পুরীর ছয় রথ! জানেন নেপথ্য কাহিনি?

পুরীর ছয় রথ! জানেন নেপথ্য কাহিনি?

ভুবনেশ্বর: রাত পোহালেই রথের উৎসব৷ সৈকত শহর পুরীতে এখন সাজোসাজো রব৷ চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি৷ রথে চড়ে মাসির বাড়ি যাবেন প্রভু জগন্নাথ, বোন শুভদ্রা এবং দাদা বলরাম৷ রথের রশিতে টান দিয়ে পুণ্যার্জনের আশায় মন্দির শহরে ভিড় জমাবেন লাখো পুণ্যার্থী৷ কিন্তু এই রথ নিয়েও রয়েছে এক কাহিনী৷ যা হয়তো অনেকেরই অজানা৷ 

ওড়িশার জগন্নাথদেবের মন্দির জগৎবিখ্যাত। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে এই মন্দিরের মাহাত্ম্য প্রসারিত গোটা বিশ্বে৷ জগন্নাথদেবের মন্দিরের দৌলতেই বিশ্ব মানচিত্রে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে ভুবনেশ্বর৷ হিন্দু বিশ্বাসে, পুরীর মন্দিরের আরাধ্য দেবতা প্রভু জগন্নাথ আদতে বিষ্ণুর অবতার শ্রীকৃষ্ণের রূপ। জগন্নাথের অর্থ জগতের নাথ বা প্রভু। প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। সোজা রথের দিন মন্দির থেকে বেরিয়ে জগন্নাথ, বলরাম ও শুভদ্রা যাত্রা করেন মাসির বাড়ির উদ্দেশে৷ উল্টোরথের দিন মাসির বাড়ির থেকে মূলমন্দিরে ফিরেন তিন দেবতা৷ 
 

কেন রথযাত্রার আয়োজন করা হয়? 

কথিত আছে, ভগবান জগন্নাথের বোন সুভদ্রা দ্বারকা দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন৷ বোনের সেই ইচ্ছা পূরণের জন্য তাঁকে রথে  নিয়ে পরিক্রমা করেন ভগবান জগন্নাথ৷ তারপর থেকেই রথযাত্রা শুরু৷ রথের দিন ভগবান জগন্নাথ, বড় ভাই বলরাম ও ছোট বোন সুভদ্রার সঙ্গে মাসির বাড়ি অর্থাৎ গুণ্ডিচা মন্দিরে যান। তিনটি ভিন্ন রথে তিনটি বিগ্রহ সাজিয়ে যাত্রা শুরু হয়। রথে চেপে মাসির বাড়ি পৌঁছন তাঁরা। তবে আজ যে ভাবে তাঁদের যাত্রা হয়, অতীতে তেমনটা হত না৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গিয়েছে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মাসির বাড়ি যাওয়ার পদ্ধতি।

পুরীতে রথযাত্রা বহু প্রাচীন। আজ থেকে সাতশো বছর আগে জগন্নাথ মন্দির থেকে মাসির বাড়ি গুণ্ডিচা মন্দিরে যাওয়ার পথে সেখানে পড়ত গুণ্ডি নালা। সেই কারণে একই সঙ্গে একই রথে করে তিনটি বিগ্রহ নিয়ে যাওয়া সম্ভব হত না। আার তাঁরা একটানাও সেই সময় দু’টি ভাগে বিভক্ত ছিল রথযাত্রা। প্রথমে তিনটি রথে করে শোভাযাত্রা করে ত্রিমূর্তি নিয়ে যাওয়া হতো গুণ্ডি নালা পর্যন্ত। এরপর বিগ্রহ নামিয়ে নালা পার করে অন্য তিনটি রথে চড়ে মাসির বাড়ি যেতেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। এরপর রাজা কেশরী নরসিংহের আমলে এই নালা বন্ধ হওয়ার পর ছ’টি রথের প্রয়োজন ফুরোয়। তিনটি রথেই সম্পন্ন হয় পুরীর রথযাত্রা।  

বলা হয়, রথযাত্রায় অংশ নিয়ে যে রথ টানে সে একশত যজ্ঞ করার সমান পুণ্য লাভ করে বলে৷  ভগবান জগন্নাথের রথের পাশাপাশি তার বোন সুভদ্রা এবং বড় ভাই বলরামের রথও রথযাত্রায় অংশগ্রহণ করে। অক্ষয় তৃতীয়া থেকেই তাদের রথ তৈরি করা শুরু হয়।