মমতার বাড়িতে বৈঠকের পর থেকেই ‘বেসুরো’ ফিরহাদ? দুই মন্ত্রীর বক্তব্যের উল্টো সুর

মমতার বাড়িতে বৈঠকের পর থেকেই ‘বেসুরো’ ফিরহাদ? দুই মন্ত্রীর বক্তব্যের উল্টো সুর

নিজস্ব প্রতিনিধি: তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবচেয়ে আস্থাভাজন নেতাদের মধ্যে সবার আগে যাদের নাম আসবে তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। কিন্তু কিছুদিন আগে কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে দলীয় বৈঠকের পর থেকেই ফিরহাদ বেসুরো বাজছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।কলকাতা কর্পোরেশনের বাইরে অন্য বিষয়ে তিনি যাতে কোনও মন্তব্য না করেন তা নিয়ে দলনেত্রী  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেদিন ফিরহাদকে সতর্ক করে দিয়েছেন বলেই খবর। সেই বৈঠকের পরেই সংবাদমাধ্যমের একটি প্রশ্নের জবাবে কলকাতার মেয়রকে কিছুটা উদাসীন ভাবে বলতে শোনা যায়,” কন্ঠ আমার রুদ্ধ আজিকে বাঁশি সংগীতহারা…”।

 

আসলে সাম্প্রতিককালে মহার্ঘ ভাতা ইস্যুতে তিনি এমন কিছু মন্তব্য করেছেন যাতে অস্বস্তিতে  পড়তে হয়েছে রাজ্য সরকারকে। ধর্মতলায় শহিদ মিনার মঞ্চে যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের অনশন নিয়েও তিনি যে মন্তব্য করেছেন তা নিয়ে ক্ষুব্ধ সরকারি কর্মীরা। এরপরই তাঁকে সব বিষয়ে কথা বলতে দলনেত্রী বারণ করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে সেই বৈঠকের দিন রাজ্যের উত্তরবঙ্গ মন্ত্রী উদয়ন গুহকেও সব বিষয়ে কথা না বলার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, এমনটাই সূত্রের খবর। কিন্তু উদয়নকেও থামানো যাচ্ছে না। আর উদয়নের চিরকুট দিয়ে চাকরি সংক্রান্ত বক্তব্য নিয়ে ফিরহাদ যেভাবে পাল্টা মন্তব্য করেছেন তাতে তাঁকে পুরোপুরি বেসুরো বলেই মনে করা হচ্ছে। আসলে ফিরহাদ যা বলছেন সেটা দলের লাইনের পুরো উল্টো মত। তাই এ ব্যাপারে দ্রুত মুখ খুলতে হয়েছে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষকে। সব মিলিয়ে ফিরহাদের অবস্থান নিয়ে নতুন করে জল্পনা তৈরি হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।

 

নিয়োগ দুর্নীতিতে বাবা কমল গুহের বিরুদ্ধেও মুখ খুলেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ। উদয়নের অভিযোগ তাঁর বাবা প্রয়াত কমল গুহ বামফ্রন্ট সরকারের আমলে যখন মন্ত্রী ছিলেন তখন তিনিও অনিয়ম করে বহু বাম কর্মীদের চাকরি দিয়েছিলেন। যা দুর্নীতি ছাড়া কিছুই নয়। আর সেটা নিয়েই ফিরহাদ সরাসরি উদয়ন গুহকে নিশানা করে বলেছেন, “ও পাগলের মতো কি বকেছে জানা নেই। চিরকুটে কখনও লোক ঢোকানো যায় না। অন্তত একটা অ্যাপ্লিকেশন লাগে”। অর্থাৎ তৃণমূল যে অভিযোগ তুলছে বামেদের বিরুদ্ধে, কার্যত তার বিরোধিতাই করেছেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী। ফিরহাদের এই বক্তব্যের পরেই কুণাল সরাসরি উদয়নের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি স্পষ্ট বলেছেন উদয়ন যে মন্তব্য করেছেন তা শতকরা একশো ভাগ সঠিক। শুধু উদয়ন ইস্যুতে নয়, রাজ্যের আরেক মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সিপিএমকে সামাজিক বয়কটের ডাক দিয়েছেন। দশ বছর আগেও তিনি এমন কথা বলেছিলেন। কিন্তু ফিরহাদ সেই বক্তব্যেরও বিরোধিতা করেছেন।

 

সেখানে তিনি বলেছেন, সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই। ফিরহাদ আরও বলেন, যদি সিপিএম নেতাকর্মীদের অসুস্থতার খবর পান তিনি, তাহলে অবশ্যই মানবিকতার খাতিরে তিনি তাঁদের পাশেই দাঁড়াবেন। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে হঠাৎ করেই ফিরহাদের ভোলবদল হয়েছে। আর তাতেই তাঁকে নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা এইরকম যে, এ কথা বলার অভিঘাত রাজ্য রাজনীতিতে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে কি হতে পারে সেটা ফিরহাদের মতো পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ নিশ্চয়ই বোঝেন। তাই নিশ্চয়ই ভেবেচিন্তে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। তাই প্রশ্ন, কি কারণ রয়েছে সেখানে? এর উত্তর খুঁজতে ব্যস্ত সবাই। তাঁর এমন মন্তব্যে তৃণমূল নিশ্চিত ভাবে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে। অযথা বিরোধীদের হাতে ইস্যু তুলে দিচ্ছেন তিনি। কিন্তু কেন এমন করছেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী? একজন আদর্শ রাজনীতিবিদের যে ভাবমূর্তি থাকা প্রয়োজন সেটার লক্ষ্যেই এমন আচরণ তাঁর? তিনি অন্য ধারার রাজনীতি করতে চান, এই বার্তাই দিতে চাইছেন? সব মিলিয়ে ফিরহাদের এই ধরনের বেসুরো মন্তব্যে যথেষ্ট ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। এই পরিস্থিতিতে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন করে তাঁকে সতর্ক করেন কিনা এখন সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty + 14 =