কলকাতা: রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের ঠিক পাশের গলি ধরে খানিকটা হাঁটলেই ১৪ নম্বর পার্সিবাগান লেন। সেখানে রয়েছে এক শতাব্দী প্রাচীন বাড়ি৷ খানিকটা সংস্কার করা হয়েছে বটে। তবে এই বাড়ির অপর অংশে এখনও নোনা ধরা দেওয়াল বহন করে চলেছে ‘শতাব্দীর ভার’৷ সেই বাড়ির গায়ে টিনের বোর্ডে লেখা ‘গিরীন্দ্রশেখর ক্লিনিক’। স্থানীয় লোকজনের কাছে এটি মানসিক রোগের চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবেই পরিচিত। শতবর্ষ পেরনো এই বাড়ি ও ক্লিনিকের পরতে পরতে ইতিহাসের গন্ধ৷ একসময় এই বাড়ি ছিল দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম আঁতুড়ঘর।
এই বাড়িতে থাকতেন চন্দ্রশেখর বসু। তাঁর চার ছেলে শশীশেখর বসু, রাজশেখর বসু, কৃষ্ণশেখর বসু এবং গিরীন্দ্রশেখর বসু। এই রাজশেখর বসুই বাংলা সাহিত্যের ‘পরশুরাম’৷ ১৯২২ সালে এখানে মনোরোগের ক্লিনিক খুলেছিলেন তাঁর ভাই গিরীন্দ্রশেখর। যা আজও ‘গিরীন্দ্রশেখর ক্লিনিক’ নামে চলছে। যদিও সেখানে ‘ইন্ডিয়ান সাইকো-অ্যানালিটিকাল সোসাইটি’র বোর্ড ঝোলানো হয়েছে৷ স্বাধীনতা আন্দোলন ও বিপ্লবীদের সঙ্গে এই পরিবারের সম্পর্কের কাহিনি লেখা আছে এই গলির গা ঘেঁষে তৈরি হওয়া ‘অনুশীলন সমিতি’র পাঁচিলে।
শোনা যায়, ১৯০৮ সালে মানিকতলায় বিপ্লবী ঋষি অরবিন্দ ঘোষ এবং তাঁর ভাই বারীন্দ্র ঘোষের নেতৃত্বে যে বোমাকাণ্ড ঘটেছিল, তার যাবতীয় সরঞ্জাম গিয়েছিল এই বাড়ি থেকেই। চার ভাই মিলে এই বাড়িতে গড়ে তোলেন ‘উৎকেন্দ্র সমিতি’। যেখানে স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে বিজ্ঞান, বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হত। এই বাড়িতে নিয়মিত আসা–যাওয়া ছিল জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, যতীন্দ্রনাথ সেন, সতীশ দাশগুপ্ত, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিধানচন্দ্র রায়, পুলিনবিহারী দাস, কাজি নজরুল ইসলামের মতো বিশিষ্টরা। কবি গুরুও নাকি দু’-একবার এসেছিলেন পার্সিবাগান লেনের এই ১৪ নম্বর বাড়িতে।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>