দু’টো ভাড়া করা কম্পিউটার দিয়ে শুরু, আজ ১০০ কোটির সংস্থার মালকিন এই বাঙালি কন্যা

দু’টো ভাড়া করা কম্পিউটার দিয়ে শুরু, আজ ১০০ কোটির সংস্থার মালকিন এই বাঙালি কন্যা

কলকাতা: ভেতো বাঙালি নাকি ব্যবসা জানে না৷ এমন অপবাদ বহুকাল ধরেই চলে আসছে। তবে সেই অপবাদ ঘুঁচিয়ে আরও একবার বাঙালিকে সেরার আসনে বসালেন বর্ধমানের মেয়ে অঙ্কিতা নন্দী। জেদ আর আত্মবিশ্বাসে ভর করে শূন্য থেকে শিখর ছুঁলেন এই বঙ্গতনয়া৷ 

অঙ্কিতা নন্দী, কলকাতার সফল ব্যবসায়ীদের মধ্যে আজ তিনি অন্যতম৷ কলকাতা ভিত্তিক সংস্থা ‘টায়ার৫ টেকনোলজি সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেড’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর। ২০১৫ সালে মার্কিন স্বামীর সঙ্গে যৌথভাবে এই সংস্থার সূচনা করেছিলেন তিনি৷ কলকাতার সল্টলেকে অফিস রয়েছে অঙ্কিতার৷ যেখানে আজ প্রায় ১০০ জন কর্মী চাকরি করেন। 

তবে পিছনে তাকালে দেখা যাবে অঙ্কিতার জীবনের শুরুটা হয়েছিল নিতান্তই সাদামাটা ভাবে৷  বর্ধমান জেলার একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান৷ খুব সাধারণ ভাবেই বেড়ে ওঠা৷ বাবা সরকারি কর্মচারী৷ তবে খুব অল্প বয়স থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন উদ্যোগপতি হওয়ার। নিজের শহরেরই একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা তাঁর৷ কলেজে পড়তে পড়তেই শুরু করেন ফটওয়্যার বানানোর কাজ৷ ছাত্রজীবনেই হাত পাকিয়েছিলেন অ্যানড্রয়েড অ্যাপ তৈরিতে৷ ব্যক্তিগত রোজগারের আশায় সেই অ্যাপ বিক্রিও করতেন৷ 

এমন ভাবেই কাটছিল দিন৷ হঠাৎ করেই একটি অ্যাপ বদলে দিন তাঁর জীবন৷  সেটা অবশ্য তাঁর নিজের তৈরি নয়। ডেটিং অ্যাপ ‘টিন্ডার’-এ আচমকাই তাঁর পরিচয় হয় জিন উজেনের সঙ্গে। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। গল্প করতে করতেই একদিন জিনকে নিজের ব্যবসা সংক্রান্ত পরিকল্পনার কথা জানান অঙ্কিতা। সেই পরিকল্পনায় বেশ প্রভাবিত হন জিন৷ এর পর ২০১৫ সালে দু’জনে যৌথভাবে গড়ে তোলেন ‘টায়ার৫ টেকনোলজি সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেড’। কিন্তু, সেই সময় তাঁদের কারোর পক্ষেই মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করার ক্ষমতা ছিল না। তাই মাত্র দুটি কম্পিউটার ভাড়া নিয়ে শুরু করেন ব্যবসা৷ এর পর বাকিটা ইতিহাস।

যৌথভাবে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পর ভারতে আসেন জিন। ২০২১ সালে তাঁরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। যদিও ব্যবসায়িক সম্পর্কের সূত্রপাত সেই ২০১৫ সালেই। তাঁদের কোম্পানি একটি সাবস্ক্রিপশন-ভিত্তিক মডেল অফার করে৷  অন্যান্য সংস্থা তাদের তৈরি সফ্টওয়্যারগুলি কিনতে পারে এবং একটি ফি- দিয়ে সুবিধা নিতে পারে।

অঙ্কিতার সংস্থায় বর্তমানে ১৫০০-র বেশি গ্রাহক রয়েছে। কোম্পানির মূল অফিস আমেরিকার ইন্ডিয়ানাতে। এখনও পর্যন্ত ২৫টি সফ্টওয়্যার প্রোডাক্ট রয়েছে কোম্পানির ঝুলিতে। আজকের ইয়ং জেনারেশন যাঁরা ব্যবসা করতে চায়, যারা উদ্যোগপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, অঙ্কিতা নিঃসন্দেহেই তাঁদের কাছে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। 

ব্যবসায়িক সাফল্যের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন এই বঙ্গতনয়া। ২০১৫ সালে যে কোম্পানি শুরু হয়েছিল মাত্র ২টি ভাড়া করা কম্পিউটার দিয়ে, গত ছয় বছরে সেই সংস্থার উত্থান হয়েছে উল্কার গতিতে৷  ২০২১ সালে জিনের সঙ্গে যখন গাঁটছড়া বাঁধেন অঙ্কিতা,তখন তাঁদের কোম্পানির বার্ষিক আয় ছিল ১২ মিলিয়ন ডলার৷ তাঁর পরিমাণ এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা।