স্ত্রীর মাধ্যমে পরিচয়, কীভাবে অয়নের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলেন শ্বেতা? এই গ্ল্যামার গার্লের আসল পরিচয় কী?

স্ত্রীর মাধ্যমে পরিচয়, কীভাবে অয়নের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলেন শ্বেতা? এই গ্ল্যামার গার্লের আসল পরিচয় কী?

কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতিতে ইতিমধ্যেই ইডি-সিবিআই-এর জালে ধরা পড়েছেন তাবড় তাবড় নেতারা৷ শিকড়ে টান পড়তেই উঠে এসেছে একের পর এক কেউকেটার নাম৷ কুন্তল-শান্তনুর পর সে তালিকায় নবতম সংযোজন অয়ন শীল৷ পেশায় ব্যবসায়ী৷ মূলত প্রোমোটারি ব্যবসা রয়েছে তাঁর৷ কিন্তু সেই ব্যবসার আড়ালে তিনি যা যা কাণ্ড ঘটিয়েছেন, তাতে পিছনে পড়তে পারে কুন্তল-শান্তনুও৷ প্রতারণার পথে তাঁর হাত বেশ লম্বা৷ পুরসভা থেকে স্কুল হয়ে টলিউড, সর্বত্রই পৌঁছে গিয়েছে তাঁর সেই অদৃশ্য হাত। তবে অয়ন ধরা পড়তে যাঁরা নাম সবচেয়ে বেশি চর্চায়, তিনি হলে তাঁর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী শ্বেতা চক্রবর্তী৷ 

আরও পড়ুন- কত সম্পত্তি কুন্তলের নামে? আদালতে ১০৪ পাতার চার্জশিট ইডির

এর আগেও নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িয়েছে বিনোদন জগতের নাম৷ চর্চায় উঠে এসেছে একের পর এক নারী চরিত্র৷ যাঁদের সঙ্গে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িয়ে রয়েছে ‘গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ড’-এর নাম৷ অয়নের ঘনিষ্ঠ বান্ধবীও ব্যতিক্রম নন৷ বিনোদন জগতের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত অয়ন শীলের রহস্যময় বান্ধবী শ্বেতা চক্রবর্তী। তাঁর গ্ল্যামারের ছটায় চোখ আটকেছে অনেকেরই। 

শ্বেতার বাড়ি নৈহাটি বিজয়নগরে। কামারহাটি পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার পদে দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন শ্বেতা। পাশাপাশি চলত মডেলিং-এর কাজ৷  বাবা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রাক্তন কর্মী। অয়নের স্ত্রীর মাধ্যমেই হয়েছিল তাঁদের আলাপ৷ পরবর্তী সময়ে শান্তনু ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী অয়ন শীলের প্রোমোটারির ব্যবসা দেখভাল করতেন শ্বেতা৷ অয়নের প্রোমোটিংয়ের ব্যবসার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরও ছিলেন শ্বেতা। তদন্তে নেমে ইডি জানতে পেরেছে, শ্বেতাকে একটি দামি গাড়িও উপহার দিয়েছিলেন অয়ন। যে গাড়ির রসিদ মিলেছে অয়নের দফতরে৷ এছাড়াও মিলেছে অয়নের সঙ্গে শ্বেতার যৌথ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ৷ সেই সূত্র ধরেই  ইডি আধিকারিকেরা শ্বেতাকে তলব করা হয়েছে৷ 

এদিন শ্বেতার পাড়ায় গিয়ে দেখা গেল সকাল থেকেই নাকি বাড়ির দরজা জানালা সব বন্ধ। তবে অত্যুৎসাহী প্রতিবেশীরা জটলা পাকিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন গলিতে। সাংবাদিকদের দেখে অনেকেই সরে পড়লেন। কেউ কেউ আবার এগিয়ে এসে মুখ খুললেন৷ জানা গেল, প্রতিদিন সকাল সাড়ে নটা নাগাদ একটা এসইউভি গাড়ি এসে দাঁড়াত শ্বেতার বাড়ির সামনে। সকাল সকাল ‘ফিটফাট’ হয়ে ল্যাপটপ ব্যাগ নিয়ে সেই গাড়িতে উঠে চলে যেতেন শ্বেতা।

শ্বেতার পরিবার স্বচ্ছল। তিনি নিজেও সিভিল ইঞ্জিনিয়ার৷ কামারহাটি পৌরসভায় ইঞ্জিনিয়ার পদে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। নিয়োগ দুর্নীতিতে শ্বেতার নাম জড়ানোর পর কামারহাটি পৌরসভার পুরপ্রধান গোপাল সাহা বলেন, “২০১৬ সালে এই পৌরসভায় সিভিল ইঞ্জিনিয়র পদে যোগ দেন শ্বেতা চক্রবর্তী। অফিসের কাজ ছাড়া ওঁর সঙ্গে অন্য কোনও কথাবার্তা হত না। অয়ন কাজের সূত্রে একবারই কামারাহাটি পৌরসভায় এসেছিলেন৷ যদি জানতাম এই ধরনের ঘটনা ঘটবে, তাহলে নিয়োগই করতাম না। এই ধরনের ঘটনা খুবই দুঃখজনক।’’

নৈহাটির বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন শ্বেতা। তাঁর ভাই থাকেন কল্যাণীতে৷  জানা যাচ্ছে, ব্যবসায় শ্বেতা ছিলেন অয়নের ডানহাত। প্রোমোটারির ব্যবসা দেখভালের দায়িত্ব ছিল তাঁর হাতেই৷ ইতিমধ্যেই শ্বেতার সঙ্গে অয়নের যৌথ অ্যাকাউন্টের হদিশ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। তাতে মোটা অঙ্কের লেনদেনও হয়েছে৷ এছাড়া বেশ কিছু জায়গায় তাঁদের ফ্ল্যাটও রয়েছে। উল্লেখ্য বিষয় হল, অয়ন শীলের বাড়িতে ইডির অভিযানের আগেই সেই খবর পেয়েছিলেন এই বান্ধবী। তাঁকে সাবধানও করেছিলেন৷ তদন্তকারীরা মনে করছেন, এই শ্বেতারও হাত অনেক দূর লম্বা।