নিজস্ব প্রতিনিধি: ইমাম-মোয়াজ্জেমদের সমাবেশ থেকে সিপিএম-কংগ্রেসকে ফের নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্পষ্ট বুঝিয়েছেন কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে তিনি অন্যভাবে চললেও পশ্চিমবঙ্গে একলাই লড়বেন, এবং তাঁর দলকেই ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অর্থাৎ জোট তত্ত্ব পশ্চিমবঙ্গের মানতে রাজি নন তিনি। বিজেপি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম এবং কংগ্রেসকে কাজে লাগাতে চাইছে, এমন অভিযোগ ফের করেছেন মমতা।
মমতার এমন বক্তব্যে বিরোধী জোটে ফাটল ধরতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। এই পরিস্থিতিতে জেলায় জেলায় সিপিএমের একাংশের সঙ্গে বিজেপির যেভাবে বোঝাপড়া গড়ে উঠেছে তা চিন্তায় ফেলে দিয়েছে আলিমুদ্দিনকে। পূর্ব মেদিনীপুরের পাশাপাশি বেশ কিছু জেলায় পঞ্চায়েতে বোর্ড গড়তে বিজেপিকে সমর্থন করেছেন স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব, এমনটাই অভিযোগ। মুখ্যমন্ত্রীও এই অভিযোগ করেছেন। ইতিমধ্যেই পূর্ব মেদিনীপুরের কোথায় কোথায় এমনটা ঘটনা ঘটেছে তা খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়ার পথে হাঁটছে আলিমুদ্দিন, এমনটাই সূত্রের খবর। স্বাভাবিকভাবেই বিরোধীদের জোট কিছুটা হলেও হোঁচট খেতে শুরু করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। শুধু সিপিএম নয়, একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে রাজ্য কংগ্রেসের মধ্যেও। ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের আইনজীবী নেতা তথা দলের অন্যতম মুখপাত্র কৌস্তভ বাগচী প্রকাশ্যে তৃণমূলের সঙ্গে এক মঞ্চে থাকার বিরোধিতা করেছেন। বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোটে তৃণমূল থাকলে কংগ্রেসের সেখানে থাকা উচিত নয়, এমনটাই দাবি করেছেন তিনি। কৌস্তভের এমন বক্তব্যের পর তাঁর বিরুদ্ধে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিলেও তিনি পাল্টা বলেছেন তিনি কোনও কিছুকেই কেয়ার করেন না। কৌস্তুভের পাশাপাশি কংগ্রেসের নীচুতলার কর্মী-সমর্থকদের একটা বড় অংশের এই একই দাবি রয়েছে। সব মিলিয়ে এটা স্পষ্ট জোটের তাল কাটতে শুরু করেছে।
তাই প্রশ্ন, এই অবস্থা কীভাবে সামাল দেবেন জোট নেতৃত্ব? কিছুদিন আগেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী তৃণমূল সম্পর্কে সুর কিছুটা হলেও নরম করেছিলেন। আর সমস্যার সূত্রপাত তখন থেকেই। বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেসের নীচুতলার নেতাকর্মীদের কাছে অন্য বার্তা গিয়েছে বলেই রাজনৈতিক মহল মনে করছে। আর পরিস্থিতি এমন হতে পারে সেটা আগেভাগেই আঁচ করে রাজ্য সিপিএম নেতৃত্ব জেলায় জেলায় গিয়ে নেতাকর্মীদের বিষয়টি বোঝানোর কাজ শুরু করে দিয়েছেন। আলিমুদ্দিনের ব্যাখ্যা, কেন্দ্রীয় স্তরে যা কিছু হতেই পারে। কিন্তু রাজ্যে বিজেপি ও তৃণমূলের সঙ্গে সিপিএমের লড়াই আগের মতোই চলবে। তবে তাতে কতটা কাজ হবে সেটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে আলিমুদ্দিনের। ঘটনা হল পঞ্চায়েতে বিজেপির থেকে কিছুটা হলেও ভোট বামেদের দিকে ফিরেছিল। তাই আলিমুদ্দিনের আশঙ্কা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেটা আবার গেরুয়া শিবিরের দিকে চলে যেতে পারে।এই আবহের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে ফের বাম- কংগ্রেসকে নিশানা করেছেন তাতে জোট রাজনীতি আগামী দিনে কোন দিকে মোড় নেয় এখন সেটাই দেখার।