আগুন নিভছে না (RG Kar Mahalaya Protest)
কলকাতা : ফের জুনিয়র ডাক্তারদের পূর্ণ কর্মবিরতি, পুজোর মধ্যেই ফের শুরু রাত দখল? আগুন নিভছে না, অস্বস্তি বাড়ছে শাসকদল তৃণমূলের! প্রতিবাদ যত বাড়বে, ততই কি মুখ পুড়বে রাজ্য সরকারের? নিজেদের মুখ রক্ষায় কড়া কোনও ব্যবস্থা নেবে নবান্ন? নাকি গণবিদ্রোহে উল্টে যাবে সরকার?
দ্বিতীয় দফায় পূর্ণ কর্মবিরতিতে জুনিয়র চিকিৎসকরা। রাজ্য সরকারের অনুরোধ, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কোনও কিছুকেই গ্রাহ্য না করে জুনিয়র ডাক্তারদের স্পষ্ট বক্তব্য, কর্মস্থলে চিকিৎসকদের কোনও নিরাপত্তা নেই। যার জেরে সাগরদত্ত, রামপুরহাট এমনকি গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটছে। তাই যতদিন না নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে, ততদিন চলবে এই আন্দোলন। তাহলে কী এই সূত্র ধরেই উৎসবের মাঝে গোটা রাজ্যের বুকে ফের প্রতিবাদের আগুন জ্বলবে?
আরজিকরের ঘটনার প্রতিবাদে জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রথম দফার কর্ম বিরতি, তারপর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক। দাবি মেনে নেওয়া, প্রতিশ্রুতি দেওয়া। এবং জুনিয়র চিকিৎসকদের কাজে ফেরা। এই গোটা বিষয়টা দেখে শুনে যেমন সেই সময় কারো কারো মনে হয়েছিল, সরকার চাপে পড়ে জুনিয়র চিকিৎসকদের সব দাবি মেনে নিচ্ছে এবং সেই মতোই সব দাবি পূরণ করা হবে। তেমনি কারো কারো আবার এটা মনে হয়েছিল, যে জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি আরজিকর কান্ডের প্রতিবাদের আগুনকে নিভতে দিচ্ছে না। সেটা বুঝতে পেরেই রাজ্য সরকার জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি-দাওয়া মেনে যেন তেন ভাবে জুনিয়র চিকিৎসকদেরকে কাজে ফেরাতে চাইছে। রাজ্য সরকারের কি ভাবনা, কি প্ল্যান সেই বিতর্কে আমরা যাচ্ছি না। কিন্তু বাস্তবে অনেক টালবাহানার পর জুনিয়র চিকিৎসকরা কাজে ফিরেছিলেন। তবে তাতেও সম্পূর্ণ অস্বস্তি কিন্তু কমেনি রাজ্য সরকারের।
রাজ্য সরকারকে আরও বেশি করে চাপের মুখে (Protest Demands Justice)
রাত দখল, পথ দখল, দিন দখল কর্মসূচি সাময়িকভাবে থেমে গেলেও; এই ঘটনা ঘিরে তদন্ত, আদালতের শুনানি, চারিদিকে লেখালেখি, একের পর এক তথ্যের ভিত্তিতে খবর। এগুলো চলেইছে। একইসঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় একের পর এক দুর্নীতি, থ্রেট কালচার, উত্তরবঙ্গ লবি বারবার এই শব্দগুলো ঘুরেফিরে এসেছে।
তাই এটা খুব পরিষ্কার যে আন্দোলনের আঁচ, প্রতিবাদের আগুন সম্পূর্ণভাবে বাংলার বুকে নিভে যায়নি। আর পুজোর মুখে কার্যত সেই আগুনেই ঘি ঢাললো ফের জুনিয়র চিকিৎসকদের পূর্ণ কর্মবিরতিতে বসার ঘটনা।
সুরক্ষা না পেলে কাজ নয়, এই মর্মে ফের পূর্ণ কর্মবিরতিতে ফিরলেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা।কর্মবিরতিতে থাকার সময়ও দোষ জুনিয়র চিকিৎসকদের, আবার কাজ করলেও দোষ জুনিয়রদের। তাহলে আমরা কী করব? এই প্রশ্ন তুলে মোট দশ দফা দাবিকে সামনে রেখে ১ লা অক্টোবর পুজোর মাস থেকে ফের পূর্ণ কর্মবিরতিতে সামিল জুনিয়র চিকিৎসকরা। ৪২ দিন পর তাঁদের যে কর্মবিরতি আংশিক উঠেছিল, সেই কর্মবিরতি আবারও শুরু হল। আর দুর্গা পূজার মুখে কার্যত এই ঘটনাই রাজ্য সরকারকে আরও বেশি করে চাপের মুখে ফেলে দিল বলে মনে করা হচ্ছে। তাহলে কি যে ভয়টা পেয়েছিল রাজ্য সরকার এবার সেটাই ঘটবে?
