শ্রমিক থেকে কেরানি, দর ছিল চার লাখ থেকে সাত লাখ! ওএমআর বদলে বেলাগাম দুর্নীতি, ইডি সূত্রে দাবি

শ্রমিক থেকে কেরানি, দর ছিল চার লাখ থেকে সাত লাখ! ওএমআর বদলে বেলাগাম দুর্নীতি, ইডি সূত্রে দাবি

কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে কেঁচো খুড়তে কেউটে৷ প্রকাশ্যে চাকরি বিক্রির ‘রেট চার্ট’৷ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী অয়ন শীলের বাড়িতে হানা দিয়ে তা উদ্ধার করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)৷ নির্ধারিত ‘রেট’ মেনে টাকা দিলেই চাকরি ছিল নিশ্চিত। টাকাই ছিল সব৷ তা সে চাকরিপ্রার্থী খাতায় কিছু লিখুক আর নাই লিখুক৷ অদৃশ্য শক্তিতে বদলে যেত খাতা। একই সঙ্গে ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, অয়নের তৈরি করা চাকরি ‘বিক্রি’র ‘রেট চার্ট’ও।

আরও পড়ুন- রাজ্যের প্রায় সব দফতরে দুর্নীতি! ৬০ পুরসভায় ৫ হাজার চাকরি, বিস্ফোরক ইডি

হুগলির প্রোমোটার অয়ন শীলের বিরুদ্ধে পুরসভার চাকরি ‘বিক্রি’র প্রমাণ পেয়েছে ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, অয়নের বাড়ি থেকে বরাহনগর, কামারহাটি, পানিহাটি, উত্তর এবং দক্ষিণ দমদম-সহ বহু পুরসভার তথ্য উদ্ধার হয়েছে৷ যা দেখে  অনুমান, ওই সব পুরসভায় চাকরি ‘বিক্রি’ করে থাকতে পারেন অয়ন। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা মনে করছেন, অন্তত ৬০টি পুরসভায় বিভিন্ন পদে চাকরি নিয়ে কারবার করেছিলেন তিনি৷ সম্ভবত এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২০১৪-২০১৫ সাল থেকে। কত দিন ধরে এই ‘চাকরি বিক্রি’র কারবার চলেছে, সেটাই খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা গোয়েন্দারা।

ইডির অফিসাররা জানতে পেরেছেন, ওই পুরসভাগুলিতে বিভিন্ন পদে চাকরি বিক্রির কারবারি ছিলেন অয়ন। শ্রমিক থেকে কেরানি, গাড়িচালক থেকে গ্রুপ-সি- প্রতিটি পদের জন্য চাকরির ‘মূল্য’ ছিল ভিন্ন। চাকরির ন্যূনতম মূল্য ছিল ৪ লক্ষ টাকা। সর্বোচ্চ ৭-৮ লক্ষ টাকা। প্রার্থীর চাহিদা ও আর্থিক পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করেও মাঝেমধ্যে বদলে যেত দর। তবে কোনও ভাবেই ৪ লক্ষের কমে ‘রেট’ নামত না৷ তেমনটাই জানা যাচ্ছে ইডির সূত্রে৷

জানা গিয়েছে, সাধারণ শ্রমিকের চাকরির জন্য ৪ লক্ষ টাকা নিতেন হুগলির এই প্রমোটার। কেরানির পদের জন্য ৫ লক্ষ, গাড়িচালক হতে চাইলে ৪ লক্ষ টাকা আর গ্রুপ-সি-র জন্য দিতে হত ৭-৮ লক্ষ টাকা। ইডি সূত্রে খবর, ওএমআর শিট বিকৃত করা অয়নের  কাছে কোনও ব্যাপারই ছিল না! এর জন্য যে সকল পদ্ধতির প্রয়োগ হত, তা ছিল অয়নের নখদর্পনে৷ চাকরিপ্রার্থীদের কাজ ছিল শুধু বরাদ্দ টাকা দিয়ে দেওয়া৷ সেই সঙ্গে উপস্থিত থাকতে হত পরীক্ষার হলে। ইডির ওই সূত্রের দাবি, পরীক্ষার্থীদের ভুলে ভরা খাতা ‘যোগ্য’ করে তোলার দায়িত্ব ছিল অয়নের। এর জন্য কখনও নকল ওএমআর শিট তৈরি করা হয়, কখনও আবার পুরোপুরি পাল্টে ফেলা হত উত্তরপত্র৷