রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা মঞ্চে আদিবাসী নৃত্যে পা মিলিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীও, বিশেষ বার্তা দিতেই এই পদক্ষেপ?

রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা মঞ্চে আদিবাসী নৃত্যে পা মিলিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীও, বিশেষ বার্তা দিতেই এই পদক্ষেপ?

নিজস্ব প্রতিনিধি: রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে রাজ্য সরকারের তরফে দেওয়া নাগরিক সংবর্ধনা মঞ্চে দেখা গেল আদিবাসী নৃত্য। তাতে পা মেলালেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা দেখে আপ্লুত দ্রৌপদী। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশংসায় ভরিয়েছেন তিনি। রাজনৈতিক মহল মনে করছে আদিবাসী সমাজকে বিশেষ বার্তা দেওয়ার জন্যই মুখ্যমন্ত্রীর এই কৌশল। কোন প্রেক্ষাপট থেকে এমন ভাবনা ভেবে থাকতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী? এ বিষয়ে উঠে আসছে গত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেওয়া মাস্টার স্ট্রোকের বিষয়টি।

 

রাজনীতির কারবারিরা বারবার একটা কথাই বলেন যে, কোনও বিষয় নিয়ে সবার ভাবনা যেখানে  শেষ হয় ঠিক সেখান থেকেই ভাবা শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী  নরেন্দ্র মোদি। আর সেই ভাবনা থেকেই আদিবাসী সমাজের অন্যতম ব্যক্তিত্ব দ্রৌপদী মুর্মুকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী করেছিল বিজেপি তথা এনডিএ। প্রত্যাশা মতোই বিপুল ব্যবধানে জয় পেয়েছিলেন দ্রৌপদী। সেখানে বিরোধী জোটের প্রার্থী নির্বাচনের ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার ইচ্ছায় বিরোধী জোট রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী করেছিল যশবন্ত সিংকে। সেই পদক্ষেপ যে কত বড় ভুল হয়েছিল তা কিছুদিন পরেই বুঝতে পারেন মমতা। কারণ বিরোধী জোট তাদের প্রার্থী ঘোষণার পরই বিজেপি জানিয়ে দেয় তারা প্রার্থী করছে দ্রৌপদী মুর্মুকে। এভাবে যে আদিবাসী  সমাজকে অসামান্য বার্তা দিতে পেরেছে গেরুয়া শিবির তা স্বীকার করে নেয় প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল। তখন মমতাকে বলতে শোনা গিয়েছিল তাঁরা যদি আগে জানতেন এ কথা তাহলে হয়ত যশবন্ত সিংকে প্রার্থী করতেন না। কিন্তু তারপরেও মমতা তথা বিরোধী জোট তাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করেনি। তাতে মমতা বা তৃণমূলের গায়ে আদিবাসী বিরোধিতার তকমা সেঁটে গিয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করে। সেই জায়গা থেকে রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া নাগরিক  সংবর্ধনার মঞ্চে আদিবাসী নৃত্যের ব্যবস্থা করে মুখ্যমন্ত্রী কার্যত আদিবাসী সমাজকে এই বার্তাই দিতে চাইলেন যে, তিনি তাঁদের কতটা সম্মান বা শ্রদ্ধা করেন। আসলে এভাবে তিনি ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা করেছেন বলেই মনে করা হচ্ছে।

 

পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, উত্তরবঙ্গের একাংশের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের বহু মানুষ রয়েছেন। গত লোকসভা নির্বাচনে এই জেলাগুলির সিংহভাগ আসন বিজেপি জিতেছিল। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনেও বিজেপি আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে ভাল ফল করবে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। যেভাবে আদিবাসী সম্প্রদায়ের অন্যতম ব্যক্তিত্ব দ্রৌপদী মুর্মুকে বিজেপি রাষ্ট্রপতি করেছে, তাতে আদিবাসী সমাজের আরও বেশি সমর্থন গেরুয়া শিবিরের দিকে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশের অন্তত আশিটি লোকসভা কেন্দ্রে আদিবাসী সম্প্রদায়ের উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি বিহার, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, ছত্তিশগড় প্রভৃতি রাজ্যের আদিবাসী অধ্যুষিত লোকসভা কেন্দ্রগুলিতে  বিজেপি তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের দাঁত ফোটাতে দেবে না বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। ঠিক সেই জায়গা থেকে দ্রৌপদী মুর্মুকে দেওয়া সংবর্ধনা মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী আদিবাসী সমাজের সমর্থন পেতে ধামসা মাদলের তালে পা মিলিয়েছেন বলে অনেকেরই ধারণা। এতে কতটা ড্যামেজ কন্ট্রোল হবে সেটা আগামী দিনেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × three =