নিজস্ব প্রতিনিধি: এসএসসি দুর্নীতি কাণ্ড থেকে কয়লা বা গরু পাচার, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এবং ইডি ধারাবাহিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে চলেছে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের। ইতিমধ্যেই তাঁদের অনেককে গ্রেফতার পর্যন্ত করেছে তারা। যে ঘটনায় ক্ষুব্ধ তৃণমূল। তৃণমূলের অভিযোগ একুশের বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার কারণে এভাবে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে বিজেপি। উল্টোদিকে বিজেপি বলছে সবটাই হচ্ছে আদালতের নির্দেশে। রাজ্য রাজনীতির সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট বলছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সরব বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আর শুভেন্দু অধিকারীর ভাই তথা বিজেপি নেতা সৌমেন্দু অধিকারীকে বর্তমানে বারবার তলব করছে কাঁথি থানার পুলিশ। সেই ঘটনায় শুভেন্দু পাল্টা সূর চড়িয়ে বলেছেন সুদে-আসলে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সবটাই ফেরত দেবেন।
উল্লেখ্য, দু’দিন মিলিয়ে ১৭ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে একাধিক দুর্নীতি মামলায় কাঁথি থানার তদন্তকারীদের মুখোমুখি হয়েছেন বিজেপি নেতা সৌমেন্দু অধিকারী। শুক্রবার ফের সৌমেন্দু অধিকারীকে হাজিরা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন তদন্তকারীরা। এবার প্রভাত কুমার কলেজের বিল্ডিং দুর্নীতি মামলায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ। গত শুক্রবার পথবাতি দুর্নীতির মামলায় কাঁথি থানায় হাজিরা দিয়েছিলেন সৌমেন্দু। সোমবার আবারও হাজিরা দেওয়ার জন্য ডেকে পাঠানো হয় তাঁকে। কাঁথি পুরসভা থেকে সারদা ফাইল লোপাট মামলার তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাঁকে। সোমবার সকাল দশটা নাগাদ কাঁথি থানার হাজির হন সৌমেন্দু। বিকাল ৫ টা পর্ষন্ত জিজ্ঞাসাবাদ চালান তদন্তকারীরা। জিজ্ঞাসাবাদের পর বেরিয়ে সৌমেন্দু অধিকারী বলেন, ” কাঁথি পুরসভায় ফাইল মিসিং মামলায় আমাকে আজকে তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছিল। সকাল ১০টার সময় এসেছিলাম। বিকাল ৫ টা নাগাদ বেরোলাম। আগামী শুক্রবার কাঁথি প্রভাত কুমার কলেজ মামলায় আমাকে ডেকেছে। সব রকম ভাবে তদন্তকারীদের সহযোগিতা করছি”। সেই সঙ্গে কটাক্ষের সুরে বলেন ” আমি ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ সালে দায়িত্ব ছেড়ে এসেছি। তারপরে ওই চেয়ারে তিনজন বসেছেন। মামলা হল ২০২২ সালের জুন মাসে। শুধুমাত্র আমাকেই ডাকা হচ্ছে! অন্যদের ডাকা হচ্ছে না।”
একইভাবে কল্যাণী এইমস দুর্নীতি মামলায় বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়ক নীলাদ্রি শেখর দানাকে তলব করেছে রাজ্য পুলিশ। শুভেন্দু অধিকারীর নামেও একাধিক অভিযোগ দায়ের হয়েছে রাজ্য পুলিশে। রাজনৈতিক মহল বিষয়টিকে এভাবে দেখছে যে, একদিকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ডেকে পাঠাচ্ছে তৃণমূল নেতাদের। অন্যদিকেই বিজেপি নেতাদের তলব করছে রাজ্য পুলিশ। তবে কি লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত এভাবেই ডেকে পাঠানোর প্রতিযোগিতা চলবে? সদ্য ইডি গ্রেফতার করেছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি তথা তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে। তৃণমূলের অভিযোগ বিজেপি নেতারা দুর্নীতি করলেও তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। উল্টোদিকে রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ রয়েছে বিজেপির। প্রবীণ রাজনীতিকরা জানাচ্ছেন এই ধরনের সংস্কৃতি পশ্চিমবঙ্গে অতীতে কোনও দিনই দেখা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে উৎসবের মরশুম শেষ হলে তৃণমূল বিরোধী আন্দোলন নতুন করে শুরু করতে চলেছে বিজেপি। আর পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে জনসংযোগের লক্ষ্যে তৃণমূল একাধিক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তার মধ্যেই চলছে পারস্পরিক দোষারোপের পালা। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>