দু’বছর আগে খাদ্য দফতর থেকে কেন সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল জ্যোতিপ্রিয়কে? খবর কি আগেই ছিল?

দু’বছর আগে খাদ্য দফতর থেকে কেন সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল জ্যোতিপ্রিয়কে? খবর কি আগেই ছিল?

Jyotipriya

কলকাতা: তৃণমূল তখন রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল। ক্ষমতায় ছিল বামেরা। সেই সময় ২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে উত্তর চব্বিশ পরগনার গাইঘাটা কেন্দ্র থেকে জিতে আসেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ২০০৬ সালে রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের ভরাডুবি হলেও জ্যোতিপ্রিয়কে গাইঘাটা কেন্দ্রে হারানো যায়নি। এরপর জ্যোতিপ্রিয় কেন্দ্র বদলে হাবরা  থেকে টানা জিতে এসেছেন।‌ প্রথম ও দ্বিতীয় তৃণমূল সরকারে জ্যোতিপ্রিয় খাদ্য দফতরের মন্ত্রী ছিলেন। তবে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ফের তৃণমূল জিতে ক্ষমতায় আসার পর জ্যোতিপ্রিয়ের দফতর বদল হয়।

খাদ্য দফতরের পরিবর্তে তাঁকে করা হয় বনমন্ত্রী। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তবে কী জ্যোতিপ্রিয় যে দশ বছর খাদ্য দফতরের মন্ত্রী ছিলেন তখন নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনা শীর্ষ তৃণমূল নেতৃত্বের কানে এসেছিল? সেই কারণেই কী খাদ্য দফতর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল জ্যোতিপ্রিয়কে? জ্যোতিপ্রিয়ের বদলে খাদ্য দফতরের ভার দেওয়া হয় রথীন ঘোষকে। কিন্তু এরপরেও খাদ্য দফতরে দুর্নীতি থেমে থাকেনি বলে বিরোধীদের অভিযোগ।

ঘটনা হল জ্যোতিপ্রিয় যখন খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন তখনই ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানের ব্যাপক উত্থান হয়। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে বাকিবুরের সম্পত্তির পরিমাণ। শুধু এই রাজ্য নয়, ভিন্ রাজ্য এমনকী বিদেশেও বাকিবুরের সম্পত্তি হদিশ পেয়েছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বারবার দাবি করেছেন তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়ের মদতেই বাকিবুর বেলাগাম দুর্নীতি করে কয়েকশো কোটি টাকার সম্পত্তি করেছেন। বাকিবুরের এক আত্মীয় চাকরি পেয়ে যান খাদ্য দফতরে।

পরবর্তীকালে যখন জ্যোতিপ্রিয়ের দফতর বদল হয় তখন দেখা যায় সেই চাকরি পাওয়া ব্যক্তিরও দফতর বদলে গিয়েছে। রাতারাতি তাঁকে বদলি করা হয় বন দফতরে। তাহলে কে ছিলেন নেপথ্যে? উত্তরটা কিন্তু জলের মতো পরিষ্কার। এখানেই শেষ নয়, রেশন বণ্টন ব্যবস্থায় ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে এই খবর পেয়ে একটা সময় রাজ্য পুলিশ তদন্ত  শুরু করেছিল। অভিযোগ ওঠে নদিয়া জেলায় রেশনের পণ্যসামগ্রী খোলা বাজারে চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে।

কৃষ্ণনগর কোতোয়ালি থানায় বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। এরপরই তদন্তে নামে পুলিশ। নদিয়ার একাধিক রাইস মিলে হানা দেয় পুলিশ। তল্লাশি চলে বিভিন্ন গো-ডাউনে। তখনই উঠে আসে বাকিবুর রহমানের নাম। প্রচুর খাদ্যসামগ্রী পুলিশ বাজেয়াপ্ত করলেও কিন্তু কোনও গো-ডাউন মালিক কিংবা রাইস মিলের মালিকের বিরুদ্ধে তাদের পদক্ষেপ করতে দেখা যায়নি। পুলিশ প্রথমে তেড়েফুঁড়ে নামলেও তাদের তদন্ত দ্রুত থেমে যায়।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, পুলিশ কেন নিষ্ক্রিয় হয়ে গেল? সেখানে কী কোনও প্রভাবশালীর হাত ছিল? সেই কারণে কি পুলিশ তদন্ত থামিয়ে দেয়? এসবের উত্তর কী জলের মতো পরিষ্কার নয়? সব মিলিয়ে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক যখন খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন তখন রেশন বন্টন ব্যবস্থায় সীমাহীন দুর্নীতি হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এই সমস্ত খবর কানে আসার পর দল বিষয়টিকে ভাল ভাবে নেয়নি। সম্ভবত সেই কারণেই খাদ্য দফতর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল জ্যোতিপ্রিয়কে।

ওয়াকিবহাল মহলের মতে, রাজ্য পুলিশ যদি সঠিকভাবে তদন্ত করত তাহলে অনেক আগেই ঝুলি থেকে বিড়াল বেরিয়ে পড়ত। কিন্তু সেটা না হওয়াতেই দেরিতে হলেও আসরে নেমেছে ইডি। এরপরই গ্রেফতার হয়েছেন জ্যোতিপ্রিয়। এই পরিস্থিতিতে জ্যোতিপ্রিয় সুস্থ হওয়ার পর তাঁকে জেরা করে আরও নতুন নতুন কি কি তথ্য উঠে আসে কিনা সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − one =