করোনা: তড়িঘড়ি কেন ‘গণ-পাসে’র সিদ্ধান্ত? প্রশ্ন শিক্ষক মহলে

করোনা: তড়িঘড়ি কেন ‘গণ-পাসে’র সিদ্ধান্ত? প্রশ্ন শিক্ষক মহলে

 

কলকাতা: সিবিএসই বোর্ডের দেখানো পথে এবার হাঁটল পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষা দপ্তর৷ এবছর কোনও পড়ুয়াকে আর ক্লাসে আটকানো যাবে না বলে ঘোষণা করা হয়েছে৷ নবম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্লাসের ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে শিক্ষা দপ্তরের তরফে৷ একই সঙ্গে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এবার রাজ্যের সমস্ত পড়ুয়াকে পাস করিয়ে দেওয়া হবে৷ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ আর এই নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে শিক্ষক মহলে৷

করোনা অবাহে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এবছরে  অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কোনও পড়ুয়াকে একই ক্লাসে আর আটকে রাখা যাবে না৷ অর্থাৎ ফেল করানো যাবে না৷ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এবছর যারা যা ক্লাসে আছে, তারা পরবর্তী ক্লাসের জন্য উত্তীর্ণ হয়ে যাবে৷ গতকাল একই নির্দেশ জারি করেছে সিবিএসই বোর্ড৷ সেখানেও জানানো হয়েছে, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সমস্ত পড়ুয়া উত্তীর্ণ হতে যাবে৷ এই মর্মে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের চিঠি আর্জি বিবেচনা করে এই ঘোষণা করে সিবিএসই৷ এবার সিবিএসইর পথেই নয়া সিদ্ধান্তের ঘোষণা রাজ্য সরকারের৷ রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, এবছর অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সমস্ত পড়ুয়াকে পাস করিয়ে দেওয়া হবে৷ একজনকেও ক্লাসে রাখা যাবে না৷ রাজ্য সরকারের তরফে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এই মর্মে ঘোষণা করেছেন৷  শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুল শিক্ষা দপ্তর৷

রাজ্যের এই ঘোষণার পর শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘আগামী পরিস্থিতি কী হবে না জেনে তড়িঘড়ি এই সিদ্ধান্ত কেন? ২০১৯ সালের শেষের দিকে কয়েক মাস আগেই রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছিল, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবাধ প্রমোশনের নীতির পরিবর্তে পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণিতে পাশ ফেল প্রথা চালু হবে। এই শিক্ষাবর্ষ থেকে তা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। বর্তমান করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, এ বছর প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কোনও ছাত্র-ছাত্রীকে ফেল করা চলবে না। এ ব্যাপারে এত তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার কী দরকার ছিল? আগামী পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে আমরা কেউ তা জানি না। এখনও সারা বছর পড়ে রয়েছে। এর মাঝেই হঠাৎ করে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা কোনভাবেই বাস্তবসম্মত নয়৷ এই বার্তা দেওয়ার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা বাড়িতে থেকে যতটুকু পড়াশুনার চর্চা করছিল, তারা এই চর্চা থেকে বিরত থাকবে৷ এতে সাধারণ বাড়ির ছাত্র-ছাত্রীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷’’

মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির শিক্ষক নেতা অনিমেষ হালদার বলেন, ‘‘করোনার প্রভাবে এখন আন্তর্জাতিক মহামারী চলছে৷ এই পরিস্থিতিতে প্রথম-অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাস-ফেল থাকবে কি না এত আগে থেকে তা কোনও আলোচনার বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় বলে আমার মনে হয় না৷ সমস্ত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এই শিক্ষাবর্ষের শেষে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত৷ আগ বাড়িয়ে এই ঘোষণা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ন্যূনতম উদ্যমকে ব্যাহত করবে এবং এর প্রভাব পড়বে সারা বছরে স্কুলের একাডেমিক প্রক্রিয়ার উপর৷ শিক্ষামহল থেকে সাধারণ মানুষের মনে যখন প্রথম-অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাস-ফেল ফিরে আসার ব্যাপারে একটা ভাবাবেগ তৈরি হয়েছে তখন এই ঘোষণা তাকে আঘাত করল৷ এই পরিস্থিতিতে দূরশিক্ষার (অনলাই ক্লাস, টিভি, ইমেল… ইত্যাদির সাহায্যে) ভাবনা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক৷ কিন্তু তা প্রয়োগ করার আগে রাজ্যের লক্ষ-লক্ষ শিক্ষার্থীর বা অভিভাবকদের পরিকাঠামোগত অবস্থান অবশ্যই খতিয়ে দেখা উচিত৷’’

অন্যদিকে, তবে নবম, দশম, একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রের পঠন-পাঠন ব্যাহত হচ্ছে স্কুল বন্ধ থাকায়৷ স্কুল বন্ধ থাকলেও কীভাবে পঠন-পাঠন করা যাতে পারে, তা নিয়ে জটিলতা চলছিল৷ সেই জটিলতাও কাটাতে অনলাইন কিংবা  অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাঠান করা যায় কি না তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে৷ কেননা লকডাউনের  ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত৷ লকডাউনের মেয়াদ আরও বাড়বে কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে৷ আর এই পরিস্থিতিতে পঠন-পাঠন যাতে চালু রাখা যায়, তার জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের ভাবনাও শুরু হয়েছে বলে শিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 + twenty =