কলকাতা: শুরু থেকেই কেন্দ্রের জাতীয় শিক্ষানীতির প্রবল বিরোধিতা করে এসেছে রাজ্য সরকার৷ কেন্দ্রের এই শিক্ষা নীতিকে এক সময় ‘তুঘলকি’ বলেও দাবি করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু৷ অথচ ২০২৩-এ একেবারে উলটপুরাণ! জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পদক্ষেপ করল তৃণমূল সরকার। যার জেরে পাল্টাতে চলেছে স্নাতক স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থা৷ আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে আর তিন বছর নয়, স্নাতকের পাঠ্যক্রম হবে চার বছরের৷ রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত বদলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে৷
আরও পড়ুন- মুখ্যমন্ত্রীর মউ স্বাক্ষর দোরগোড়ায়, শহরে শাখা প্রায় নিশ্চিত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের
জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসারী আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতক স্তরের ‘কারিকুলাম অ্যান্ড ক্রেডিট ফ্রেমওয়ার্ক’ কার্যকর করতে রাজ্যের সাহায্যপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার উচ্চশিক্ষা দফতরের সহ-সচিবের স্বাক্ষরিত এই নির্দেশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির রেজিস্ট্রারদের কাছে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি বাস্তবায়নের জন্য গত ৩১ জানুয়ারি ইউজিসি-র পক্ষ থেকে সব রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে চিঠি দেওয়া হয়৷ তার পরেই এই নির্দেশ।
শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে জাতীয় শিক্ষানীতির একাধিক নিয়ম কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে৷ মূলত নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির ক্রেডিড বেসড সিস্টেম প্রয়োগ করতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৪ বছরের স্নাতক স্তরের পাঠ্যক্রম। পাশাপাশি পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন আনার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে উচ্চ শিক্ষা দফতরের চিঠিতে৷
প্রসঙ্গত, গত বছর নয়া জাতীয় শিক্ষানীতির প্রস্তাবিত খসড়ায় স্নাতক স্তরের পাঠ্যক্রম ৩ বছর থেকে বাড়িয়ে ৪ বছর এবং স্নাতকোত্তর স্তরের পাঠ্যক্রম ২ বছর থেকে কমিয়ে ১ বছর করা হয়। পাশাপাশি ক্রেডিড বেসড সিস্টেম প্রয়োগের উপরেও জোর দেওয়া হয়। এর ফলে ৪ বছরের স্নাতকস্তরেই পড়ুয়ারা গবেষণা করতে পারবেন। অনার্স ডিগ্রি পাওয়ার সময় পড়ুয়ারা সংশ্লিষ্ট বিষয়টিতে গবেষণা করবেন এবং স্পেশালাইজেশন করবেন৷ অন্যদিকে, চার বছরের স্নাতকরা সরাসরি পিএইচডির জন্যে আবেদনও জানাতে পারবেন। এর জন্য অবশ্য ওই পড়ুয়ার ন্যূনতম সিজিপিএ ৭.৫ হতে হবে।
‘কারিকুলাম অ্যান্ড ক্রেডিট ফ্রেমওয়ার্ক’-এর আরও একটি সুবিধা রয়েছে৷ কোনও পড়ুয়া এই চার বছরের কোর্স মাঝ পথে ছেড়ে দিলে আবারও তা শুরু করার সুযোগ পাবেন। তবে সারা ভারত সেভ এডুকেশন কমিটির সম্পাদক তরুণকান্তি নস্করের কথায়, জাতীয় শিক্ষানীতিতে চার বছরের ডিগ্রি কোর্স ও মাল্টিপল এগজিট ও এন্ট্রির যে কথা বলা হয়েছিল, তা রাজ্য সরকার কার্যকর করার মাধ্যমে ওই জনবিরোধী শিক্ষানীতি চালু করা শুরু করল।
অন্যদিকে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার কেন্দ্রের জাতীয় শিক্ষানীতি হুবহু মেনে নিয়ে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নির্দেশিকা পাঠিয়ে দিল৷ আসলে রাজ্য সরকার উচ্চশিক্ষা নিয়ে ভাবিত নয়৷ রাজ্যের সরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দিতে চায়৷ অনেক রাজ্য এই শিক্ষানীতি গ্রহণ করেনি৷ কিন্তু এই ধরনের নির্দেশ দিয়ে রাজ্য সরকার বুঝিয়ে দিল, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সঙ্গে তাদের কোনও পার্থক্য নেই৷’’
এদিকে, নয়া শিক্ষানীতিতে ডিগ্রি পেতে গেলে এক বছর বেশি পড়তে হবে, তাতে ড্রপ আউটের সংখ্যা বাড়বে বলেও শিক্ষাবিদদের একাংশের আশঙ্কা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (কুটা) সাধারণ সম্পাদক সনাতন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এই বিষয়ে আলোচনার সুযোগই পেলাম না! সিদ্ধান্ত হয়ে গেল৷’’
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>