ইংরেজবাজার: গণবিবাহকে কেন্দ্র করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বিরুদ্ধে ধর্মান্তকরণের অভিযোগ তুলে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ আদিবাসী সমাজ ও ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টির শতাধিক সদস্যদের৷ রবিবার দুপুরে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে পুরাতন মালদা থানার ভাবুক গ্রাম পঞ্চায়েতের আটমাইল এলাকায়৷ আদিবাসীদের একাংশ দুঃস্থ যুবক-যুবতীদের নিয়ে সামুহিক গণবিবাহের অনুষ্ঠান করা হয় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের উদ্যোগে৷ আদিবাসীদের সংস্কৃতি এবং বিয়ের রীতি না মেনেই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কর্তারা মোটা টাকার টোপ দিয়ে আদিবাসী একাংশ যুবক-যুবতীদের গণবিবাহের আয়োজন করেছে এমনই অভিযোগ তুলে এদিন বিক্ষোভ , অবরোধে সামিল হন পুরাতন মালদার আদিবাসী সমাজ ও ঝাড়খন্ড দিশম পার্টির সদস্যরা৷
এদিকে উত্তেজনা পরিস্থিতির খবর পেয়ে পুরাতন মালদা থানার আইসি শান্তিনাথ পাঁজা ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশবাহিনী নিয়ে পৌঁছায়। পরে বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন পুরাতন মালদার ভিডিও ইরফান হাবিব। কিন্তু পরিস্থিতি বাগে আনতে চরম হিমশিম খেতে হয় পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের । হঠাৎ করেই বিক্ষোভকারী এবং গণবিবাহের শামিল হওয়া যুবক-যুবতীদের আত্মীয়দের মধ্যে বচসা শুরু হয়ে যায়। দুই পক্ষই একে অপরকে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে বলে অভিযোগ । সেই ঘটনা থামাতে গিয়ে এক পুলিশ কর্মী ও জখম হয় বলে অভিযোগ।
আদিবাসীরা এই গণবিবাহের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয় । ঠিক তেমনভাবে ওই গণবিবাহের শামিল হওয়া যুবক-যুবতীদের আত্মীয়ের বিয়ে চালানোর দাবিতে পাল্টা পুলিশের সামনে প্রতিবাদে সরব হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুরাতন মালদা থানার আইসি শান্তিনাথ পাঁজা এবং বিডিও ইরফান হাবিবের নেতৃত্বে শান্তি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। কিন্তু কোনভাবেই আদিবাসীদের বিক্ষোভ সামাল দিতে পারেননি পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা। যদিও পুলিশি ঘেরাটোপের মধ্যেই বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয় বলে সূত্রের খবর । তবে বিকেল পর্যন্ত আদিবাসীরা নিজেদের দাবিতে অনড় থেকে আটমাইল এলাকার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখেন।
এদিন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ধর্ম প্রচার বিভাগের উদ্যোগে বিশ্ব শান্তি যজ্ঞ ও হিন্দু সংস্কৃতি সম্মেলন আয়োজন করা হয় আটমাইল এলাকায়। তার সঙ্গে ১০৮ জোড়া সামুহিক গণবিবাহের আয়োজন করা হয় বিশ্ব পরিষদের পক্ষ থেকে। এই বিয়েতে অধিকাংশ যুবক-যুবতী আদিবাসী সমাজের বলে দাবি তোলেন বিক্ষোভকারী ঝাড়খন্ড দিশম পার্টির সদস্যরা । আর এনিয়ে শুরু হয় চরম গোলমাল। যদিও এদিন প্রথম থেকেই গণবিবাহের অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণভাবেই চলছিল । হঠাৎ করেই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বিরুদ্ধে এই গণবিবাহের মাধ্যমে ধর্মান্তকরণ করার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ-অবরোধে সামিল হন ঝাড়খন্ড দিশম পার্টির শতাধিক সদস্য।
