জলপাইগুড়ি: সন্তানহারা আর্তনাদ! কোল খালি হওয়া যন্ত্রণা নিয়ে শোকে বিহ্বল এক মা হাতির ছটফটানি দেখল ডুয়ার্স! সাক্ষী থাকল এক আবেগঘন ঘটনার৷
আরও পড়ুন- ‘বিচারব্যবস্থায় কেউ কেউ ‘তল্পিবাহকে’র মতো কাজ করছে’, বিস্ফোরক অভিষেক
ওরা কথা বলতে পারে না ঠিকই৷ কিন্তু ওদেরও আবেগ আছে৷ আছে সন্তানের প্রতি স্নেহ-ভালোবাসা৷ সন্তানকে হারিয়ে এক মা হাতির হাহাকারের সেই দৃশ্যই দেখল ডুয়ার্সের মানুষ৷ মৃত সন্তানকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে প্রায় ৭ কিমি পথ পাড়ি দিল মা হাতি৷ পথ চলতে চলতে শুঁড় থেকে বারবার পড়ে যাচ্ছিল শাবকটি৷ মায়াভরে তাকে ততবার টেনে তোলে মা হাতি৷ আশা, একবার যদি তার পায়ে পায়ে পথ চলতে শুরু করে সে৷
শাবকের যে মৃত্যু হয়েছে, তা মানতে নারাজ মায়ের মন৷ তাই কখনও তাকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ঘুরে চলেছে, কখনও আবার চলছে ছোট্ট শাবককে জাগিয়ে তোলার মরিয়া চেষ্টা৷ মায়ের পরশে যদি প্রাণ ফিরে পায় সে৷ কিন্তু তা আর হওয়ার নয়৷ তবুও সন্তানের উঠে দাঁড়ানোর অপেক্ষায় উতলা মা হাতি৷
শাবকটির মৃত্যুর পর নিজেরাই গর্ত খুড়ে মাটি চাপা দিয়েছিল হাতির দল৷ কিন্তু সকাল হতেই মাটি সরিয়ে শাবকটিকে বার করে আনে মা হাতি৷ এর পর শুঁড়ে করে এক বাগান থেকে আরেক বাগান শুরু হয় তার ঘোরাঘুরি৷ এখনও মৃত শাহকটিকে এখনও ঘিরে রেখেছে তারা৷ সম্ভবত সেই কারণেই শাবকটিকে উদ্ধার করতে পারেনি বন দফতরের কর্মীরা৷ কী ভাবে হাতির দল মৃত শাহকটিকে আগলে রেখেছে, সেই ছবি ধরা পড়েছে বনদফতরের ড্রোন ক্যামেরায়৷ সেখানে দেখা গিয়েছে, মা হাতি তো বটেই, মৃত শাবকটিকে ঘিরে রেখেছে ১০ থেকে ১৫টি হাতি৷ মৃত শাবককে নিয়েই রেড ব্যাঙ্ক চা বাগানে দাঁড়িয়ে রয়েছে তারা৷ তারাও জানে যে এই শাবকটি আর উঠে দাঁড়াবে না৷ কিন্তু, তাকে ফেলে যেতেও চাইছে না৷ পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্যের চলে যাওয়ার বেদনায় তারাও বিহ্বল৷
শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত শাবকটিকে নিয়ে দাঁড়িয়েছিল মা হাতি৷ রাতেই সেখানে পৌঁছয় আরও ৩০ থেকে ৪০টি হাতির দল৷ রাত পেরিয়ে সকাল হলেও, পাল্টায়নি দৃশ্য৷ শনিবার সকালেও মৃত শাবককে নিয়ে মা হাতির অস্থিরতা দেখে বুক কেঁপেছে অনেকেরই৷
স্থানীয়দের কথায়, সম্ভবত বৃহস্পতিবার রাতেই হস্তি শাবকটির মৃত্যু হয়েছে৷ শুক্রবার সকালে মৃত শাবককে শুঁড়ে করে টেনে নিয়ে যাওয়ার সেই দৃশ্য চোখে পড়ে৷ খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিন্নাগুড়ি বন্যপ্রাণ বিভাগ ও ডায়না রেঞ্জের বনকর্মীরা৷ ঘটনাস্থলে আসেন এডিএফও জন্মেঞ্জয় পাল ও রেঞ্জার শুভাশিস রায়৷ কিন্তু শনিবার দুপুর পর্যন্ত ওই মৃত শাবকটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>