কলকাতা: প্রযুক্তির উপর ভর করে উন্নতির পথে এগিয়ে চলেছে আধুনিক পৃথিবী। প্রুযুক্তি ছাড়া আমরা এক পাও চলতে পারি না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রযুক্তির ছত্রছায়ায় যেন বিকশিত হচ্ছে সভ্যতা। আর প্রযুক্তির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল ব্যাটারি। ব্যাটারি বা তড়িৎকোষ প্রায় প্রতিটি বৈদ্যুতিন যন্ত্রের অঙ্গ৷ গাড়ি থেকে শুরু করে মোবাইল, ক্যামেরা, ল্যাপটপ, সর্বত্রই ব্যাটারি বহুল ব্যবহার। সেই ব্যাটারি শিল্পের ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ই এবার ভারতের হাতে।
আরও পড়ুন- ‘সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ ভোলার নয়’, পুলওয়ামা শহিদদের স্মরণ প্রধানমন্ত্রীর
জম্মু ও কাশ্মীরের পার্বত্য এলাকায় লিথিয়াম খনির হদিস পেয়েছে ভারতীয় ভূতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ বা জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (জিএসআই)। বিশ্ব বাজারে যে ধাতুর গুরুত্ব অপরিসীম। মূল্যের বিচারে একে ‘সাদা সোনা’ও বলে থাকেন অনেকে৷ বিশেষজ্ঞদের দাবি, ভারতের উত্তর পশ্চিম উপত্যকার নীচে প্রায় ৫৯ লক্ষ টন লিথিয়াম লুকিয়ে রয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ লিথিয়াম যদি যথাযথ প্রক্রিয়ায় নিষ্কাশন করে কাজে লাগানো যায়, তাহলে নতুন জোয়ার আসবে ভারতের অর্থনীতিতে৷
মনে করা হচ্ছে, এই ‘খাজানা’ দিয়েই ঘুরে দাঁড়াবে ভারতের ব্যাটারি শিল্প। এত দিন বিদেশ থেকে আস্ত ব্যাটারি বা ব্যাটারি তৈরির কাঁচামাল আমদানি করতে হত ভারতকে। সদ্য আবিষ্কৃত এই লিথিয়াম খনি ক্রিয়াশীল হয়ে গেল ভারততে আর বিদেশ থেকে ব্যাটারি বা এর উপাদন আমদানি করতে হবে না৷ নিজস্ব সম্পদ দিয়েই দেশে ব্যাটারি তৈরি করা যাবে। এমনকি তা বিদেশের বাজারে রফতানিও করতে পারবেন উৎপাদকেরা।
বিশ্ব বাজারে ব্যাটারি শিল্পে ভারতের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে চিন। সে দেশে লিথিয়ামের খনি রয়েছে। তবে সেই খনিতে লিথিয়ামের পরিমাণ খুব বেশি নয়। ২০২০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারা বিশ্বের লিথিয়াম ভান্ডারের ৭.৯ শতাংশ রয়েছে চিনের মাটিতে। সবচেয়ে বেশে লিথিয়াম রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকায়৷
চিনে লিথিয়ামের পরিমাণ খুব বেশি না হলেও বেজিং কিন্তু লিথিয়ামের উৎপাদনে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। খনি থেকে লিথিয়াম তুলে তা পরিশোধন করার প্রক্রিয়া একেবারেই সহজ নয়। ভারতের হাতে সেই প্রযুক্তিও নেই। না থাকার যথেষ্ট কারণও রয়েছে৷ কারণ, এতদিন ভারতে লিথিয়ামের অস্তিত্ব কারও জানাই ছিল না৷
লিথিয়াম কী?
লিথিয়াম হল অতি বিক্রিয়াশীল, দাহ্য ধাতু। মাটির নীচে খনির মধ্যে এই ধাতুর আকরিক পাওয়া যায়। রং রুপোলি৷ স্পোডুমিন, পেটালাইট এবং লেপিডোলাইটের মতো খনিজ সঞ্চয়ে লিথিয়াম থাকে।
মূলত ব্যাটারি তৈরির কাজে লাগে লিথিয়াম ধাতু। ব্যাটারি শিল্পে এই ধাতুর গুরুত্ব অপরিসীম। বিরল এই ধাতুটির বিরুল চাহিদা থাকায় এর দামও আকাশছোঁয়া। যে কোনও বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতিতে লিথিয়াম ব্যবহৃত হয়। লিথিয়াম ধাতুর তৈরি ব্যাটারি বৈদ্যুতিন গাড়িতেও ব্যবহার করা হয়। ভারতে উৎপন্ন লিথিয়াম ব্যাটারি শিল্পেই জোয়ার আনবে না, এই ব্যাটারি গাড়িতে ব্যবহার করা হলে দেশের পরিবহণ ক্ষেত্রেও জোয়ার আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, লিথিয়াম খনি আবিষ্কারের ফলে ভারতের রাস্তায় বৈদ্যুতিন গাড়ির সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। আগামী ৫০ বছরের মধ্যে ভারতকে কার্বনমুক্ত করে তোলা সম্ভব হবে এই ধাতুর হাত ধরেই।
পাশাপাশি চিকিৎসা বিজ্ঞানেও লিথিয়ামের ব্যবহার রয়েছে। বেশ কিছু রোগের চিকিৎসায় এই ধাতু ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও কাচের তৈরি জিনিসপত্র শক্তিশালী করতেও লিথিয়াম ব্যবহার করা হয়ে থাকে৷ লিথিয়ামের ভূমিকা রয়েছে মৃৎশিল্পেও। লিথিয়াম প্রয়োগ করলে কাচ বা চিনামাটির দ্রব্যের গলন দ্রুত হয়৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>