কলকাতা: ‘আমার বাড়িতে টাকা রাখা থাকলেও, সেই টাকায় হাত দেওয়ার অধিকার একমাত্র পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর সঙ্গী সাথীদেরই ছিল। আমার ফ্ল্যাটের একটি ঘরে থাকত ওই সমস্ত টাকা। কিন্তু ওই ঘরে প্রবেশের অধিকার আমার ছিল না।’ গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবারই জানা গিয়েছিল ইডির চাপে মুখ খুলেছেন পার্থঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। একে একে ইডি আধিকারিকদের তথ্য দিতে শুরু করেছেন তিনি। এর মধ্যেই সামনে এল অর্পিতার কিছু চাঞ্চল্যকর দাবি।
জানা যাচ্ছে, অর্পিতা মুখোপাধ্যায় ইডি আধিকারিকদের জানিয়েছেন, রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় তাঁর বাড়িটিকে ‘মিনি ব্যাঙ্ক’ হিসাবে ব্যবহার করতেন। তিনি আরো জানিয়েছেন, ওই সমস্ত টাকা ব্যবহার তো দূরস্ত, টাকায় হাত দেওয়ার অধিকার পর্যন্ত তাঁর ছিল না। ইডি সূত্রে আরও খবর, ইতিমধ্যেই অর্পিতার পক্ষের আইনজীবী এই সমস্ত তথ্যকে সামনে রেখেই আগামী শুনানিতে তাঁর জামিনের জন্য লড়াইয়ে নামবেন।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার এই অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বহুতল থেকেই উদ্ধার হয়েছে কোটি কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, এই টাকা এসএসসি দুর্নীতি মামলার টাকা এবং এই দুর্নীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী তথা বর্তমান শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। এরপরেই পার্থ এবং অর্পিতাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। আপাতত ৩ আগস্ট পর্যন্ত তাঁরা দুজনেই ইডির হেফাজতে থাকবেন। গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার থেকেই পার্থ এবং অর্পিতাকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু হয়েছে।
ইডি সূত্রে আরো খবর, অর্পিতা মুখোপাধ্যায় দাবি করেছেন প্রতি সপ্তাহে কিংবা প্রতি ১০ দিন অন্তর মন্ত্রী তাঁর বাড়িতে যেতেন। কিন্তু কোনদিনও পার্থ প্রকাশ করেননি যে ওই ঘরে কত টাকা রয়েছে। অর্পিতা জানিয়েছেন, ২০১৬ সাল থেকে পার্থ এবং অর্পিতার ঘনিষ্ঠতা। এক বাঙালি অভিনেতার মারফত পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়েছিল। তিনি আরো জানিয়েছেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিজের হাতে কখনোই কোন টাকা ওই ফ্ল্যাটে নিয়ে আসেননি। সমস্ত টাকাই আসত তাঁর সঙ্গী-সাথীদের মারফত। এছাড়া ইতিমধ্যেই জানা গিয়েছে ইডির আধিকারিকরা অর্পিতার বাড়ি থেকে একটি কালো ডাইরি উদ্ধার করেছেন। ওই ডাইরিতে কি রয়েছে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে তদন্ত। তবে তদন্তকারী অফিসারদের সন্দেহ, ওই ডায়েরির প্রতিটা পাতাতেই দুর্নীতির টাকার বিস্তারিত হিসাব লিখে রাখতেন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়।