পেট চালানোই দায়! সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই কাজ করতে মরিয়া যৌনকর্মীরা

পেট চালানোই দায়! সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই কাজ করতে মরিয়া যৌনকর্মীরা

কলকাতা:  বছর দুই আগে আচমকা ঝোড়ো হাওয়ার মতো সাধারণ মানুষের জীবনধারা পুরো ওলট পালট করে দিয়েছিল করোনা ভাইরাস৷ মারণ ভাইরাস রুখতে দেশ জুড়ে লাগু হয় লকডাউন৷ যার ধাক্কায় ভেঙে পড়ে দেশের অর্থনীতি৷ কাজ হারান বহু মানুষ৷ লকডাউনের সেই ধাক্কায় কার্যত ভেঙে পড়েছিল যৌনকর্মীদের জীবনও৷ রোজগার একেবারে বন্ধ হয়েছিল৷ পেট চালাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছিল তাঁদের৷ সেই অভিশপ্ত দিনগুলো আর ফিরে পেতে চান না যৌনকর্মীরা৷ তাই কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ের মাঝে দাঁড়িয়েও ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত তাঁরা৷ সংসার চালানোর মতো রোজগারটুকু যেন বন্ধ না হয়, এটুকুই প্রার্থনা তাঁদের৷ 

আরও পড়ুন- রাজ্য জুড়ে বৃষ্টির ইঙ্গিত, মেঘ কাটতেই শুরু হবে শীতের ইনিংস, বলছে হাওয়া অফিস

২০২০ সালে লকডাউন শুরু হওয়ার পর পেট বাঁচাতে অনেকেই ভিন্ন পেশার সন্ধানে পা বাড়িয়েছিলেন৷ কেউ কেউ আবার ফিরে গিয়েছিলেন নিজেদের বাড়িতে৷ কিন্তু সেখানে ফিরে মিলেছে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা৷ পদে পদে হেনস্থা হতে হয়েছে৷ গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হতে হয়েছে তাঁদের৷ তবে ২০২১-এ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়৷ দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে কিছুদিন লকডাউন থাকলেও তা যৌনপল্লীতে বিশেষ প্রভাব ফেলেনি৷ এর পর ধীরে ধীরে পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিকের পথে এগোচ্ছিল তখন থাবা বসাল তৃতীয় ঢেউ৷ কমেছে খদ্দের৷ ফের কমতে শুরু করেছে উপার্জন৷ তবে যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা ‘দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতি’র সেক্রেটারি ও যৌনকর্মী কাজল বসু বলেন, ‘‘রোজগার কমেছে ঠিক কথাই, তবে সোনাগাছি চলছে৷’’

কিন্তু কী ভাবে? কাজল জানান, যৌনকর্মীদের জন্য তৈরি ঊষা মাল্টিপারপাজ কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে অনেকেই এতদিন ধরে নিজেদের সঞ্চিত টাকা জমা করেছিলেন৷ প্রয়োজনে সেই টাকা তুলে তাঁরা সংসার চালাচ্ছেন। আর যাঁরা সঞ্চয় করতে পারেননি, তাঁরা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই কাজ করে চলেছেন। মাস্ক পরা ও স্যানিটাইজার ব্যবহারের জন্য বারবার প্রচার চললেও, ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকা যৌনপল্লিতে দূরত্ব-বিধি মেনে চলা এক কথায় অসম্ভব। তাই সংক্রমণও ছড়াচ্ছে। জ্বর-সর্দি-কাশির মতো উপসর্গ দেখা দিলেই ওষুধ খেয়ে নিজেদের সামাল দিচ্ছেন যৌনকর্মীরা৷ 

দুর্বারের প্রেসিডেন্ট বিশাখা জানিয়েছেন,  শুধু সোনাগাছিই নয়, কালীঘাট-খিদিরপুর-বৌবাজার সর্বত্র যৌনপল্লীর রোজগার কমেছে। এর মধ্যেও নতুন মেয়েদের সংখ্যাও বাড়ছে। পরিচারিকার কাজ হারিয়ে বাধ্য হয়ে অনেকে এই পেশায় ফিরেছেন৷ তবে বহু মানুষ ও সংগঠন এই কঠিন পরিস্থিতিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন৷ সেটাও যৌনপল্লীর মেয়েদের কাছে বড় পাওনা৷ 
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 + seventeen =