কেন খুন শ্রদ্ধাকে? অপলক চোখে পুলিশি জেরায় হাড়হিম সত্যি উগড়ে দিল আফতাব

কেন খুন শ্রদ্ধাকে? অপলক চোখে পুলিশি জেরায় হাড়হিম সত্যি উগড়ে দিল আফতাব

নয়াদিল্লি:  হাড় হিম করা একটা ঘটনা৷ শ্বাসরোধ করে খুন। তার পর প্রেমিকার দেহ টুকরো টুকরো করে ছড়িয়ে দেওয়া হল দিল্লির বিভিন্ন প্রান্তে। কাটা মুণ্ডু সাজিয়ে রাখলেন ফ্রিজে। চরম নৃসংশতার পরেও অদ্ভূতভাবে শান্ত শ্রদ্ধা ওয়ালকারের হত্যাকারী আফতাব আমিন পুনাওয়ালা। এই ঘটনার রহস্য উদঘাটনে অভিযুক্ত প্রেমিককে লাগাতার জেরা করছেন তদন্তকারী অফিসাররা। যাঁকে ভালোবাসার দাবি করছিলেন, তাকে কী ভাবে এত নৃশংসভাবে খুন করতে পারলেন? জবাব খুঁজতে মরিয়া অফিসাররা একের পর এক প্রশ্ন করে চলেন আফতাবকে। নাগাড়ে জেরার মুখে শ্রদ্ধাকে খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। জানালেন কী ভাবে এই নৃশংস এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। অদ্ভূত ভাবে তখনও তিনি নির্বিকার। তাঁর কথা শুনে হতবাক তদন্তকারীরা। তবে তাঁর কথায় কতটা সত্যতা রয়েছে তা জানতে বৃহস্পতিবার নারকো টেস্ট করা হবে। দিল্লি হাইকোর্ট ইতিমধ্যেই নারকো টেস্টের অনুমতি দিয়েছে।

আরও পড়ুন- ‘আন্ডার নতুন ফান্ডা’, হলুদ নয় এখানে মুরগি দেয় সবুজ কুসুমের ডিম!

দিল্লি পুলিশের প্রশ্নের মুখে পড়ে হাড়হিম করা সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন শ্রদ্ধার লিভ ইন পার্টনার আফতাব। কেন শ্রদ্ধাকে খুন করলেন তিনি? আফতার জানান, ১৮ মে রাতে শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁর তুমুল ঝগড়া হয়েছিল। এর আগেও বহুবার ঝগড়া হয়েছিল। কিন্তু, সেদিন পরিস্থিতি সীমারেখা অতিক্রম করেছিল। তাঁদের মধ্যে হাতাহাতিও হয়েছিল। আফতাব বলেন, এরপরই আমি শ্রদ্ধাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিই।  ওঁর বুকের উপর বসে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে খুন করি। 

 শ্রদ্ধার মৃতদেহ নিয়ে কী করেছিলেন? এই প্রশ্নের জবাবে আফতাব বলেন, সেদিন রাতে শ্রদ্ধার মৃতদেহ টেনে বাথরুমে নিয়ে যাই। সারারাত সেখানই ফেলে রাখি। ১৯ মে সকালে বাজারে যাই। লোকাল মার্কেট থেকে ৩০০ লিটারের একটি ফ্রিজ কিনি। সেখান থেকে যাই ছুড়ি-কাঁচির দোকানে। সেখান থেকে একটি করাত নিই। তার পর সেদিন রাতে বাথরুমে বসে শ্রদ্ধার মৃতদেহ টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলি। আফতাব আরও জানান, তিনি বেশ কিছু দিনের জন্য রাঁধুনী হিসেবে চাকরি করেছিলেন। সেই সূত্রেই তখন চিকেন-মটন কাটার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। ফলে শ্রদ্ধার দেহ টুকরো টুকরো করতে বেশি সময় লাগেনি তাঁর। এর পর শ্রদ্ধার সেই দেহাংশ পলিথিনে ঢুকিয়ে রেখে দেন ফ্রিজের মধ্যে৷ 

কী ভাবেই সেই টুকরো দিল্লির বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়েছিলেন আফতাব? এর জন্য কত দিনই বা সময় লেগেছিল তাঁর? আফতাব জানান, ২০ মে শ্রদ্ধার দেহের কয়েকটি টুকরো ফ্রিজ থেকে বের করে ব্যাগে ভরে রাতের অন্ধকারে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম। যাতে কেউ দেখে না ফেলে৷ প্রথম রাতে অল্প কয়েকটা টুকরো নিয়ে যাই৷ তারপর মেহরুলির জঙ্গলে সেগুলো ফেলে দিয়ে আসি৷ এর পর প্রায় ২০ দিন ধরে ছত্তরপুর এবং মেহরুলির জঙ্গলে শ্রদ্ধার দেহাংশ ফেলে দিয়ে আসেন আফতাব৷ 

এই ২০ দিন ধরে শ্রদ্ধার দেহর টুকরো নিয়ে কী করতেন? পুলিশের এই প্রশ্নে আফতাব বলেন, ‘‘এই ক’দিন ঘর থেকেই বার হইনি৷ কারও সঙ্গে কথা বলিনি। ফ্রিজ খুলে বারবার ওর দেহর টুকরোগুলোর জায়গা অদল বদল করতাম। যাতে দুর্গন্ধ না ছড়ায়। কেমিক্যাল দিয়ে ঘর, বাথরুম পরিষ্কার করে রাখতাম। ঘরে যাতে কোনওভাবেই মৃতদেহর চিহ্ন না পাওয়া যায়৷ টুকরোগুলো ফেলে আসার পর ভালো করে ঘর পরিষ্কার করে ফেলেছিলাম৷’’ 

যাকে এত ভালো বাসতেন, তাঁকে এত নৃশংস ভাবে মারলেন কী ভাবে? আফতাবের অকপট জবাব, ‘‘আমার প্রচণ্ড রাগ হয়েছিল৷ শ্রদ্ধার পরিবারের সঙ্গে ওঁর কোনও যোগাযোগ ছিল না৷ আমি জানতাম ও মরে গেলেও কেউ ওঁর খোঁজ করতে আসবে না৷ তাই যা মনে হয়েছে করেছি৷’’  চোখের পাতা না ফেলে গোটা ঘটনার কথা জানান আফতাব৷