অভিনব কায়দায় ডিজিটাল প্রতারণার ফাঁদ, পা দিলেই সর্বনাশ

অভিনব কায়দায় ডিজিটাল প্রতারণার ফাঁদ, পা দিলেই সর্বনাশ

কলকাতা: সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে ডিজিটাল প্রতারণা৷ এমন কৌশলে প্রতারণার ফাঁদ পাতা হচ্ছে যা সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানায়৷ বোঝার ভুলে ঘোল খেতে পারে সাবধানী মানুষও৷ এমনই ভাবে ফাঁদে পা দেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ অধ্যাপিকা৷ অভিযোগ, জামতাড়া গ্যাংয়ের পাল্লায় পড়ে লক্ষাধিক টাকা খুইয়েছেন তাঁরা৷ এর পর অনেক কষ্টে জামতাড়া থেকে প্রদীপ বাউড়ি ও মিলন দান নামে দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ কিন্তু কী ভাবে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিল অপরাধীরা? 

আরও পড়ুন- সোশ্যাল মিডিয়ায় সেক্সটরশনের ফাঁদ! ভুল পদক্ষেপ করলেই সমূহ বিপদ

পুলিশ সূত্রে খবর কেওয়াইসি আপডেটের নামে প্রতারকরা মোবাইল ফোনে একটি লিঙ্ক পাঠায়৷ সেই লিঙ্কে ক্লিক করতেই অ্যাকাউন্ট ফাঁকা৷ পুলিশ জানাচ্ছে, অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে ওই তিন অধ্যাপিকার অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য দুটি অ্যাকাউন্টে টাকা সরিয়ে দেন প্রতারকরা৷ সাইবার বিশেষজ্ঞের কথায়, কী লগার্স এবং ট্রোজেন্স দুটি দিনিস থাকে৷ আপনি কোন কোন কী টাইপ করছেন তার উপর নজর রাখে এই কী লগার্স৷ আর ট্রোজেন আপনার মোবাইলের উপর কন্ট্রোল নেয়৷ ফলে আপনি যে যে ব্যাঙ্কিং অ্যাপগুলো অপারেট করছেন, যে ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড টাইপ করছেন, সবটাই প্রতারকের হাতে চলে যাচ্ছে৷ 

অপর এক সাইবার বিশেষজ্ঞ অভিষেক মিত্র বলেন, ‘যখনই কোনও লিঙ্কের মাধ্যমে কোনও অ্যাপলিকেশন ডাউনলোড করছেন তখন ৮০-৯০ শতাংশ আপনি অসুরক্ষিত হয়ে পড়ছেন৷’ এমনও দেখা দিয়েছে ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং বা মোবাইলে আসা অচেনা লিঙ্ক না খোলা সত্ত্বেও অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উধাও হয়ে যাচ্ছে৷ পুলিশ সূত্রে খবর, শ্রীরামপুর কলেজের এক অধ্যাপক শমীক রায়ের তিনটি ব্যাঙ্কের পাঁচটি অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে ৬০ হাজার টাকার বেশি৷ অথচ ফোনে কোনও ওটিপি পাঠানো হয়নি৷ টাকা কেটে নেওয়ার কোনও এসএমএস-ও ঢোকেনি৷ ওই অধ্যাপক জানান, তাঁদের কাছে কোনও লিঙ্ক আসেনি, ওটিপি আসেনি, কেওয়াইসি আপডেটের জন্য ফোন আসেনি৷ কিন্তু পাসবই আপডেট করতে গিয়ে দেখেন টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে৷

অধ্যাপক জানিয়েছেন, হাওড়া সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ায় তাঁর ও তাঁর মায়ের নামে দুটি পৃথক অ্যাকাউন্ট রয়েছে৷ ২০ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বরের মধ্যে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে দফায় দফায় ২৩ হাজার ২০০ টাকা তোলা হয়েছে৷ ২ নভেম্বর থেকে ১৭ নভেম্বরের মধ্যে তাঁর মা কল্পনা রায়ের অ্যাকাউন্ট থেকে তোলা হয়েছে ১৬ হাজার টাকা৷ বিষয়টি গোচরে আসতেই অভিযোগ জানান ওই অধ্যাপক৷ ১৮ নভেম্বর হাওড়া সাইবার ক্রাইম থানাতেও অভিযোগ দায়ের করেন তিনি৷ অধ্যাপক জানান, পাসবই আপডেট করার সময় দেখেন, টাইমস অফ মানি ইউনিমোনি এন্টারপ্রাইজ নামে এক সংস্থার অ্যাকাউন্টে ওই টাকা ঢুকেছে৷ 

তবে এখানেই খান্ত হননি প্রতারকরা৷ এর পর স্টেট ব্যাঙ্কে অধ্যাপকের সেলারি অ্যাকাউন্টের দিকে হাত বাড়ায় তারা৷ ১৭ থেকে ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে ১২ হাজার ৮০০ টাকা লোপাট করা হয়েছে  পেটিএম, গুগল রাসার্চের নামে৷ একই নামে ওই অধ্যাপকের শাশুড়ির অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে ৫ হাজার টাকা৷  নিজে থেকেই মোবাইে ডাউনলোড হচ্ছে পেটিএম৷ নিজে থেকেই অন হয়ে যাচ্ছে হটস্পট৷  কী ভাবে সম্ভব? বলা হচ্ছে আপনি এমন কোনও একটি অ্যাপ যদি ডাউনলোড করেন, যেটা সম্পূর্ণ স্পাইওয়্যার, তাহলে ওই মোবাইলের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যাবে হ্যাকাররা৷ মোবাইলে যা খুশি করতে পারবে তারা৷

  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen + ten =