কলকাতা: জন্মলগ্ন থেকেই হৃদযন্ত্রে ছিদ্র ছিল তার৷ কিছুদিন পড়ে সেই সমস্যা ধরাও পড়ে৷ চিকিৎসকরা ওপেন হার্ট সার্জারির সিদ্ধান্ত নেন৷ অপারেশন করা হয় বছর দুয়েকের শিশুকন্যার শরীরে। বেঙ্গালুরু থেকে দিল্লি নিয়ে আসার পথে মাঝ আকাশে ঘটে বিপত্তি৷ বিমানের ভেতরেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয় খুদের। ধীরে ধীরে শান্ত হতে থাকে নাড়ি৷ মেয়ের শরীর ঠান্ডা হচ্ছে দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা-মা৷ ছোট্ট শিশুর শরীর আঁকড়ে শুরু হয় বাবা-মায়ের অর্তনাদ৷ সেই সময় দেবদূতের মতো সেখানে হাজির হন বিমানেই সফররত দিল্লি এইমসের পাঁচ ডাক্তার৷ আর তাঁরাই ঘটান চমৎকার৷ অদম্য চেষ্টায় প্রাণ ফিরিয়ে দেন শিশুকন্যার।
ভিস্তারা ইউকে-৮১৪ বিমানের এই ঘটনা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এইমস-এর পাঁচ চিকিৎসক ডা. নভদীপ কৌর, ডা. দমনদীপ সিং, ডা. রিষভ জৈন, ডা. ঐষিকা ও ডা. অভিচালা মাঝ আকাশে শিশুকন্যার প্রাণ ফিরিয়ে নজির গড়েছেন। টানা ৪৫ মিনিট ধরে শিশুটিকে সিপিআর দেন তাঁরা। সঙ্গে চলতে থাকে অন্যান্য থেরাপিও৷ আইভি ক্যানুলা বসিয়ে শিশুটির শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক করা হয়। ধীরে ধীরে প্রাণের স্পন্দন ফেরে ছোট্ট মেয়েটির শরীরে।
এইমসের সিনিয়র কার্ডিয়াক রেডিওলজিস্ট ডা. দমনদীপ জানান, জন্ম থেকেই শিশুটি সায়ানটিক। ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট (ভিএসডি) অর্থাৎ হৃদযন্ত্রে ছিদ্র ছিল তার৷ চলতি ভাষায় বলতে গেলে, জন্মের সময় থেকেই হৃদযন্ত্রের নীচের অংশের দুটো প্রকোষ্ঠ (নিলয়) বিভাজনকারী পর্দায় ছিদ্র ছিল শিশুটির। এই সমস্যা জন্মের সঙ্গে সঙ্গে ধরা না পড়লেও, কিছুদিনের মধ্যেই তা ধরা পড়ে। ভিএসডি হল কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ বা হৃদযন্ত্রের জন্মগত ত্রুটিজনিত অসুখ। এটি দু’রকম হয়। সায়ানটিক এবং অ্যাসায়ানটিক। সায়ানটিক কনজেনিটালের ক্ষেত্রে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমের জেরে শরীরের কোনও কোনও অংশ নীলচে হয়ে যায়। এই ধরনের শিশুদের বলে ‘ব্লু বেবি’।