লক্ষীর ভান্ডার-টাকা-ট্যাব বাতিল! সবক শেখানোর নীতি রাজ্য সরকারের?

কলকাতা: আরজি কর আবহে লক্ষীর ভান্ডার বন্ধ করলো মমতা সরকার? ছাত্রদের দেবে না ১০ হাজার, আটকে গেল ট্যাব। সবক শেখাতেই কী এই নীতি? সব বাতিল…

Mamata Banerjee junior doctors

কলকাতা: আরজি কর আবহে লক্ষীর ভান্ডার বন্ধ করলো মমতা সরকার?
ছাত্রদের দেবে না ১০ হাজার, আটকে গেল ট্যাব। সবক শেখাতেই কী এই নীতি?
সব বাতিল কেন? তাহলে ছাত্রসমাজের নবান্ন অভিযানের মাশুল গুণবে গোটা রাজ্য?

কেউ কেউ ফিরিয়েছেন পুজোর অনুদান। কেউ কেউ ফেরাচ্ছেন সরকারের দেওয়া পুরস্কার। যখন আরজিকর আবহে রাজ্যের বুকে তৃণমূল ক্রমেই কোণঠাসা হচ্ছে, তখন ডিরেক্ট সবক শেখানোর নীতি নিল মমতা সরকার। এবার নবান্ন জানিয়েছিল, শুধু দ্বাদশ শ্রেণি নয়, রাজ্যের একাদশ শ্রেণীর পড়ুয়াদেরও ট্যাব কিনতে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে সেই পরিকল্পনা বাতিল করলো শিক্ষা দফতর। অলরেডি, সব ট্রেজ়ারিকে এই ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে আচমকা কেন এই সিদ্ধান্ত বদল সরকারের, না সেটা অবশ্য স্পষ্ট করা হয়নি ওই বিজ্ঞপ্তিতে। শুধু জানানো হয়েছে, ‘প্রশাসনিক কারণে’ এই সিদ্ধান্ত। আর আগামী দিনে সেই টাকা দেওয়া হবে কি না বা দিলে তা কবে, সেই ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি। এমনকি এই পরিস্থিতির মধ্যে দুর্গা ভান্ডারের টাকা দেওয়া নিয়েও ধীরে চলো নীতি নিয়েছে নবান্ন। গত ২৩ জুলাই নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে পুজো অনুদান বৃদ্ধির ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিন দশেক আগেই ক্লাব-পুজো কমিটিগুলির জন্য দুর্গাপুজোর অনুদানের চূড়ান্ত প্রশাসনিক প্রস্তুতিতে ছাড়পত্র দিয়েছে নবান্ন। ৪৫ হাজারের কিছু বেশি ক্লাবের জন্য বরাদ্দও হয়েছে ৩৮৫ কোটি ৩৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু জেলা প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, অন্তত ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেই টাকা না ছাড়ার ব্যাপারে প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশ এসেছে। তার পরেও কবে ছাড়া হবে ওই টাকা, আদেও ছাড়া হবে কিনা তা এখনও নিশ্চিত নয়।

খোঁচা দিয়েছিলেন কুণাল কাঞ্চন। তাহলে কী সেই পথেই হেঁটে দেখালো রাজ্য সরকার? আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ খুনের ঘটনার পর থেকে সুবিচারের দাবিতে পথে নেমে প্রতিবাদ করে কেউ কেউ রাজ্য সরকারের পুজোর অনুদান ফিরিয়েছে, কেউ বলেছে যে রাজ্যে সেফ নয় লক্ষ্মীরা সেখানে লক্ষ্মীর ভান্ডারের মানেই হয় না। আর এই প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে যেমন তারকা বিধায়ক কাঞ্চনের প্রশ্ন ছিল সরকারি চাকুরেরা বেতন-বোনাস নেবেন তো? আমাদের শিল্পী যারা আছেন, তারা যারা সরকারি পুরস্কার ইত্যাদি নিয়েছিলেন তারা ফেরত দেবেন তো? বলুন ফেরত দিয়ে দিচ্ছি`। তেমনই কুণালের খোঁচা ছিল, ‘যাঁরা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার এবং রাজ্য সরকারের অন্যান্য স্কিমে থাকতে চান না, তাঁদের জন্য ফেরত দেওয়ার একটি ফর্ম দিক রাজ্য সরকার। ফেসবুকে বিকৃত বিপ্লবী না সেজে, ফেরত ফর্ম ফিল আপ করুন’!

