India Middle East Trade
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত যতই বাড়ছে, ততই চাপে পড়ছে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ভারতের বাণিজ্য। যুদ্ধের মুখে দাঁড়িয়ে ভারতের শীর্ষ রপ্তানিকারকরা এখন চাইছেন, ইরানের কৌশলগত বান্দার আব্বাস বন্দর বাদ দিয়ে চাবাহারকে প্রধান ট্রানজিট রুট হিসেবে গড়ে তোলা হোক- যেখানে ইতোমধ্যেই ভারতের বড় বিনিয়োগ রয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রকের বৈঠক
এই প্রস্তাব উঠে আসে শুক্রবার বাণিজ্য মন্ত্রকের একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে। বাণিজ্য সচিব সুনীল বারথোয়ালের নেতৃত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পেট্রোলিয়াম, শিপিং, অর্থ ও রাজস্ব মন্ত্রকের প্রতিনিধি, শিপিং লাইন, বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং রপ্তানি সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা।
এক রপ্তানিকারক প্রতিনিধির কথায়, “যদি বান্দার আব্বাসে অচলাবস্থা তৈরি হয়, তাহলে শুধু ইরানই নয়, আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ায় আমাদের বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। চাবাহারে যথেষ্ট সক্ষমতা আছে৷ এখনই সেটিকে ব্যবহার করা উচিত।”
স্ট্রেইট অব হরমুজের অনিশ্চয়তায় বিপাকে বাণিজ্যপথ India Middle East Trade
পারস্য উপসাগরের প্রবেশদ্বার ‘স্ট্রেইট অব হরমুজ’ হয়ে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ তেল ও পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল করে। ভারতের ৮০ শতাংশ তেল আমদানিও এই পথেই। কিন্তু যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যদি এই পথ বন্ধ হয়, তাহলে তার প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা ও রপ্তানির ওপর।
বলা বাহুল্য, বান্দার আব্বাস বন্দরই ইরানের বৃহত্তম বাণিজ্য কেন্দ্র, যেখান দিয়ে আফগানিস্তান, মধ্য এশিয়া ও রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের রপ্তানি কার্যক্রম চলে। কিন্তু নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে এখন অনেক বিদেশি ক্রেতাই অর্ডার স্থগিত রেখেছেন। ফলে শিপমেন্ট বিলম্বিত হচ্ছে, খরচ বাড়ছে, আর রপ্তানিকারকরা পড়েছেন দ্বিধায়।
রপ্তানি খাতে বড় ধাক্কা
বর্তমানে ভারত থেকে ইসরায়েলে রপ্তানি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে, FY24-এ ৪.৫ বিলিয়ন ডলার থেকে FY25-এ ২.১ বিলিয়ন ডলারে। ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যও স্থবির-মাত্র ১.৪ বিলিয়ন ডলারে। বাসমতি চালের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্য রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ। মধ্যপ্রাচ্যের দিকে শিপমেন্টে প্রতি কনটেইনারে খরচ বেড়েছে ৫০০-৬০০ ডলার, যা দেশের রপ্তানি খাতের জন্য বড় ধাক্কা।
চাবাহার: ভারতের জন্য কৌশলগত ‘বিকল্প পথ’
চাবাহার বন্দর নিয়ে ভারতের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল অনেক আগেই স্থির হয়েছে। পাকিস্তানকে এড়িয়ে আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ায় পৌঁছানোর বিকল্প করিডর হিসেবে চাবাহারকে গড়ে তোলা হয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহন করিডরের (INSTC) অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা মুম্বাই থেকে রাশিয়া পর্যন্ত স্থল ও সমুদ্রপথে সংযুক্ত করবে।
ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনস (FIEO)-এর এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, “চাবাহারের সুযোগ-সুবিধা যাচাই করা হবে। তবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে শিপিং লজিস্টিকস ও ডিজি শিপিংয়ের নিরাপত্তা বিশ্লেষণ অনুযায়ী।”
সরকারের আশ্বাস ও পরবর্তী পদক্ষেপ
বাণিজ্য সচিব সুনীল বারথোয়াল জানিয়েছেন, রপ্তানিকারকদের উদ্বেগ সরকার গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। চাবাহার ব্যবহার নিয়ে শিপিং, ইনস্যুরেন্স ও বন্দরের সামর্থ্য মূল্যায়ন করা হবে। প্রয়োজনে বিকল্প বন্দর যেমন সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফুজাইরাহ বা ওমানের বন্দর ব্যবহারের পরিকল্পনাও খতিয়ে দেখা হবে।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ভারতীয় বাণিজ্যের জন্য বড় রকমের চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতিতে চাবাহার বন্দরের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানো শুধু তাৎক্ষণিক বিকল্প নয়, বরং ভারতের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত স্বার্থ রক্ষায় এক অত্যন্ত জরুরি পদক্ষেপ।
World: Escalating Iran-Israel conflict pressures India’s Middle East trade. Exporters push for Chabahar Port as primary transit route, bypassing Bandar Abbas due to Strait of Hormuz uncertainty. Commerce Ministry met to strategize, fearing severe impact on India’s trade with Iran, Afghanistan & Central Asia.