পুজোর মাঝেও চলবে প্রতিবাদ আন্দোলন (Citywide Outrage on Mahalaya)
অলরেডি, মণ্ডপে মণ্ডপে শেষবেলার ব্যস্ততা শুরু হয়েছে। অনেকেই নেমে পড়েছেন কেনাকাটায়। পুজো আসছে। আর পুজোর এই চেনা ব্যস্ততার মধ্যেই এক অন্য পুজোর সন্ধানে প্রতিবাদীরা। উৎসবে মানুষ ফিরুন বা না ফিরুন, তাঁরা চাইছেন উৎসবেই জড়িয়ে থাকুক আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদ। তাই একাধিক পরিকল্পনা চলছে শহর-শহরতলির নানা প্রান্তে।
হ্যাঁ পুজোর মাঝেও চলবে প্রতিবাদ আন্দোলন। ইতিমধ্যেই শহর-শহরতলির অনেকগুলো প্রতিবাদের জায়গা ‘তিলোত্তমা চত্বর’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন প্রতিবাদীরা। পুজোর সময়ে সেই সব জায়গার যেখানে সম্ভব, সেখানে জমায়েত হবে। যাদবপুর এইট-বি বাস স্ট্যান্ড রাতদখল থেকে একের পর এক প্রতিবাদের সাক্ষী। সেখানেও পুজোর চার দিন নানা সাংস্কৃতিক প্রতিবাদী জমায়েতের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিবাদ শুরু হবে একেবারে দেবীপক্ষের সূচনা থেকেই।
দেবীপক্ষের সূচনার আগের দিন রাতেই ফের আরজি করের ঘটনার বিচার চেয়ে পথে নামতে চলেছে মানুষ। যে মিছিলে থাকার কথা এরাজ্যের বিশেষ ব্যক্তিত্বদের। সেসবিষয়ে দুদিন আগে মুখ খোলেন শ্রীলেখা মিত্র, রুদ্রনীল ঘোষ, পায়েল সরকার, কৌশানী মুখোপাধ্যায়, লহমা ভট্টাচার্যরা। উৎসবের আবহেও আর জি কর কান্ডকে ভুলে যায়নি গোটা রাজ্য, তাইতো ন্যায় বিচারের প্রার্থনা দেবীপক্ষে। দেবীপক্ষের আগে আবারও কলকাতায় জ্বলবে প্রতিবাদের আগুন। মহালয়ার আগের রাতে ও ভোরে ফের পথে নামবে শহরবাসী। শুধু কলকাতা নয়, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে রাত-ভোর দখলে সামিল হবেন শহরবাসী।
পুজোতেও অভয়ার জন্য পথে থাকার সিদ্ধান্ত জুনিয়র চিকিৎসকদের। না শুধু কর্মবিরতি নয়। সুবিচারের দাবিতে, মহালয়ার ভোর ও অষ্টমীর রাত দখলের ডাক জুনিয়র ডাক্তারদের। আগের মতোই এবারও যাতে সবমহলের মানুষ এই ডাকে সাড়া দেন সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে। অতএব প্রতিবাদের আগুন স্তিমিত হওয়া তো দূরের কথা, ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা বরং জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরোধীতে ফেরার ঘটনা এই আন্দোলনকে আরো বেশি উসকে দিল।
নির্যাতিতা যাতে দ্রুত ন্যায়বিচার পান (Justice)
দাবি সবার একটাই নির্যাতিতা যাতে দ্রুত ন্যায়বিচার পান। কিন্তু এই ন্যায় বিচারের দাবি একাধিক ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের ভুল ত্রুটিকে জানো আরো বেশি করে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। এই আন্দোলন এই প্রতিবাদ যেন শাসক দল তৃণমূলকে কোণঠাসা করতে আরও বেশি করে হাতিয়ার তুলে দিচ্ছে বিরোধীদের হাতে। মানুষ যত পথে নামছে ততই যেন মুখ পুড়ছে রাজ্য সরকারের।
আর মমতা সরকারের উইক পয়েন্টকে যেন প্রতিবাদী ও আন্দোলনকারীদের সামনে পুজোর মুখে আরো সাজিয়ে গুছিয়ে প্রেজেন্ট করল, জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি মেনেও প্রতিশ্রুতি পালন না করার অভিযোগ। কিন্তু দেবী পক্ষ থেকে পূজা পর্যন্ত একের পর এক প্রতিবাদ কর্মসূচি পথে নেমে মিছিল জমায়েত এগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের মুখ বাচাতে আদৌ কি কোন পদক্ষেপ করবে নবান্ন? অনেকেই বলছেন জুনিয়র চিকিৎসকদের দস্তাফা দাবি মেনে নেওয়া রাজ্য সরকারের জন্য এই মুহূর্তে অনেকটাই সেফ হতে পারে, তাহলে কি সেই পথেই হাঁটবে রাজ্য? একেবারে উৎসব, দুর্গাপুজো। এর মধ্যেই এই প্রতিবাদ মুখর বাংলাকে কিভাবে সামাল দেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? খুব ভেবেচিন্তে পা ফেলতে হবে, একটা ভুল সিদ্ধান্ত পুরো খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারে, মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
নাহলে, গণঅভ্যুত্থান, গণবিদ্রোহ, নবান্ন অভিযান ফের একবার এগুলোর মুখে পড়ে গেলে এবার উঠে দাঁড়াতে পারবে তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার? তক্কে তক্কে রয়েছে বিজেপি! তবে পলিটিক্স নয়, একমাত্র মানবিকতার গ্রাউন্ড থেকে নেওয়া সিদ্ধান্তই কন্ট্রোলে আনতে পারে গোটা সিচুয়েশনকে। তাহলে এবার কিসের কথাই হাঁটবে রাজ্যের শাসক দল?
আরও পড়ুন..
প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি রাজ্য? ৭ দাবিতে চিঠি জুনিয়র ডাক্তারদের
‘মানুষের মুখে হাসি না থাকলে..’ শ্রীভূমি থেকেই উৎসবের সূচনা মমতার
Bengal – RG Kar Mahalaya Protest : Thousands demand justice for trainee doctor killed at RG Kar Medical College, protesting for safety and accountability on Mahalaya.