সেই অভিযোগ আজও প্রাসঙ্গিক

কলকাতা: ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই। সচিত্র পরিচয়পত্রের দাবিতে তৎকালীন প্রদেশ যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মহাকরণ অভিযান হয়েছিল। মমতার অভিযোগ ছিল তৎকালীন বাম সরকারের আমলে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হতো না। নির্বাচনে ভোট লুট করা হতো। একজনের ভোট অন্যজন এসে দিয়ে যেত। ছাপ্পা ভোট আর রিগিং চলত বুথে বুথে। সাধারণ মানুষ যাতে নিজের ভোট নিজে দিতে পারেন সেই লক্ষ্যেই সচিত্র পরিচয়পত্রের দাবিতে মমতার নেতৃত্বে যুব কংগ্রেস কর্মীরা মহাকরণ অভিযান করেছিলেন। সেই অভিযানে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মী। সেই থেকে প্রতি বছর একুশে জুলাই শহিদ দিবস কর্মসূচি পালন করে আসছেন মমতা। কিন্তু প্রশ্ন হল যে সুস্থ গণতন্ত্রের স্বার্থে মমতা কালজয়ী আন্দোলন করেছিলেন, এখন তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র লুট করার অভিযোগ উঠছে কেন? সদ্য শেষ হয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচন। হাজার হাজার বুথ লুট করার অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। এমন বহু বুথের ফলাফল সামনে এসেছে যেখানে ভোটার সংখ্যার চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী। আদালতে বিষয়টি গড়ানোর পর ঘটনাটি জেনে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছেন বিচারপতি।

নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যালট পেপার উদ্ধার হচ্ছে যেখানে বিরোধীদের ভোট দেওয়া হয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে। এই ধরনের প্রচুর অনিয়ম ও অসঙ্গতি রয়েছে তেইশের পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। এছাড়া পঞ্চায়েত ভোটকে ঘিরে সীমাহীন সন্ত্রাস ও তাতে পঞ্চাশ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এই আবহের মধ্যে তৃণমূলের শহিদ দিবস সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে চলেছে।
তাই প্রশ্ন উঠছে, যে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের দাবিতে ৩০ বছর আগে ২১ জুলাই মমতা মহাকরণ অভিযান করেছিলেন, তা কি এখন তাঁর সরকার তথা প্রশাসনের আচরণে ধাক্কা খাচ্ছে না? এতে কি মমতার ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে না?

বিরোধী দলে থাকার সময় যে দাবি তিনি করেছিলেন, যে শান্তিপ্রিয় নির্বাচনের দাবিতে সরব হয়েছিলেন, তা কি সরকারে এসে ভুলে গিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী? যে সীমাহীন সন্ত্রাসের অভিযোগ তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে উঠত, তা এখন কেন উঠছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে? বাংলায় ক্ষমতায় আসার পর মমতা বারবার বলেছেন বদলা নয়, বদল চাই। কিন্তু এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচন দেখে বাংলার মানুষ বলতে বাধ্য হচ্ছেন কিছুরই বদল ঘটেনি।

ঘটনা হচ্ছে মমতার সেই অভিযানের পর তৎকালীন দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার টি এন শেষনের উদ্যোগে সচিত্র পরিচয়পত্রের ব্যবস্থা চালু হয় দেশজুড়ে। এর জন্য অবশ্যই মমতার সাধুবাদ প্রাপ্য। কিন্তু যে দাবি তিনি করেছিলেন সেখান থেকে বিচ্যুতির ঘটনা বর্তমান তৃণমূল সরকারের আমলে কেন ঘটবে? এই প্রশ্ন তুলছেন বাংলার লক্ষ লক্ষ শান্তিপ্রিয় মানুষ। তাই একুশে জুলাইয়ের সমাবেশ বর্তমান প্রেক্ষাপটের সঙ্গে কতটা প্রাসঙ্গিক সেটা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থেকেই গেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 − sixteen =