কয়েক হাজার কোটির সম্পত্তি, রাজকীয় সুখ ছেড়ে প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধেন এই ধনকুবেরের কন্যা

কয়েক হাজার কোটির সম্পত্তি, রাজকীয় সুখ ছেড়ে প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধেন এই ধনকুবেরের কন্যা

c8177b1b719528603bb9d0f7f47562a4

কলকাতা:  ‘পিরিতি কাঁঠালের আঠা..’ সত্যিই বুঝি তাই৷ একবার ভালোবেসে কাউকে মন দিলে তাঁর হাত ছাড়া সহজ হয় না৷ ভালোবাসার টানে পাড় করা যায় অনেক কাঁটাপূর্ণ পথ৷ কথাগুলো শুনতে কেতাবি হলেও, বাস্তবে কিন্তু রয়েছে এমন অনেক নজির৷ যাঁদের প্রেম কাহিনী বলিউডি চিত্রনাট্যকেও হার মানায়৷ যাঁরা নিজেদের সব সুখ স্বচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে ঘর বাঁধে মনের মানুষের সঙ্গে৷

প্রেমের টানে বিলাসবহুল জীবনের হাতছানি ভুলে প্রেমিকের হাত ধরেছিলেন এমনই এক ধনকুবেরের মেয়ে৷ বিপুল সম্পদের উত্তরাধিকারী হওয়ার সুযোগ হারিয়েছিলেন হেলায়৷ রাজকীয় সুখ ছেড়ে ঘর বেঁধেছিলেন হতদরিদ্র প্রেমিকের সঙ্গে৷ 

বছর পনেরো আগের কথা৷ মালয়েশিয়ার ধনকুবের খু কায় পেং-এর কন্যা অ্যাঞ্জেলিন ফ্রান্সিস খু গাঁটছড়া বাঁধেন ক্যারিবীয় সহপাঠী জেডিডিয়া ফ্রান্সিসের সঙ্গে৷ স্বভাবতই মেয়ের এই সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি পেং৷ কিন্তু তাতে কী? প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধতে ২,৪৮৪ কোটি টাকার পারিবারিক সম্পত্তিকে অবলীলায় ‘না’ বলেছিলেন তিনি। সম্প্রতি দেশবিদেশের নানা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে অ্যাঞ্জেলিনের সেই প্রেম কাহিনি। 

আমেরিকার একটি পত্রিকার বিচারে ২০১৫ সালে মালয়েশিয়ার প্রথম ৫০ জন ধনকুবেরের তালিকায় ছিলেন অ্যাঞ্জেলিনের বাবা পেং। তাঁর পূর্বপুরুষেরা ছিলেন চিনের বাসিন্দা৷ সেখান থেকে মালয়েশিয়ায় এসে বসতি গড়েছিলেন তাঁরা। সেই সঙ্গে গড়ে তোলেন বিশাল এক সাম্রাজ্য৷ ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে ‘লরা অ্যাশলি’ নামে ব্রিটেনের একটি নামজাদা ফ্যাশন, ফার্নিশিং এবং টেক্সটাইল ডিজাইন সংস্থায় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামলেছেন পেং।  এছাড়াও  মালায়ান ইউনাইটেড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমইউআই) গোষ্ঠীর ছাতার তলায় একাধিক ব্যবসা রয়েছে তাঁর৷ 

২০১৫ সালে আমেরিকার একটি প্রথমসারির পত্রিকার দাবি ছিল, এমইউআই গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা পেং-এর সম্পত্তির পরিমাণ ২,৪৮৪ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে জ্যেষ্ঠ পুত্র অ্যান্ড্রুর হাতে এমইউআই গোষ্ঠীর দায়িত্ব সঁপে তিনি অবসর নেন৷ 

অ্যাঞ্জেলিন

অ্যাঞ্জেলিনের মা পলিন চাই-ও কিন্তু কম নন৷ তিনিও মালয়েশিয়ার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের একজন। এক সময় মালয়েশিয়ার সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা ‘মিস মালয়েশিয়া’র শিরোপা জিতেছিলেন তিনি। পেং দম্পতির তিন পুত্র এবং দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। অ্যাঞ্জেলিন ছিলেন চতুর্থ৷ তাঁর প্রেমকাহিনি খানিকটা সিনেমার চিত্রনাট্যের মতো। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোর সময়ই জেডিডিয়া ফ্রান্সিসের সঙ্গে পরিচয় হয় অ্যাঞ্জেলিনের। পড়াশোনার  সঙ্গে চুটিয়ে চলে প্রেম৷  সহপাঠীর সঙ্গে ঘর বাঁধবেন বলে ঠিকও করে ফেলেন৷ কিন্তু, বেঁকে বসেন পেং। বাবার অমতে বিয়ে করলে যে তাঁকে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি থেকে তাঁকে বেদখল করা হবে, সে কথা ভালোমতোই জানতেন অ্যাঞ্জেলিন। তবুও নিজের সিদ্ধান্তেই অটল থাকেন৷ কিন্তু কেন এমনটা করেছিলেন অ্যাঞ্জেলিন? 

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘ডেইলি মেল’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অ্যাঞ্জেলিন বলেন, ‘‘আমার মনে হয়েছিল, আমাদের বিয়ে নিয়ে বাবার সিদ্ধান্ত ভুল৷ তাই আমি করব, সেটা বুঝে উঠতে বিশেষ ভাবতে হয়নি।’’

বিপুল সম্পত্তি হারানোর আফসোস নেই? অ্যাঞ্জেলিনের কথায়, ‘‘বিত্তশালী হওয়াটা এক কথায় আশীর্বাদ৷ কারণ অর্থের বিনিময়ে অনেক কিছু করা যায়, বহু পথ খুলে যায়। তবে এর কিছু উপরি দিকও রয়েছে৷ যেমন- ক্ষমতার আস্ফালন। আর্থিক ক্ষমতা থাকলে বহু ক্ষতিকারক বৈশিষ্ট্য ফুলেফেঁপে ওঠে। এতে নানা সমস্যা তৈরি  হতে পারে।’’  তাই এই বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি হাতছাড়া হওয়ার কোনও দুঃখই নেই অ্যাঞ্জেলিনের৷ 

৩৪ বছরের অ্যাঞ্জেলিন পেশায় ফ্যাশন ডিজাইনার। অন্য দিকে, ডেটা সায়েন্টিস্ট হিসাবে কাজ করেন তাঁর স্বামী জেডিডিয়া। ২০০৮ সালে বিয়ে হয় তাঁদের৷ এর পর থেকে মা-বাবার সঙ্গে আর দেখা হয়নি তাঁর। কিন্তু ভাগ্য তাঁদের মেলায় আদালতে।  ২০১৩ সালে পলিনের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় পেং-এর। সে সময় আদালতে গিয়ে মায়ের পক্ষে সাক্ষ্য দেন অ্যাঞ্জেলিন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *