নয়াদিল্লি: ভারতের মূল শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি (SEBI) এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (NSE) বহু প্রতীক্ষিত ‘কো-লোকেশন’ মামলার নিষ্পত্তির পথে এক ধাপ এগোলো। দীর্ঘদিন ধরে এনএসই-র আইপিও পরিকল্পনায় প্রধান বাধা হয়ে থাকা এই বিতর্কিত মামলাটি এবার আপসরফার মাধ্যমে মেটানোর জন্য দুই পক্ষের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন এই মামলায় যৌথভাবে সমাধানসূত্র খুঁজছে সেবি ও এনএসই।
সূত্রের খবর, প্রায় দেড় মাস আগে থেকে সেবি ও এনএসই-এর মধ্যে নিষ্পত্তি নিয়ে নিয়মিত আলোচনা চলছে। দুই পক্ষ আপসরফার শর্ত নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে। বিশেষ করে, এনএসই-কে কত টাকা জরিমানা হিসেবে দিতে হবে, সেটিই আপাতত মূল আলোচ্য বিষয়।
দীর্ঘদিন ধরে চলা কো-লোকেশন মামলার নিষ্পত্তি হলে, এনএসই-এর আইপিও শুরু হওয়ার পথে বড় অগ্রগতি হবে বলে বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। মামলার ঝামেলা শেষ হলে বিনিয়োগকারীদের কাছে এনএসই’র শেয়ার বাজারে আসার আশা নতুন করে জোরালো হবে।
কো-লোকেশন মামলা: পটভূমি ও অভিযোগ
এই মামলার কেন্দ্রে রয়েছে এনএসই-র তথাকথিত ‘কো-লোকেশন সুবিধা’। অভিযোগ, কিছু ব্রোকার এনএসই-র সার্ভারের একেবারে কাছাকাছি নিজেদের সার্ভার বসিয়ে দ্রুততর ডেটা পাওয়ার সুবিধা নিয়েছিল। এর ফলে, বাজারের অন্য অংশগ্রহণকারীদের তুলনায় তারা অনৈতিক সুবিধা পেয়েছিল বলে মনে করে সেবি। বিষয়টি সামনে আসতেই ২০১৯ সালে সেবি এনএসই-কে ৬২৫ কোটি টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়, সঙ্গে ১২% হারে সুদও ধার্য হয়।
SAT-এর রায় ও সুপ্রিম কোর্টে সেবির আপিল SEBI NSE co-location case
২০২৩ সালে সিকিউরিটিজ অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনাল (SAT) এই রায়ে আংশিক ছাড় দেয় এনএসই-কে। SAT জানায়, এনএসই কোনও জালিয়াতি বা প্রতারণায় যুক্ত ছিল না। বরং এটি “নির্দিষ্ট একটি সার্কুলারের আংশিক লঙ্ঘনমাত্র।” তবে এই রায়ের বিরুদ্ধে সেবি সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে এবং মামলাটি এখনও বিচারাধীন।
‘সেটেলমেন্ট’ এর পথে উদ্যোগী এনএসই
সূত্র জানায়, এনএসই ইতিমধ্যেই ২০২4 সালের মার্চে সেবিকে একটি চিঠি দিয়ে সমস্ত বিচারাধীন বিষয় নিষ্পত্তির আগ্রহ প্রকাশ করেছে। চিঠিতে তারা লেখে, “NSE সমস্ত বিষয় মিটিয়ে amicable settlement-এ পৌঁছতে চায়।” এক্ষেত্রে এনএসই তাদের গভার্নিং বোর্ডের কাছ থেকে ছাড়পত্রও পেয়েছে এবং সেবির কাছে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ (NOC) চেয়েছে।
জরিমানার অঙ্ক হতে পারে অনেক বেশি
সেবি ও এনএসই-এর মধ্যে আপসরফার আলোচনায় এখন মূল বিতর্কের জায়গা—জরিমানার অঙ্ক। সূত্র অনুযায়ী, সেবি এনএসই-র কাছে ₹১,২০০ কোটি টাকার মতো অর্থ চাইতে পারে, যা ২০২৩ সালের ট্রেডিং অ্যাক্সেস পয়েন্ট (TAP) মামলার নিষ্পত্তি অঙ্কের প্রায় দ্বিগুণ।
কীভাবে নির্ধারিত হয় সেবির নিষ্পত্তি অঙ্ক?
সেবির নিয়ম অনুযায়ী, কোনও প্রতিষ্ঠান অভিযোগ স্বীকার না করেও নির্দিষ্ট অর্থ দিয়ে মামলা নিষ্পত্তি করতে পারে। এই অঙ্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিবেচিত হয়:
প্রতি লঙ্ঘনের জন্য নির্ধারিত বেস অঙ্ক
প্রোসিডিং কনভার্সন ফ্যাক্টর (PCF): আগে আবেদন করলে কম জরিমানা
রেগুলেটরি অ্যাকশন ফ্যাক্টর (RAF): অতীতের অপরাধ বা পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা বিবেচনায়
আইনগত ব্যয় এবং প্রযোজ্য ‘disgorgement’ অর্থাৎ অন্যায়ভাবে অর্জিত লাভ ফেরত দেওয়া
সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদন আবশ্যক
যেকোনও চূড়ান্ত নিষ্পত্তি কার্যকর করতে হলে সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদন নিতে হবে। সেবি ও এনএসই যদি আপসরফার বিষয়ে একমত হয়, তবে তা আদালতের সামনে পেশ করা হবে এবং আদালত অনুমতি দিলে মামলাটি বন্ধ হবে। অনুমোদনের পর প্রক্রিয়াটি শেষ হতে আরও ৩ থেকে ৪ মাস লাগতে পারে বলে অনুমান।
প্রক্রিয়া: ধাপে ধাপে অনুমোদন
এই নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ায় প্রথমে সেবির একটি অভ্যন্তরীণ কমিটি আবেদন খতিয়ে দেখবে। এরপর বিষয়টি যাবে ‘হাই পাওয়ার্ড অ্যাডভাইজরি কমিটি’-র (HPAC) কাছে। সেখানে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সহ প্রাক্তন সেবি সদস্য ও বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি বিশ্লেষণ করবেন। তাদের সুপারিশ Whole-Time Member Panel-এর কাছে যাবে, তারাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
একবার চূড়ান্ত অনুমোদন হলে এনএসই-কে নির্ধারিত অঙ্ক জমা দিতে হবে এবং তারপর সেবি একটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তি আদেশ জারি করবে।
Business: SEBI and NSE are nearing a settlement in the long-standing co-location case, a key hurdle for NSE’s IPO. High-level talks are underway in the Supreme Court-pending matter, primarily focusing on the fine amount. This resolution could significantly advance NSE’s market listing plans, after allegations of unfair broker advantages.