জলপাইগুড়ি: জলপাইগুড়ির মালবাজার শহর ও চা বাগান এলাকা মিলিয়ে একাধিক পুজোর বিসর্জন৷ সব মিলিয়ে সেদিন প্রায় ছয় থেকে আট হাজার মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন মাল নদীর বিসর্জন ঘাটে৷ আচমকাই রাক্ষুসে হড়পা বান হামলা চালায় নদীবক্ষে থাকা মানুষগুলোর উপর৷ স্রোতের টানে ভাসতে শুরু করেন তাঁরা৷ এই পরিস্থিতিতে দেবদূতের মতো হাজির হন তেশিমলা গ্রামের যুবক মহম্মদ মানিক!
আরও পড়ুন- অর্থ কমছেই না! ব্যবসায়ী আমিরের আরও ২০ কোটি টাকা উদ্ধার
হড়পা বান এসে যখন সকলকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, প্রাণ বাঁচাতে নদী থেকে চরে ওঠার হুড়োহুড়ো, তখন নিজের প্রাণের পরোয়া না করে অন্যদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেন মানিক। তাঁর তৎপরতায় প্রাণে রক্ষা পান ১০ জন। ১৫ ফুট উঁচু থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ১০ জনের প্রাণ বাঁচান তিনি। দশমীর রাতে মালবাজারে নেমে আসা ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে যে ভাবে ত্রাতা হয়ে ওঠেন মানিক তার পর এখন গ্রামের ‘হিরো’ তিনিই৷
হড়পা বানের মুখে দাঁড়িয়ে এভাবে উদ্ধারকাজ চালাতে গিয়ে আহত হন মহম্মদ মানিকও৷ তাঁর পায়ে চোট লেগেছে। রাতেই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মালবাজার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে৷ সেখানে অবশ্য প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানিক যেভাবে এতগুলো মানুষের প্রাণ বাঁচালেন, তাতে কুর্নিশ জানিয়েছেন নেটিজেনরা। তাঁর এই সাহসিকতার কাহিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল৷ বলা যায়, তেশিমলা গ্রামের যুবক এখন হিরো।
মানিক বলেন, “বন্ধুর সঙ্গে মাল নদীর ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন দেখতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ করে দেখি নদীর জল বেড়ে যাচ্ছে। জলের প্রবল স্রোতে ভেসে যাচ্ছিল একের পর এক মানুষ। চারিদিকে চিৎকার৷ বাঁচার জন্য আর্তনাদ৷ সেই সময় আমি আর কোনও কিছু চিন্তা কিরিনি৷ জীবনের ঝুঁকি নিয়েই নদীতে ঝাঁপ দিই। এক এক করে ভেসে যাওয়া মানুষকে উদ্ধার করতে শুরু করি। আমি সাঁতার জানি। তাই মৃত্যুর ভয় ছিল না৷ বেশি করে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করেছি। আমার নিজেরও চোট লেগেছে। তবে এতগুলো মানুষকে বাঁচাতে পেরে আমি খুশি।”
এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখি মানিক ওঁর মোবাইল আর ঘড়ি আমার হাতে দিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিল। আমি সাঁতার জানি না৷ তাই নদীর পাড়েই দাঁড়িয়েছিলাম। দেখি নদীতে ভেসে যাওয়া মানুষগুলোকে টেনে উদ্ধার করছে মানিক। আমাদের গ্রামের হিরো এখন ওই।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>