ভাঙড়: পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন পর্বেই দেখা যাচ্ছে সন্ত্রাসের ভরকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ভাঙড়। একটানা বেলাগাম সন্ত্রাসের যে ছবি ভাঙড়ে দেখা গিয়েছে তাতে নির্বাচনের দিন কি হবে তা ভেবে প্রমাদ গুনছেন সাধারণ মানুষ। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে সেখানে। এই পরিস্থিতিতে তিনি খুন হয়ে যেতে পারেন এমন আশঙ্কা করছেন ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী। তাই কেন্দ্রের কাছে নিরাপত্তা চাইবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
ভাঙড় জুড়ে যে নজিরবিহীন সন্ত্রাস চলছে গত কয়েকদিন ধরে তার প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরের সামনে বিক্ষোভে সামিল হন নওশাদ। মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করেন তিনি। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ”আমাকে টার্গেট করে হামলা চালানো হচ্ছে। এর আগেও আমি রাজ্য সরকারের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছি, কিন্তু পাইনি। এবার আমি নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রের দ্বারস্থ হব৷”
এর আগে ভাঙড়ের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলেন নওশাদ। কিন্তু তাঁকে সময় দেননি মুখ্যমন্ত্রী। এরপর বৃহস্পতিবার ভাঙড়ের ঘটনার জন্য নাম না করে সরাসরি আইএসএফকেই দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার জন্য আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী যেভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারস্থ হওয়ার কথা বললেন, তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে আইএসএফ দলটি গঠিত হয়। নির্বাচনে ভাঙড়ে তৃণমূল প্রার্থীকে হারিয়ে দেন নওশাদ। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সমস্ত কেন্দ্রে জিতলেও শুধুমাত্র ভাঙড়ে পরাজিত হয়েছিল তৃণমূল। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই তাদের পরাজয় হয়েছিল, এমনটাই মত অনেকের। কিন্তু পরবর্তী সময় দেখা গিয়েছে ভাঙড় তথা পার্শ্ববর্তী এলাকা জুড়ে আইএসএফের ভিত ধীরে ধীরে মজবুত করেছেন নওশাদ। ৩০ বছরের নওশাদ এমএ পাস। সব সময় শালীনতা বজায় রেখে কথা বলেন তিনি। তৃণমূলকে আক্রমণ করার সময় যে ভাষা তিনি ব্যবহার করেন তাতে কোনও আপত্তিকর অর্থাৎ অপশব্দ থাকে না। কোনও সময়েই তাঁকে মেজাজ হারাতে দেখা যায় না। বিরোধী রাজনীতির ক্ষেত্রে এভাবেই নিঃসন্দেহে নতুন ধারা বা স্টাইল এনেছেন তিনি। যা আকৃষ্ট করছে রাজ্যবাসীকে।
সাধারণ মানুষের মধ্যে নওশাদের যে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে সেটা আড়ালে আবডালে স্বীকার করে নিচ্ছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের একাংশ। আর সেটাই চিন্তার কারণ হয়েছে শাসক দলের। দীর্ঘদিন ধরে ভাঙড়ে যেভাবে নিজের শাসন কায়েম করেছিলেন তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম, তা এবার হারাবার ভয় পাচ্ছেন তিনি। সেই কারণেই কি আইএসএফকে মনোনয়ন দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে? তাতেই কি রক্ত নদীর ধারা বইতে দেখা গিয়েছে ভাঙড় জুড়ে? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে।
সবচেয়ে বড় কথা যেভাবে সংঘর্ষের সময় কিছুক্ষণের মধ্যে ১৫ হাজার কর্মী জড়ো করে তৃণমূলের সঙ্গে সমানে পাল্লা দিয়েছে আইএসএফ, তা অবাক করেছে আরাবুল ইসলাম, শওকত মোল্লাদের। বস্তুত ভাঙড়ে আইএসএফ-এর শক্তি এতটা যে বেড়েছে সেটা বোধহয় তৃণমূলও বুঝতে পারেনি। রাজনৈতিক মহল মনে করছে ভাঙড়ে আইএসএফের উত্থানের প্রধান কারিগর নওশাদ। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভাঙড়ের ফলাফলের দিকে রাজনীতি সচেতন মানুষের যে সবচেয়ে বেশি নজর থাকবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।