কলকাতা: আরজি কর-কাণ্ডের আবহে ধর্ষণের মতো অপরাধের ক্ষেত্রে কঠোরতম শাস্তি দিতে নতুন বিল এনেছে রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের আনা ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’য় ধর্ষণের শাস্তির কথা উল্লেখ থাকলেও, আরও কড়া আইন আনতে চাইছে রাজ্য৷ কিন্তু প্রশ্ন হল, ‘‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’-র সঙ্গে ‘অপরাজিতা নারী এবং শিশু সংশোধনী বিল’-এর পার্থক্য কোথায়?
দুটি ক্ষেত্রে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে-
১। ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ক্ষেত্রে ১০-২০ বছর কারাদণ্ড, যা অপরাধের নিরিখে যাবজ্জীবনও হতে পারে। সঙ্গে জরিমানাও ধার্য করা হয়েছে৷ কিন্তু রাজ্যের সংশোধনী বিলে ধর্ষণের সাজা জরিমানা সহ- আমৃত্যু কারাদণ্ড। ক্ষেত্র বিশেষে মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে৷
২। সংশোধনী বিলে বলা হয়েছে-জরিমানার টাকায় নির্যাতিতার চিকিৎসা, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। বিশেষ আদালতের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সেই জরিমানার টাকা দিতে হবে, যেমনটা ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা ২০২৩-এর ৪৬১ ধারায় উল্লেখ করা রয়েছে।
৩। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৫ ধারা একেবারেই সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে ‘অপরাজিতা মহিলা এবং শিশু (পশ্চিমবঙ্গ অপরাধ আইন সংশোধনী) বিল ২০২৪’-এ। পাশাপাশি ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৬, ৭০, ৭১, ৭২, ৭৩, ১২৪ ধারাতেও বদল আনার প্রস্তাব আনা হয়েছে৷
৪। নির্যাতিতার মৃত্যু হলে, ভারতীয় ন্যায় সংহিতা অনুযায়ী ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ক্ষেত্র বিশেষে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের সাজার কথা বলা হয়েছে৷ অপরাজিতা বিলে সেই শাস্তি বাড়িয়ে জরিমানা-সহ প্রাণদণ্ড বলা হয়েছে৷
৫৷ অ্যাসিড আক্রমণের ক্ষেত্রে ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ক্ষেত্র বিশেষে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও জরিমানার শাস্তির বিধান রয়েছে। অপরাজিতা বিলে বলা হয়েছে, অ্যাসিড হামলায় অপরাধীর আমৃত্যু কারাদণ্ড, ক্ষেত্র বিশেষে প্রাণদণ্ডেও দণ্ডিত করা হতে পারে।
৬৷ ধর্ষণের মামলায় যতটা সম্ভব মহিলা অফিসারদের দিয়েই তদন্ত করানো হবে। তদন্তে কোনও সরকারি আধিকারিক বা কারও সাহায্য চাওয়া হলে, তাঁকে দ্রুত ও সর্বোতভাবে সহযোগিতা করতে হবে। কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে তদন্তে দেরি করাতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকেও ৬ মাস কারাবাস করতে হবে৷ সেই সঙ্গে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানাও গুণতে হবে৷
এছাড়াও, দ্রুত তদন্তের স্বার্থে অপরাজিতা টাস্ক ফোর্স গঠনের কথা বলা হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী এদিন স্পষ্ট জানিয়েছেন, বিল পাশ হয়ে গেলেই পুলিশ বাহিনী প্রস্তুত করা হবে। প্রাথমিক রিপোর্ট হাতে পাওয়ার ২১ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে। প্রয়োজনে ১৫ দিন সময় বাড়ানো যেতে পারে। কোনও শিশু নির্যাতনের শিকার হলে ৭ দিনের মধ্যে সাক্ষ্য সংগ্রহ করা হবে৷ এছাড়াও বলা হয়েছে, চার্জশিট পেশের ৩০ দিনের মধ্যে ট্রায়াল শেষ করতে হবে।