অভিভাবকদের তর্জনে পণ্ড অনলাইন ক্লাস, ই-টিচিংকে গুডবাই জানাচ্ছেন শিক্ষকরা

অভিভাবকদের তর্জনে পণ্ড অনলাইন ক্লাস, ই-টিচিংকে গুডবাই জানাচ্ছেন শিক্ষকরা

বেঙ্গালুরু:  লকডাউনে আমূল ভাবে বদলে গিয়েছে পড়ুয়াদের জীবন৷ সকালে উঠে তৈরি হয়ে স্কুল-কলেজে ছোটার পালা আপাতত বন্ধ৷ বদলে শুরু হয়েছে অনলাইন পঠনপাঠন৷ কিন্তু এতেও অশান্তি বিস্তর৷ মাঝেমধ্যেই ব্যাঘাত ঘটাচ্ছেন অভিভাবকরা৷ পড়ুয়াদের বাবা-মায়েদের হস্তক্ষেপে পণ্ড হচ্ছে ক্লাস৷ যার জেরেই অনলাইন ক্লাস নিতে আপত্তি জানাচ্ছেন অধিকাংশ শিক্ষকরা৷ 
যে সকল শিক্ষকরা শিক্ষার এই নয়া প্ল্যাটফর্মে পা রেখেছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই এখন মুখ ফেরাচ্ছেন৷

শিক্ষকদের অভিযোগ, প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছেন তাঁরা৷ এই ডিজিটাল অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়৷ তাঁরা জানান, ক্লাস চলার মাঝেই একের পর এক অভিযোগ নিয়ে হাজির হন অভিভাবকরা৷ কখনও বলছেন, নিম্নমানের শিক্ষা ব্যবস্থা, কখনও আবার বানান ভুল, ভুল উচ্চারণ, গম্ভীর কণ্ঠস্বর, বাচ্চাদের প্রতি সহানুভূতিশীলতার অভাবের অভিযোগ তুলছেন তাঁরা৷ তাঁদের ক্রমাগত অভিযোগে নাজেহাল শিক্ষকরা৷ শুনতে হচ্ছে অভিভাবকদের তর্জন-গর্জন৷

তবে,  জল এতদূর গড়িয়েছে যে, অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকের মুখ কম আলোতে রেখে, তাঁদের উচ্চারণের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দিচ্ছেন অভিভাবকরা৷ পড়াশোনার বিষয়ে বাবামায়েদের অতিরিক্ত হস্তক্ষেপে আদতে ভেস্তে যাচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের পঠনপাঠন৷ 

এই সমস্যার জেরে কর্নাটকের একাধিক নামজাদা স্কুলের শিক্ষকরা অনলাইন ক্লাস করাতে পারবেন না বলে তাঁদের ম্যানেজমেন্ট কমিটিকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন৷ ই-টিচিংকে গুডবাই জানাচ্ছেন একের পর এক শিক্ষক৷ 

স্কুল কর্তৃপক্ষও এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছেন৷ ইতিমধ্যেই অভিভাবকদের সঙ্গে কথাও বলেছেন তাঁরা৷ কর্নাটকের প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি স্কুলের জেনারেল সেক্রেটারি ডি শশীকুমার বলেন, ‘‘অনলাইন ক্লাসে শিক্ষকদের সঙ্গে অভিভাবকদের এই গোলযোগের একাধিক ঘটনা আমাদের নজরে এসেছে৷ এটা মেনে নেওয়া যায় না৷ অনলাইন পদ্ধতিতে পড়াশোনার বিষয়টি সাময়িক, এই পদ্ধতি স্থায়ী করার পক্ষে আমরা কখনও মত দিতে পারি না৷’’
নামকরা এক শিশু চিকিৎসক বলেন, আপনি কতটা দক্ষ বা কতটা অভিজ্ঞতা সম্পন্ন তা বিবেচ্য নয়৷ শিক্ষকের কাজে হস্তক্ষেপ করাটা কাম্য নয়৷ আমার কাছে অনেক অভিভাবকই তাঁদের সন্তানের সার্জারি দেখার অনুমতি চান৷ কিন্তু আমি তাঁদের সেই অনুমতি দিই না৷ শিক্ষকদেরও তেমনটাই করা উচিত৷ 

মনোবিজ্ঞানী ড.অন্নপূর্ণা বলেন, ‘‘আমাদের শিক্ষকরা যথেষ্ট প্রশিক্ষিত এবং তাঁরা ক্লাসরুমে বাচ্চাদের সামলাতে জানেন৷ কিন্তু ক্যামেরার সামনে পড়ানোর অভিজ্ঞতা তাঁদের কাছেও নতুন৷ কোভিড-১৯ আমাদের সামনে একাধিক চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে৷ সেগুলি আমাদের গ্রহণ করতে হবে৷ তা বলে কেউ শিক্ষকদের দিকে আঙুল তুলতে পারেন না৷’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × one =