নিজস্ব প্রতিনিধি: লোকসভা নির্বাচনের আগে ‘ইন্ডিয়া’ জোটে থাকা বিরোধীরা মসৃণ ভাবে নিজেদের মধ্যে আসন রফা করতে পারবে তো? এই প্রশ্নটাই দিন দিন বড় আকার নিচ্ছে। নতুন বছর পড়ে গিয়েছে। কিন্তু বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের মধ্যে থাকা দলগুলি এখনও পর্যন্ত আসন সমঝোতার রফা সূত্র বের করতে পারল না। অথচ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেডলাইন বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। একাধিক সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে কংগ্রেসের মাত্রাতিরিক্ত দাবি এর প্রধান কারণ। সূত্রের খবর কংগ্রেস একার শক্তিতেই বিভিন্ন রাজ্যে ২৯০টি আসনে লড়তে চায়। এছাড়া রাজ্যে রাজ্যে অন্যান্য দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আরও ১০০টি আসনে লড়তে চাইছে তারা। সবমিলিয়ে সংখ্যাটা প্রায় চারশোর কাছাকাছি চলে যাচ্ছে। যে দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব নয় অন্যান্য দলগুলির কাছে। আর তাতেই সমস্যার সমাধানে বেগ পেতে হচ্ছে সবাইকে, এমনটাই সূত্র মারফত খবর। দিল্লি, পাঞ্জাব, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র-সহ বেশ কিছু রাজ্যে আসন রফা করা যে অত্যন্ত কঠিন কাজ তা মেনে নিচ্ছেন বিরোধী দলগুলির শীর্ষ নেতৃত্ব। আর পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলে জোট হওয়ার সম্ভাবনা কার্যত নেই বললেই চলে।
তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার বলেছেন ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আসন রফার কাজ পুরোপুরি শেষ করে ফেলতে হবে। তাতে সায় দিয়েছিল আম আদমি পার্টি, সমাজবাদী পার্টি-সহ বিভিন্ন দল। মমতা কিছুদিন আগেই বলেছিলেন কংগ্রেসকে তিনশো আসন দিয়ে অন্যান্য দল বাকি ২৪৩ আসনে লড়াই করুক। কিন্তু সোমবার কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে অন্তত পক্ষে ৩৯০ আসনে তারা লড়তে চাইছে। সেখানে মহারাষ্ট্রে ২০, তামিলনাড়ুতে ১০, উত্তরপ্রদেশে অন্তত ১৮টি আসনে কংগ্রেস লড়তে চায়। এছাড়া মধ্যপ্রদেশ, অসম, ছত্তিশগড়, রাজস্থান, কর্ণাটক, হিমাচল প্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড, অসম, তেলেঙ্গানা, গুজরাটের মতো রাজ্যে কংগ্রেস অন্য কাউকে কার্যত আসন ছাড়তে চাইছে না বলেই খবর।
অন্যদিকে শিবসেনা (উদ্ধব গোষ্ঠী) মহারাষ্ট্রে ২৩টি আসন দাবি করেছে। যার বিরোধিতা করছে কংগ্রেস এবং এনসিপি। আর উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসকে প্রাথমিকভাবে দশটি আসন ছাড়তে রাজি হয়েছে সমাজবাদী পার্টি। বিহারেও কংগ্রেসকে খুব বেশি আসন ছাড়তে চাইছে না জেডিইউ এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দল। একই সমস্যা দেখা দিয়েছে দিল্লি এবং পাঞ্জাবেও। দুটি রাজ্যেই ক্ষমতায় রয়েছে আম আদমি পার্টি। তাই দুটি রাজ্যেই প্রায় সমস্ত আসনে লড়তে চায় অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল। এতেই স্পষ্ট আসন রফা নিয়ে কথাবার্তা শুরু হতেই সমস্যা দেখা দিয়েছে। মূলত সমস্যা হচ্ছে কংগ্রেসের দাবি নিয়েই। রাজ্যে রাজ্যে তাদের শক্তি আর আগের মতো নেই, এই চরম সত্যিটা কংগ্রেস বুঝতে চাইছে না বলে অন্যান্যদের দাবি। পাল্টা কংগ্রেসের বক্তব্য, দেশের অধিকাংশ রাজ্যে বিজেপির প্রধান ও একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী তারাই। তাই কংগ্রেসের সিংহভাগ আসনে লড়াই করা দরকার বলে শতাব্দী প্রাচীন দলটি মনে করে। বলাবাহুল্য এই জট সহজে কাটবে না। আর তাতেই আসন রফা নিয়ে রাজ্যে রাজ্যে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।