কলকাতা: কলকনে ঠান্ডা হাওয়ায় কাঁপুনি ধরেছিল হাড়ে৷ বাংলা তো বটেই, গোটা উত্তর ভারত জুড়ে শুরু হয়েছিল শীতের দাপুটে ইনিংস৷ কিন্তু হঠাৎই ছন্দপতন৷ প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় আচমকাই উর্ধ্বমুখি পারদ৷ ঠান্ডা-গরমের লুকোচুরিতে ভোগান্তিতে মানুষ৷ খুসখুসে কাশি, হাল্কা জ্বর প্রায় ঘরে ঘরে। অনেকেই এটাকে ইনফ্লুয়েঞ্জা বা সাধারণ ভাইরাল জ্বর ভেবে গা করতে চাইছেন না৷ তবে এটা কিন্তু সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা নাও হতে পারে৷ ইনফ্লুয়েঞ্জার আড়ালেই বাড়ছে করোনার সংক্রমণ।
দক্ষিণ ভারতে করোনার উপরূপ জেএন.১-এর অস্তিত্ব মেলার পর থেকেই তৎপর কেন্দ্র৷ রাজ্যগুলিকে এখন থেকেই সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ বেপরোয়া সংক্রমণ ছড়ানোর আগেই লাগাম কষতে প্রস্তুত কেন্দ্র ও রাজ্য৷ তবে এরই মাঝে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে কোভিডের সংক্রমণ৷ গত কয়েক দিনে দেশের নানা প্রান্তে সংক্রমণের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী।
শনিবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৭৫২ জন। সেইসঙ্গে দেশে মোট করোনা রোগীর সংখ্যা এখন সাড়ে তিন হাজার ছুঁইছুঁই৷ গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় চার জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে৷ তাঁদের মধ্যে দু’জন কেরলের বাসিন্দা, এক জন রাজস্থান এবং এক জন কর্নাটকের বাসিন্দা। উদ্বেগ বাড়াচ্ছে জেএন.১৷ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে খবর, ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট ২২ জন করোনা আক্রান্তের শরীরে নতুন উপরূপ জেএন.১-এর অস্তিত্ব মিলেছে৷ জেএন.১ ওমিক্রনের সাব ভ্যারিয়েন্ট বিএ.২.৮৬-এর একটি মিউটেশন। আমেরিকার ‘ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)’ জানিয়েছে, ওমিক্রন এবং ওমিক্রনের সাবভ্যারিয়েন্ট জেএন.১ রূপ দু’টি প্রায় অভিন্ন। ওমিক্রনের স্পাইক প্রোটিনের সঙ্গে এর সামান্য পার্থক্য রয়েছে৷ এদের মধ্যে বড় কোনও তফাৎ নেই৷ এটিও এক জনের মধ্যে থেকে অন্যজনের শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ফলে শুধু ভারত নয়, নতুন উপরূপে গোটা বিশ্বের উদ্বেগ বেড়েছে
চিনে জেএন.১-এ আক্রান্ত করোনা রোগীর সংখ্যা হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে। হাসপাতালের বেডে জায়গা পাওয়া মুশকিল হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷ তবে লক্ষ্যনীয় বিষয় এই যে, এখনও পর্যন্ত এই উপরূপের প্রভাবে কারও মৃত্যু ঘটেনি৷ আমাদের দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় কেরল, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু এবং গুজরাতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনা নিয়ে এখন থেকে রাজ্যগুলিকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ইতিমধ্যেই প্রতিটি রাজ্যে কেন্দ্রের সতর্কবার্তা পৌঁছে গিয়েছে। রাজ্যগুলিও পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোমর বাঁধতে শুরু করেছে৷ আক্রান্তের হদিশ মিলেছে কলকাতাতেও৷ শুক্রবার পর্যন্ত শহরে মোট আট জনের দেহে ভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে৷
রাজস্থান, কর্নাটক, বিহার এবং অন্ধ্রপ্রদেশে স্বাস্থ্য দফতর করোনা পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠক ডেকেছে। তবে এখনই নতুন করে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা বা ঘুরতে যাওয়ায় উপর বিধিনিষেধ আরোপ করার মতো কোনও পরিকল্পনা নেই সরকারের৷