সমুদ্রে মিশছে বিষ, প্লাস্টিক খেয়ে মৃত্যুই কি গরু-হাঙরের ভবিতব্য

সমুদ্রে মিশছে বিষ, প্লাস্টিক খেয়ে মৃত্যুই কি গরু-হাঙরের ভবিতব্য

 কলকাতা:  প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ে বারবার সতর্ক করেছেন পরিবেশবিদরা৷  পদে পদে এর মাশুলও গুনতে হচ্ছে আমাদের৷ কিন্তু এতেও হুঁশ ফেরেনি শিক্ষিত সমাজের৷ প্লাস্টিক শুধু মানুষের জন্যই ক্ষতিকর নয়, নির্বিচারে কাড়ছে অবলা পশুদের প্রাণ৷ 

ওডিশার ঘটনা৷ রাস্তার ধারে পড়ে কাতরাচ্ছিল একটি গরু৷ পোষা নয় বলে নজর পড়তে অনেকটাই দেরি হয়ে যায়৷ অবশেষে স্থানীয় কিছু মানুষের উদ্যোগে গরুটিকে উদ্ধার করে পশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখানে ওষুধ, ইনজেকশনে কাজ না হওয়ায় অস্ত্রপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা৷ পেট কাটতেই অবাক কাণ্ড৷ ওডিশার সরকারি পশু চিকিৎসক দলের প্রধান সত্যনারায়ণ কর বলেন, ‘‘গরুটির পেট থেকে আমরা প্লাস্টিক ব্যাগ বার করে আনি৷ একটা-দুটো নয়৷ প্রায় ৩০ কেজি প্লাস্টিক উদ্ধার করা হয়৷ ওই প্লাস্টিক বার করা না গেলে গরুটা মরেই যেত৷’’

দেখা যাচ্ছে সচেতনতামূলক প্রচারের পরেও প্লাস্টিকের ব্যবহারে লাগাম টানা যায়নি৷ যে সকল জায়গা  থাকার কথা নয়, সেখান থেকেও উদ্ধার হচ্ছে প্লাস্টিক৷  যা পরিবেশবিদদেরও অবাক করেছে৷ সমতল থেকে পার্বত্য এলাকা, কিংবা সৈকত সর্বত্রই প্লাস্টিকের উপস্থিতি৷ পুরীর সমুদ্র সৈতকে পর্যটকদের দৌলতে প্রতিদিন কয়েকশো কেজি প্লাস্টিকের বোতল জমা হয়৷ স্থান বদলে কিন্তু পরিস্থিতির বগল হয় না৷ আফ্রিকার নামিব মরুভূমির কেপ ক্রসে সামুদ্রিক সিলের ডেরার ঢুকেও স্বেচ্ছাসেবীরা খুঁজে বার করেন মাছ ধরার জাল কিংবা প্লাস্টিক জড়িয়ে পড়া সিলদের৷  

নামিবিয়া থেকে প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ এশিয়ার মেরিন বায়োলজিস্টরা ইন্দোনেশিয়ায়া গবেষা করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে,  জাভা হোয়েল শার্ক প্রজাতির হাঙররা এক ঘণ্টায় যত খাবার সংগ্রহ করে তার মধ্যে ১৩৭ রকমের প্লাস্টিক রয়েছে৷ হাঙরের পেটেও মিসেছে প্লাস্টিকের উপস্থিতি৷ গিলে ফেললেও সেগুলি হজম করতে না পারায় তা পাকস্থলি এবং অন্ত্রে জমা হতে থাকে৷ শুধুমাত্র এই প্লাস্টিকের কারণে ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রশান্ত মহাসাগরে ১০ কোটি হাঙরের মৃত্যু হয়েছে৷ 

প্লাস্টিক দূষণের গ্রাস থেকে রেহাই পায়নি পৃথিবীর বৃহত্তম প্রজাতির প্রাণী তিমিও৷ দেখা গিয়েছে, ব্লু-হোয়েল প্রজাতির তিমি দিনে যতটা পরিমাণে খাবর খায় তার মধ্যে গড়ে ৫০ কেজি মাইক্রোপ্লাস্টিক৷ হ্যাম্পব্যাক প্রজাতির তিমির খাবারে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ প্রায় ৩০ কেজি৷ 

ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক যে কতটা বিপজ্জনক, সে কথা বলতে গেলে ডজন খানেক সেমিনারও বোধ হয় কম পড়বে৷ তেমনটাই মনে মনে করেন পরিবেশবিদরা৷ তবে পরিবেশবিদরা জানাচ্ছেন, প্লাস্টিকের বড় টুকরোগুলি সহজেই আমাদের চোখে পড়ে৷ কিন্তু প্লাস্টিক ভাঙতে ভাঙতে ক্রমশ ছোট হয়ে মাইক্রেপ্লাস্টিকে পরিণত হলে তার বিপদ বহুগুণ বেড়ে যায়৷ এপ্রসঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক পুনর্বসু চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিদিন সমুদ্রের জলে বিপুল পরিমাণে সমুদ্রের প্লাস্টিক মিশছে৷ জলে ভেসে থাকা সেই সব প্লাস্টিককে জেলি ফিশ ভেবে খেয়ে মৃত্যু হচ্ছে সামুদ্রিক কচ্ছপের৷ হাঙর, কুমির, তিমির শরীররেও প্লাস্টিকের উপস্থিতি মিলেছে৷’’ এই ছবি আগামী দিনের জন্য সত্যই ভয়ঙ্কর৷  সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে এখন বছরে গড়ে ৮০ লক্ষ টন প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হয় সমুদ্রের জলে৷ বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ২০৬০ সালের মধ্যে সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণ এখনকার তুলনায় তিনগুণ হবে৷ তাহলেই বুঝুন কতটা সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে আমরা৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − nine =