কিন্তু অত কষ্ট আর কাউকে করতে হচ্ছে না। আপাতত যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সরকার নিয়ে নিয়েছে। অবশ্য এইসব দেখেশুনে কারোর কারোর প্রশ্ন, আদৌ লক্ষীর ভাণ্ডারের টাকা এবার অ্যাকাউন্টে ঢুকবে তো? সেপ্টেম্বারের প্রথমেই এলো বড় খবর। জানা যাচ্ছে, লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা এই মাসের ১ থেকে ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই পাওয়া যাবে৷ কিন্তু লক্ষীর ভান্ডারের টাকা ঢুকলেও, অন্যান্য স্কিমে যেভাবে ঝটকা দিচ্ছে রাজ্য সরকার তাতে অলরেডি বিরোধীদের হাতে শাসকদল তৃণমূলকে তুলোধোনা করার নতুন ইস্যু হাজির।

এমনিতেই দ্বাদশের সঙ্গে একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদেরও ট্যাব কিনতে টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নবান্ন জানানোর পরেই রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় এটাকে পড়ুয়াদের ‘ঘুষ’ বলে দাবি করেছিলেন। এখন টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল হয়েছে জানার পরে বিজেপি বলছে, ‘‘আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে স্কুল পডুয়ারাও আন্দোলনে। তাতেই ভয় পেয়ে আন্দোলন ভাঙার জন্য ঘুষ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। কিন্তু এই আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না, বুঝেই সরকার নাকি সিদ্ধান্ত বদলেছে। যদিও, তৃণমূল এসবের প্রতিবাদ করেনি। বন্ধ করেনি লক্ষীর ভান্ডারে টাকাও। কারণ হিসেবটা বুঝতে হবে। ‘দুর্নীতি’ হাতিয়ারে শান দিয়ে রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে এবারের লোকসভা নির্বাচনের লড়াইয়ে নেমেছিল বিজেপি। কিন্তু সেসব ধোপে টেকেনি। গত বিধানসভা ভোটের মতো এবারের লোকসভাতেও বাড়ির মা-বোনেদের প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট অংকের টাকা হাতখরচ দিয়ে রাজ্যের মহিলা ভোটারদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিল ‘মমতাময়ী’ সরকার। ভোটের ফলাফলে লক্ষীর ভান্ডারের বাজিমাত নিয়ে চারিদিকে কম আলোচনা হয়নি। তাই পরিস্থিতি যাই হোক, যে লোকের ভান্ডার মমতা সরকারের মাস্টার স্ট্রোক সেটাকে এত সহজে বন্ধ করা হবে না বলেই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের।

আবার পুজোর আগে সুবিধা বাড়ানো হলো সরকারি চাকুরেদের ও। রাজ্য অর্থ দফতরের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এতদিন অবধি সরকারি কর্মীদেরা ১৭টি অসুখের ক্ষেত্রে আউটডোরে চিকিৎসা করানোর খরচ দেওয়া হতো। হাসপাতালে ভর্তি না হলেও পেতেন এই খরচ। স্নায়ুরোগ চিকিৎসার খরচ তাঁদের দিত সরকার। তবে এবার থেকে সরকারি হেলথ স্কিমে নিউরোসাইকিয়াট্রিক বা স্নায়ুকোষজনিত মানসিক রোগের ট্রিটমেন্টের খরচও পাওয়া যাবে বলে জানানো হল। এখানে একটা কথা বলতে হচ্ছে, এতদিন অবধি হাসপাতালে ভর্তি হলেই চিকিৎসার খরচ পেতেন সরকারি কর্মীরা। তবে এই ধরণের অসুখের ক্ষেত্রে সবসময় হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় না। বাড়িতে রেখেও চিকিৎসা করা যায়। ফলত সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে অগুনতি সরকারি কর্মচারীর সুবিধা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই এখনই জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না সবক শেখাতেই পড়ুয়াদের টাকা দেওয়া বন্ধ করল মমতা সরকার। কারণ অন্য অনেক কিছুই হতে পারে। তবে কারো কারো মতে ৫ই সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে আরজিকার কান্ডের শুনানি রয়েছে। তারপরেই গোটা ছবিটা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে।।