ফের বিতর্কে অখিল, শিশির অধিকারীকে কটাক্ষ! রাজনীতিতে কু-কথা নতুন নয়, এ যেন চলছে চলবে…

ফের বিতর্কে অখিল, শিশির অধিকারীকে কটাক্ষ! রাজনীতিতে কু-কথা নতুন নয়, এ যেন চলছে চলবে…

নিজস্ব প্রতিনিধি: তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের কারা প্রতিমন্ত্রী অখিল গিরি রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে যে কু-মন্তব্য করছেন, তা নিয়ে এখনও বিতর্ক চলছে। আর সেই রেশ কাটার আগেই মালদার তৃণমূল বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র এবার প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্পর্কে আবার বিতর্কিত কথা বলেছেন।  তাঁদের দুর্যোধন এবং দুঃশাসনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এখানেই শেষ নয়, অখিল গিরি আবারও কু-কথা বলেছেন। এবার তাঁর টার্গেট কাঁথির বর্তমান সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রবীণ রাজনীতিক শিশির অধিকারী। অখিলের অভিযোগ তাঁকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নাকি নিয়মিত কুরুচিকর আক্রমণ করে চলেছেন। চেহারা নিয়ে তাঁকে নাকি কাকের মতো দেখতে বলে আক্রমণ করেছেন শুভেন্দু। এমনকী তিনি প্রতিমন্ত্রী বলেও তাঁকে কটাক্ষ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। সেই সূত্রেই তিনি সম্প্রতি বলেছেন, “আমি স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বলে আমাকে হাফপ্যান্ট মন্ত্রী বলা হচ্ছে। তাহলে শিশির অধিকারী কেন্দ্রের কি মন্ত্রী ছিলেন? হাফপ্যান্টের ছোট যেটা হয় তাকে তো নেংটি বলে। উনি কি তাহলে নেংটি মন্ত্রী?” এখানেই শেষ নয়। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুকে ইঙ্গিত করে বলেন, “ওর চামড়াটা শুধু সাদা, ভেতরটা ময়লা। জামা তুলুন পুরো ক্যানসার”। সব মিলিয়ে বঙ্গ রাজনীতিতে এখন বিতর্কিত কথার যেন জোয়ার বইছে।

একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের স্লোগান ছিল ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’। সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে কটাক্ষ করে দিলীপ ঘোষ চলতি বছরে গোয়া নির্বাচনের আগে  বলেছিলেন, “বাংলায় বলেন বাংলার মেয়ে। গোয়ায় গিয়ে বলেন গোয়ার মেয়ে। বাপ-মায়ের ঠিকানা নেই নাকি। যেখানে যা ইচ্ছা বলে দেবেন, এটা হয় নাকি?” স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে তখন সোচ্চার হয়েছিল তৃণমূল। তবে শুধু বর্তমান কাল বলে নয়, অতীতেও রাজ্য রাজনীতিতে বহু কু-কথা বলতে শোনা গিয়েছে নেতাদের।

প্রবাদপ্রতিম সিপিএম নেতা প্রমোদ দাশগুপ্ত সত্তরের দশকে একটি ঘটনা নিয়ে অত্যন্ত কুরুচিকর ভাষায় পুলিশ সম্পর্কে বলেছিলেন, “পুলিশের বন্দুকে কি নিরোধ পরানো আছে? না হলে গুলি বেরোচ্ছে না কেন?” যা নিয়ে সেই সময় রাজ্যজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এর পাশাপাশি অতীতে বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে সংবাদপত্রে লেখালেখি নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় সিপিএম নেতা বিমান বসুকে সাংবাদিকদের ‘বরাহনন্দন’ বলেছিলেন। একটা সময় তৎকালীন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে বিমান বলেছিলেন, “লালা বাংলা ছেড়ে পালা”। এমনকী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ অঙ্গভঙ্গিও করেছিলেন তিনি। যদিও পরে তিনি ক্ষমা চেয়েছিলেন ঘটনাটি নিয়ে। আর সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় সিপিএম নেতা বিনয় কোঙার সমাজকর্মী মেধা পাটেকরকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, সেখানে গেলে মহিলারা তাঁকে পশ্চাৎদেশ দেখাবেন। একজন মহিলা সম্পর্কে বিনয় কোঙার যে ভাষা ব্যবহার করেছিলেন তা নিয়ে সেই সময় সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। কু-কথা বলার অভিযোগ একাধিক বার উঠেছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও।

২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে একটি নির্বাচনী প্রচারসভায় নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ্য করে মমতাকে বলতে শোনা গিয়েছিল কোমরে দড়ি বেঁধে ঘোরানোর কথা। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে তুই-তোকারি সম্বোধন করে মমতা একাধিকবার আক্রমণ করেছেন বলে অভিযোগ। এছাড়া বিরোধীদের উদ্দেশ্য করে একটি সভায় মমতা বলেছিলেন, “মানুষের কোভিড হয়েছে, একটা টাকা দেয়নি। বলছে আমফানের টাকার হিসেব চাই। তুই টাকা দিয়েছিস যে তোকে হিসেব দেব!” আর তাপস পালের কু-কথা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে এখনও চর্চা হয়। কৃষ্ণনগরের তৎকালীন সাংসদ প্রয়াত তাপস পাল বিরোধী দলের মহিলা সদস্যদের ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে ধর্ষণ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। যা নিয়ে আলোড়ন পড়ে যায় রাজ্যে রাজনীতিতে। পরে চাপে পড়ে তিনি ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছিলেন। বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ একটা সময় সুশীল সমাজকে কুকুর বলে কটাক্ষ করেছিলেন। গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় দিলীপ ঘোষের পাশাপাশি বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসুকে হুমকি দিয়ে বলতে শোনা যায় জায়গায় জায়গায় শীতলকুচি হবে। সব মিলিয়ে বঙ্গ রাজনীতিতে কু-কথা বন্ধ করা  যাচ্ছে না। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে সব পক্ষকে ভাষা ব্যবহারে সংযত হতে হবে। তবেই হয়ত বন্ধ হবে কু-কথার স্রোত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × one =