পুরাতন মালদার আদিবাসী সমাজ ও ঝাড়খন্ড দিশম পার্টির রাজ্য সহ-সভাপতি মোহন হাঁসদা'র অভিযোগ, আদিবাসী সমাজের রীতি সংস্কৃতির তোয়াক্কা না করেই অধিকাংশ তাদেরই সমাজের যুবক-যুবতীদের নিয়ে এদিন সামুহিক গণবিবাহের আয়োজন করেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। ওই যুবক-যুবতীদের পরিবারকে ১২ হাজার টাকা করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়েছে উদ্যোক্তারা। আমরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সোচ্চার হয়েছি। কেন এইভাবে ধর্মান্তকরণ করা হচ্ছে । এবং আদিবাসীদের শাস্ত্র অনুযায়ী বিয়ে করানো হয় সে দাবি করা হয়েছিল । কিন্তু সেইরকম কোনো কথাই উদ্যোক্তারা মেনে নেয় নি। আমরা তারই আপত্তি জানিয়েছি। কিন্তু গণবিবাহের ক্ষেত্রে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপন এবং প্রচারপত্র বিলি করে তাদের শাস্ত্র মতে এই বিয়ের ব্যবস্থা করেছে । এতে আদিবাসী সমাজকে ছোট করা হয়েছে । আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছি । কিন্তু পাল্টা গণবিবাহের উদ্যোক্তারা আমাদের উপর চড়াও হয়েছে । তাই এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে জাতীয় সড়ক অবরোধের শামিল হয়েছি।
মোহন হাঁসদার আরও অভিযোগ , বিশ্ব হিন্দু পরিষদ তাদের নিজের কার্যালয়ে এই ধরনের গণবিবাহের আয়োজন করুক তাতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই । কিন্তু আদিবাসীদের গ্রামে এসে তাদেরকে আলাদা নিয়ম রীতিতে বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে ।এই ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না। এদিকে আয়োজক বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ধর্ম প্রচার বিভাগের জেলার সভাপতি মলয় মুখার্জ্জি বলেন, আদিবাসী ভাই-বোনেরা আমাদের সমাজের একটি অঙ্গ। ওদেরকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। এখানে কোনো রকম ধর্মান্তকরণের বিষয় নেই। যাদের অনুষ্ঠান করে বিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য নেই। সেইসব দুঃস্থ যুবক-যুবতীদের এদিনের সামুহিক গণবিবাহে শামিল করানো হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে এই গণবিবাহের অনুষ্ঠান চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করে আদিবাসীদের একাংশ এই অনুষ্ঠানে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা চালায়। এলাকার আদিবাসীদের কেউ কেউ ভুল বুঝিয়ে গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করেছে। আমরা পুরো বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছি। তারপরেই যারা বিক্ষোভ দেখিয়ে ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা করছিল। তাদের বিরুদ্ধেই বিবাহে অংশ নেওয়া যুবক-যুবতীদের আত্মীয়রাই ঘটনার প্রতিরোধ করে। কোথাও কোন রকম ধর্মান্তকরণের ঘটনা এখানে ঘটানো হয়নি।
মলয়বাবু আরও বলেন, সেবামূলক কাজে এদিন করা হচ্ছিল। গণবিবাহের পাশাপাশি বিশ্ব শান্তি যজ্ঞ এবং হিন্দু সংস্কৃতি সম্মেলনের আয়োজন করা হয় আটমাইল এলাকায় । মানুষকে ভুল বুঝিয়ে আদিবাসীদের কেউ কেউ জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়ে গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করেছে । তবে পুলিশ প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান চালাতে সাহায্য করে। পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া জানিয়েছেন, গণবিবাহকে ঘিরে সামুহিক একটা অবরোধের ঘটনা ঘটেছিলো। তবে পুলিশ ও প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। কোথাও কোনো রকমের গোলমালের ঘটনা ঘটে নি।