কলকাতা: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আগেই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ বৃহস্পতিবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই৷ নিজাম প্যালেসে টানা ছ’ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হয় তাঁকে৷ শুক্রবার আগেই আদালতে তোলা হয়েছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতিকে৷ দুপুর ১২টা নাগাদ প্রেসিডেন্সি জেল থেকে আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয় প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও। এসএসসি নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় পার্থ এবং কল্যাণময় দু’জনকে হেফাজতে নিতে চাইছে সিবিআই। এদিকে এদিন আদালতে পাশাপাশি বসেছিলেন পার্থ ও কল্যাণ। হঠাৎ দেখা গেল খানিকটা ঝুঁকে কল্যাণময়কে কিছু একটা বলছেন পার্থ৷ কি মন্ত্র দিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী?
আরও পড়ুন- গরু পাচার মামলায় ফের কেষ্টর বাড়িতে সিবিআই হানা, জিজ্ঞাসাবাদ অনুব্রত-কন্যা সুকন্যাকে
পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিজেদের হেফাজতে চেয়ে আলিপুরে সিবিআই-এর স্পেশাল কোর্টে আবেদন জানিয়েছে সিবিআই৷ তাঁকে হেফাজতে পেলে কল্যাণময়ের মুখোমুখি বসিয়ে পার্থকে জেরা করতে চায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। অভিযোগ, এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতিতে কোটি কোটি টাকার খেলা হয়েছে৷ কল্যাণময়ের বিরুদ্ধে এসএসসি-র গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মী নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। বাগ কমিটির রিপোর্টে বলছে, উপদেষ্টা কমিটির কাছ থেকেই ভুয়ো চাকরির সুপারিশ যেত। তার ভিত্তিতেই স্কুলে চাকরির নিয়োগ দিত মধ্যশিক্ষা পর্ষদ৷ সেই সময় পর্ষদের শীর্ষপদে ছিলেন ওই কল্যাণময়ই।
২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অ্যাডহক কমিটির প্রশাসক পদে ছিলেন কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। ২০১৬ সালে তাঁকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি করা হয়৷ চলতি বছর ২২ জুন সভাপতি পদে তাঁর মেয়াদ শেষ হয়। পাশাপাশি, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের তৈরি উপদেষ্টা কমিটিরও অন্যতম সদস্যও ছিলেন তিনি। শুক্রবার সিবিআই-এর আইনজীবী আদালতে জানান, পার্থ চট্টোপাধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন নিয়োগ দুর্নীতি হয়েছে। তিনিই এই দুর্নীতির ‘মাস্টারমাইন্ড’। তবে এই দুর্নীতিতে অনেকেই জড়িত ছিলেন৷
এসএসসি নিয়োগে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগে প্রায় দু’মাস বন্দি রয়েছেন পার্থ। ইডি-র হেফাজত থেকে আপাতত তাঁর ঠিকানা প্রেসিডেন্সি জেলে। তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ অভিনেত্রী অর্পিতা মপখোপাধ্যায়ের দুটি ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে নগদ প্রায় ৫০ কোটি টাকা উদ্ধার করে ইডি৷ অর্পিতার দাবি এই টাকা তাঁর নয়৷ সবটাই পার্থের৷ এদিকে ইতিমধ্যে একাধিক বার জামিনের আবেদন করেছেন পার্থ। কিন্তু প্রতিবারই তা খারিজ হয়ে গিয়েছে। উল্টে তাঁকে হেফাজতে চেয়েছে সিবিআই৷ এরই মধ্যে গ্রেফতার হন কল্যাণময়৷ শুক্রবার তিনি আদালতে বলেন, এসএসসি স্বশাসিত সংস্থা৷ সেখান তাঁর কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না৷ তাঁর স্ক্যান করা সই ব্যবহার করা হয়েছে৷ নিজে কোনও নিয়োগপত্রে সই করেননি৷
এদিকে শুক্রবার আদালতে পেশ করা হলে পার্থ জানান, তিনি ২৮টি ওষুধ খান৷ খুবই অসুস্থ৷ তাঁকে জামিন দেওয়া হোক৷ তৃণমূল বিধায়ক আরও বলেন, ‘আমি রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র, এমবিএ, ডক্টরেট করেছি৷ পরিবারের সবাই উচ্চশিক্ষিত৷’’ তবে ইডি-র দাবি, তদন্ত যে পর্যায়ে রয়েছে তাতে এই মুহূর্তে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জামিন দেওয়া হলে তদন্ত প্রক্রিয়া ব্যহত হতে পারে৷ ২০১৯ সালের পর থেকে বিপুল পরিমাণে অযোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে৷ এর পিছনে একটা চক্র কাজ করেছে৷ একটি বড়সড় চক্রান্ত হয়েছে৷ যার মাথায় ছিলেন পার্থ৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>