কলকাতা: খুব ছোট বয়সে বাবাকে হারিয়েছেন তিনি৷ বাবার মুখ তাঁর চোখে ঝাপসা৷ কিন্তু বাবার বীরত্ব, যে তাঁকে বারেবারে অনুপ্রাণিত করে৷ এক দেশপ্রেমিকের রক্ত যে তাঁর শরীরেও বইছে৷ বাবাই তাঁর জীবনের ‘রোল মডেল’৷
আরও পড়ুন- দেশে এই প্রথম, বাবা-মা হচ্ছেন রূপান্তরকামী জাহাদ-জিয়া! কী ভাবে সন্তানধারণ করল এই জুটি?
হরিয়ানার পাঁচকুলার বাসিন্দা ইনায়েত ভাটসের বাবা ছিলেন ভারতীয় সেনার মেজর। সন্ত্রাসবাদী হামলায় মৃত্যু হয় তাঁর। তখন ইনিয়েতের বয়স মাত্র আড়াই বছর৷ বাবার কথা ভালোভাবে মনেও নেই তাঁর৷ তবে প্রয়াত বাবাকে আদর্শ মেনে চলা এই কন্যা, সুখের চাকরির প্রস্তাব উপেক্ষা করে সেই সেনাবাহিনীতেই যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
ইনায়েত ভাটসের বয়স এখন ২৩। ২০০৩ সালে কাশ্মীরে এক জঙ্গিদমন অভিযানে গিয়ে শহিদ হন ইনায়েতের বাবা নবনীত ভাটস৷ জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় তাঁর শরীর৷ কাশ্মীরের একটি আবাসনে গা ঢাকা দিয়েছিল ওই জঙ্গিরা। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ওই আবাসনটিকে ঘিরে ফেলে সেনা বাহিনী৷ আবাসনটি জঙ্গিমুক্ত করতে শুরু হয় অভিযান৷ যে অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন ইনায়েতের বাবা নবনীত।
ওই আবাসনটিকে জঙ্গিমুক্ত করা গিয়েছিল ঠিকই৷ কিন্তু, নবনীত আর ফেরেননি। বাবার স্মৃতি মনে করতে পারেন না ইনায়েত। তবে ছোট থেকেই তিনি শুনে এসেছেন বাবার বীরত্বের কথা৷ সাহসিকতার কথা। নবনীতের বীরত্ব এবং সাহসকে স্বীকৃতি দিয়ে তাঁকে মরণোত্তর সম্মান জানিয়েছে সরকার।
ইনায়েত দিল্লির লেডি শ্রীরাম কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক পাশ করার পর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ হিন্দু কলেজ থেকে ওই বিষয়েই স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনা করছেন৷ ছোট থেকেই মেধাবী তিনি। প্রয়াত জেনারেলের কন্যাকে লোভনীয় চাকরির প্রস্তাব দিয়েছে হরিয়ানা সরকার।
রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনা শেষ করার পর রাজ্যের সচিব পর্যায়ের উচ্চপদস্থ আধিকারিক হিসাবে কাজে যোগ দিতে পারেন ইনায়েত। কিন্তু সেই চাকরি করতে রাজি নন ইনায়েত। কারণ তাঁর স্বপ্ন সেনা উর্দি৷
ছোট থেকেই ইনায়েতের ইচ্ছা, তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেবেন৷ তাঁর লক্ষ্য বাবার মতো হওয়া। অবশেষে তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। আগামী এপ্রিল মাসে চেন্নাইয়ে সেনাবাহিনীর অফিসার্স ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতে যোগ দিতে চলেছেন নবনীত-কন্যা। সেখানেই আপাতত কয়েক মাসের প্রশিক্ষণ৷ তার পরেই বাবার মতো এক বুক সাহস নিয়ে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়বেন আপৎকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলায়৷
ইনায়েতের এই সিদ্ধান্তে অবশ্য প্রথমে রাজি ছিলেন না তাঁর মা। তিনি চেয়েছিলেন, মেয়ে তাঁর কাছ থাকুক৷ হরিয়ানা সরকারের দেওয়া চাকরি গ্রহণ করে নিশ্চিত জীবন বেছে নিক৷ কিন্তু সেই ‘সুখ’ বেছে নেননি ইনায়ত৷
মেজর নবনীত যখন মারা যান, তখন তাঁর স্ত্রী শিবামীর বয়স মাত্র ২৭। বিয়ের চার বছরের মধ্যেই স্বামীকে হারান তিনি৷ সেই সময় তাঁর কোলে আড়াই বছরের ইনিয়ত৷ স্বামীকে হারানোর পর খুব কষ্ট করেই একমাত্র সন্তান ইনায়েতকে বড় করে তোলেন শিবানী। তবে তাঁর কঠিন দিনগুলোয় তাঁদের পাশে ছিল ভারতীয় সেনা। শিবানী এখন সেনা পরিচালিত একটি বিদ্যালয়েই শিক্ষকতা করেন। জীবনে যতই ওঠাপড়া আসুক না কেন, তাঁদের জীবনে সেনাবাহিনীর ভূমিকার কথা বার বার স্মরণ করেন শিবানী৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>