মৃতের স্তুপে একটা স্কুল। যেখানে একের পর পরিচয়হীন মৃতদেহ জমা পড়ছিল। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘর নয়, তাই মৃতদেহ পঁচেছে, গলেছে। বিভীষিকার সেই দিন তো বেশিদিনের নয়। বালেশ্বরের বাহানগাবাজারের সেই স্কুল। ট্রেন দুর্ঘটনার পর থেকে যে স্কুলের দরজা খোলা হয় মৃতদেহ জমা রাখতে। এবার সেই স্কুলই ভাঙার কাজ। শুক্রবার সকাল থেকেই স্কুল ভাঙার কাজ চলছে। কারণ, দুর্বিসহ হয়ে উঠছে এই স্কুল স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে। যে স্কুল সাক্ষী হয়েছে আর্তনাদের, পঁচা-গলা মৃতদেহের গন্ধের। সেই স্কুলকেই এবার ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিল জেলা প্রশাসন। কারণ, বাহানগা হাই স্কুল ঘিরে আতঙ্কে স্থানীয়রা। স্কুল ঘিরে যে সব দৃশ্য গত কয়েকদিনে সামনে এসেছে, তারপর সেই স্কুলে আর বাচ্চাদের পাঠাতে চাইছেন না অভিভাবকরা। নান ধরণের অলৌকিক গল্পও ছড়িয়ে পড়ছে। আর সেই কারণেই স্কুল ভাঙার সিদ্ধান্ত। অভিভাবকদের আবেদন মেনেই জেলা প্রশাসনের তরফে এই উদ্যোগ।
১৯৫৮ সালে থেকে চলা বাহনগা হাই স্কুলের বর্তমানে পড়ুয়াদের সংখ্যা ৫৬৫ জন। শুক্রবার থেকে একে একে ভাঙা হচ্ছে স্কুলের ঘর থেকে টালি। ভাঙার পর ঠিকব পাশের জমিতেই নতুন স্কুল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। বিভীষিকার দিন কাটিয়ে উঠতে স্কুলের কয়েকদিন দুর্বিসহ চিহ্ন মেটাতেই তাই এই উদ্যোগ।
ওড়িশার বালেশ্বরের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় বাহনগা বাজারের হাই স্কুল মহূর্তে অস্থায়ী মর্গে পরিণত হয়। ভুবনেশ্বরের হাসপাতালে দেহগুলিকে স্থানান্তরিত করার পর বাহানগা হাই স্কুল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন। গত শুক্রবার রাত শনিবার রাত পর্যন্ত বাহানগা হাই স্কুলে ছিল শনাক্ত না করা বহু মৃতদেহ। এরপর দেহগুলিকে নিয়ে যাওয়া হয় নর্থ ওড়িশা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বিজনেস পার্কে। এরপরই স্কুল ঘিরে আতঙ্ক শুরু হয়। কারণ পচা গলা দেহে কয়েকদিন থাকায় দুর্গন্ধ গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পরে। স্যানিটাইজিং করার পরও পরিস্থিতি খুব বেশি বদলায় না। স্কুলে ছেলেমেয়েদের পাঠাতে আপত্তি জানাতে থাকেন অভিভাবকরা। যে স্কুলে মৃতদেহের স্তুপ ছিল, সেই স্কুলেই কীভাবে পঠনপাঠন, এই দাবিই সামনে রাখা হয়। বিষয়টিকে মেনে নিয়েই তাই দীর্ঘদিনে বাহানগা বাজার হাই স্কুল ভাঙা হল, করমণ্ডল দুর্ঘটনার আতঙ্কে।