নয়াদিল্লি: দিন দিন বেড়ে চলেছে পেট্রোল-ডিজেলের দাম৷ পকেটে টান পড়ছে মধ্যবিত্তের৷ অন্যদিকে, গাড়ির ধোঁয়ায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দূষণ৷ নিঃশ্বাস নেওয়াই দায়৷ কিন্তু, আপনাদের এমন এক গাড়ির কথা শোনাব, যাতে এক ঢিলে মরবে দুই পাখি৷ রেহাই মিলবে এই দুটি সমস্যার হাত থেকেই৷ কারণ, এই গাড়ি তেলে নয়, চলে জলে!
আরও পড়ুন- ভোটের মধ্যে গুজরাতে ‘বেলাইন’ মোদীর বন্দে ভারত এক্সপ্রেস! ধাক্কা দিল গরুকে
মধ্যপ্রদেশের সাগরের বাসিন্দা মহম্মদ রাইজ মেহমুদ মাকরানি৷ যিনি নিজের হাতে বানিয়েছেন এই ‘ওয়াটার কার’৷ না, তার কাছে কোনও প্রথাগত শিক্ষা নেই৷ নেই কোনও ডিগ্রি৷ গত ৩৫ বছর ধরে পারিবারিক গ্যারেজে কাজ করেই সঞ্চয় করেছেন অভিজ্ঞতা৷ ২০১২ সালে উনি বদলে ফেলেন তাঁর মারুতি ৮০০ গাড়ির খোলনলচে৷ পেট্রোল কিংবা ডিজেল নয়, সেই গাড়ি ছোটালেন জলে৷
২০০৭ সালে গাড়ি বানানোর উদ্যোগ শুরু করেন মাকরানি৷ জলের সঙ্গে ক্যালসিয়াম কারবাইডের মিশ্রনে তৈরি করেন অ্যাসিটিলিন গ্যাস৷ এর পরেই লেগে পড়েন নতুন জ্বালানির উপযুক্ত ইঞ্জিন তৈরির কাজে৷ মাকরানি বলেন, ‘‘ক্যালসিয়াম কার্বাইড আর জলের মিশ্রনে যে গ্যাস নির্গত হয়, তার হিসাবে গাড়ির পিস্টন, কানেক্টর এবং হেডে পরিবর্তন আনি৷ শুরু করি নতুন জ্বালানির উৎপাদন৷ গাড়িতে সমস্ত সিস্টেম লাগানোর পর ইঞ্জিন চালু করার চেষ্টা করি৷ কিন্তু, শুধুমাত্র ইঞ্জিন চালু করতেই দেড় বছর সময় লেগে যায়৷ ২৪ ঘণ্টা এই বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করতাম৷ অনেক চেষ্টার পর স্টার্ট নেয় ইঞ্জিন৷ ’’
অ্যাসিটিলিন গ্যাস গাড়িতে এলপিজি এবং সিএনজি-র বিকল্প হয়ে উঠতে পারে৷ তবে এটি উচ্চ দাহ্য পদার্থ৷ এর পরেও কোনও আধুনিক প্রযুক্তি ও মেকানিক্যাল সাপোর্ট ছাড়া এই গ্যাসকে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করাটা সত্যিই কৃতিত্বের৷ এই গাড়িতে ৭৯৬ সিসি ইঞ্জিন রয়েছে৷ যা সম ক্ষমতা সম্পন্ন অন্যান্য গাড়ির মতোই শক্তিশালী৷ তবে এই গাড়ির গতি অন্যান্য গাড়ির চেয়ে একটু কম৷ ঘণ্টা ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার৷ কিন্তু যেখানে প্রতি কিলোমিটারের ৬ টাকার পেট্রোল লাগে, সেখানে এই গাড়িতে খরচ একবারে অর্ধেক৷ মাত্র ৩ টাকা৷
২৫ কিলোগ্রাম জল আর ৪ কিলোগ্রাম ক্যালসিয়াম কার্বাইডে এই গাড়ি ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে৷ এই ওয়াটার কার তৈরির জন্য এখনও পর্যন্ত ৭ লক্ষ টাকা খরচ করেছেন মাকরানি৷ তবে এই আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে ঘুরেছে ভাগ্যের চাকা৷ দুবাই এবং চিনের কোম্পানিগুলি যোগাযোগ করেছে তাঁর সঙ্গে৷ ইতিমধ্যে চিন থেকে ঘুরেও এসেছেন৷ কিন্তু ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ থেকে তিনি এতটাই অনুপ্রাণিত যে, সব অফার খারিজ করে দিয়েছেন৷
চমকের এখানেই শেষ নয়৷ এই গাড়িকে তিনি জুড়েছেন মোবাইলের সঙ্গে৷ ভাবছেন তো সে কী ভাবে সম্ভব? মহম্মদ রাইজ মেহমুদ মাকরানি বলেন, ‘‘আমরা মোবাইলে কথা বলি, হোয়াটস অ্যাপকরি, মেসেজ করি৷ কিন্তু ভাবলাম কেন না এমন একটা জিনিস তৈরি করা যাক, যার সাহায্যে মোবাইল দিয়ে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি৷’’ রাইজজি নিজের এই গাড়িটি মোবাইল দিয়েও অপারেট করেন৷ তিনি গাড়িতে এমন এক মোটর লাগিয়েছেন যা মোবাইল নেটওয়ার্কের ফ্রিকোয়েন্সি দিয়ে পরিচালনা করেন৷ মোবাইলের আলাদা আলাদা নম্বর চিপে কখনও গাড়ি স্টার্ট করেন৷ কখনও বন্ধ৷ এমনকি রিভার্সেও চালান৷ অর্থাৎ এই গাড়ি চলতে পারে বিনা চালকেও৷ ড্রাইভার লেস গাড়ি বানাতে গোটা বিশ্বের তাবড় তাবড় বিজ্ঞানীরা যখন কোটি কোটি জলার খরচ করছেন, সেখানে আমাদের দেশি বিজ্ঞানী এই কাজ কয়েক হাজার টাকায় করে ফেলেছেন। তাঁর এই আবিষ্কার সব তারিফ যোগ্য৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>