নিজস্ব প্রতিনিধি: বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে হিন্দুত্ববাদী প্রচারকে আরও উচ্চগ্রামে নিয়ে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নির্বাচনে মেরুকরণের লক্ষ্যেই মোদি সেভাবে প্রচার করেছেন বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল। বিহার থেকে উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজস্থান, কর্ণাটক থেকে মহারাষ্ট্র, বিভিন্ন জায়গায় জনসভা করতে গিয়ে চড়া সুরে ‘হিন্দুত্ব লাইনে’ প্রচার করতে দেখা গিয়েছে মোদিকে। তবে তৃতীয় দফা নির্বাচনের ঠিক আগে একটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে মুসলিম সমাজকে বিশেষ বার্তা দিয়েছেন, তা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ বিষয়টিকে প্রধানমন্ত্রীর ‘সুর বদল’ বলেই চিহ্নিত করতে চাইছেন। তবে কী নির্বাচনে অন্য রকম কিছু হতে পারে এমন আশঙ্কা করে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলছেন? বুঝতে পারছেন শুধুমাত্র হিন্দু ভোটের উপর ভর করে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না? তবে কী হাত থেকে ম্যাচ বেরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন? এই জল্পনা কিন্তু থেমে থাকছে না।
ওই সাক্ষাৎকারে মোদি বলেছেন, “মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে এই প্রথম বার আমি আবেদন করে বলছি আপনারা আত্মসমীক্ষা করুন। নিজেদের সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করুন। কেন আপনারা আজ এত পিছিয়ে রয়েছেন, দুর্দশার মধ্যে রয়েছেন, সেটা ভাবুন। আপনাদের এই অবস্থার জন্য কংগ্রেস দায়ী নয়তো? আমার আবেদন, বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। বিজেপি পার্টি অফিসে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। মনে কোনও ভুল ধারণা থাকলে সেটা দূরে সরিয়ে দিন। আপনাদের কেউ তাড়িয়ে দেবে না।”
উল্লেখ্য তিন দফায় দেশের প্রায় অর্ধেক আসনে ভোটগ্রহণ হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘু সমাজকে মোদি যে বার্তা দিলেন তা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ বিগত বেশ কিছুদিন ধরে প্রধানমন্ত্রী ‘হিন্দুত্ব লাইনে’ বক্তব্য রাখছিলেন বলে রাজনৈতিক মহল মনে করে। কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের বিরুদ্ধে তোষণের অভিযোগ তুলে বারবার সরব হয়েছেন তিনি। মহিলাদের গলার মঙ্গলসূত্র খুলে কংগ্রেস সেটি বিক্রি করে দেবে, এমন অভিযোগও করতে শোনা গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীকে। অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যে রামনবমী শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয় না, এমন অভিযোগও করতে শোনা গিয়েছিল তাঁকে।
সেই জায়গায় আরও চার দফা নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে সংখ্যালঘুদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করার আহ্বান জানালেন, তা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে। যথারীতি বিষয়টি নিয়ে বিরোধীরা কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না। তাঁরা কটাক্ষ করে বলছেন, পরিস্থিতি বেগতিক বুঝেই এখন সুর বদলাতে বাধ্য হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যদিও গেরুয়া শিবিরের দাবি প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনও দিন জাত-ধর্ম-বর্ণ দেখেননি। তবে বিজেপি যে দাবিই করুক না কেন, মোদির সুর বদল নিয়ে চর্চা কিন্তু থেমে থাকছে না।